মিয়ানমারকেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী


অনলাইন ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, "যেহেতু রোহিঙ্গা সমস্যার উদ্ভব হয়েছে মিয়ানমারে। তাই এর সমাধানও হতে হবে মিয়ানমারে।" 

জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের যে চুক্তি হয়েছে তার দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।” 

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি, রোহিঙ্গা সংকট, সন্ত্রাস দমন, বিশ্বশান্তি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানান বিষয় তুলে ধরেন।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের এখনো শান্তিপূর্ণ সমাধান না হওয়ায় মিয়ানমার সরকারকেই দুষলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, "আমরা আশাহত হয়েছি, কেননা আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি।"

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "মিয়ানমার মৌখিকভাবে সব সময় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তারা কোনো কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না।"

তিনি আরও বলেন "একজন মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশাকে আমরা যেমন অগ্রাহ্য করতে পারি না, তেমনি পারি না নিশ্চুপ থাকতে।" 

সাধ্যমত তাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, শিশুদের যত্নের ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গারা যতদিন তাদের দেশে ফেরত যেতে না পারছে, ততদিন তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রেখে নতুন আবাসন নির্মাণের কাজ চলছে। এ জন্য আরও বেশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইলেন তিনি।

গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সভায় এই সমস্যার সমাধানে পাঁচ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই কাজে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তাতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের যে বিবরণ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তাতে আমরা হতভম্ব। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার ও অবিচারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে।"

এ ছাড়াও সন্ত্রাস দমনে তাঁর সরকারের নেওয়া ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, "বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থবিরোধী কোনো কার্যক্রম বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা পরিচালিত হতে দেব না।"

ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "ভ্রাতৃপ্রতীম ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন আজও অব্যাহত রয়েছে, যা আমাদের মর্মাহত করে।"

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিরক্ষীরা পেশাদারিত্ব, সাহস ও সাফল্যের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। বাংলাদেশ গত ৩০ বছরে ৫৪টি শান্তি মিশনে এক লাখ আটান্ন হাজার ৬১০ জন শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বিশেষ অবদান রেখেছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশের ১৪৫ জন শান্তিরক্ষী জীবন দিয়েছেন।

স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের জনগণের। মাত্র সাড়ে তিন বছর তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে।" একই সঙ্গে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হবার কথাও তুলে ধরেন তিনি। 

বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, "গত সাড়ে নয় বছরে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। যে বাংলাদেশকে বলা হতো দুর্যোগ, বন্যা-খরা-হাড্ডিসার মানুষের দেশ, তা এখন বিশ্বশান্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেছে।"

উন্নয়নের এই পথ ধরে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের যাত্রা এবং বিশ্বে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে প্রসংশিত হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, "আমাদের পথচলা এখনও শেষ হয়নি।"

নারীর ক্ষমতায়নের কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশের সংসদই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র সংসদ যেখানে সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা, স্পিকার এবং বিরোধী দলীয় নেতা নারী। বর্তমান সংসদে ৭২ জন নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন। তৃণমূল পর্যায়ে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে ৩৩ শতাংশ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।"

ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এই ধারণার মূল দর্শন হলো জনগণের কল্যাণ। ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার ব্যাপক প্রচলনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট “বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১” মহাকাশে উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে আমরা মহাকাশ প্রযুক্তির জগতে প্রবেশ করেছি। বস্তুত এটি ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন। ১৯৭৫ সালের ১৪ই জুন প্রথমবারের মত বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ভূকেন্দ্র স্থাপন করার মাধ্যমে তিনি যে স্বপ্নের বীজ বপন করেছিলেন”। 

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যে বাংলাদেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নে অঙ্গীকার বদ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে আমরা আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের এক শতাংশ ব্যয় করছি এবং জলবায়ু সহায়ক কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন করছি।”

Post a Comment

Previous Post Next Post