বড়লেখা পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতায় বছরে ক্ষয়ক্ষতি ৫ কোটি টাকা

বড়লেখা পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতায় বছরে ক্ষয়ক্ষতি ৫ কোটি টাকা
বিশেষ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌর এলাকায় ষাটমাছড়া, নিখড়ি ছড়াসহ বিভিন্ন খাল-নালা, ছড়া ভরাট ও জবরদখল হওয়ায় পানি নিষ্কাষণের পথ বন্ধ হয়ে প্রতিবছর মারাত্মক জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের জবর দখল আর পৌর কর্তৃপক্ষের অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার খেসারত দিচ্ছেন এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা। গত এক বছরে পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতায় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৫ কোটি টাকার উপরে।

বার বার জলাবদ্ধতায় দোকানে পানি ওঠে ক্ষতির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা পৌর কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন। এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সম্প্রতি বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলেও এ ব্যাপারে স্থায়ী কোন সমাধান নেয়া হচ্ছে না।

সরেজমিনে ঘুরে, পৌরশহরের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত ষাটমাছড়া, দক্ষিণ দিকের নিখড়ি ছাড়া, শহরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া দক্ষিণবাজার এলাকার লংলি ছড়া, বরইতলি (পানিদার) এলাকার খলিলুর রহমানের বাসার সম্মুখ, বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ এলাকার (গ্রামতলা পৌরসভা অংশের) লতা ও বৃক্ষবন্ধু নার্সারির পূর্বপাশে ভিটা মালিকদের দখল ও ভরাটের ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ সংকীর্ণ হয়ে পড়ার চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া ২নং ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকা দিয়ে শহরের পানি নিষ্কাশনের দীর্ঘ দিনের একমাত্র পথটি ব্যবসায়ী হাজী মতিন মিয়া পাকা দেয়াল নির্মাণ করায় অল্প বৃষ্টি হলেই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অভিযোগ রয়েছে তিনি দেয়াল নির্মাণে পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেননি। শহরের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমগুলো ভরাট আর জবর দখলের কারণে বিভিন্ন স্থান সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এ কারণে দ্রুত পানি নামতে না পারায় মারাত্মক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।

নিখড়ি ছাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জব্বার আহমদ, মাখন দেবনাথসহ অনেকেই সংকীর্ণ হওয়া ছড়ার পাশ দখল করে চাষাবাদ করছেন। আব্দুল জব্বার নামের ওই ব্যক্তি নিখড়ি ছাড়ার ব্রিজের পশ্চিম পাশে পাকা একটি ঘাটও নির্মাণ করেছেন। বরইতলির (পানিদার) খলিলুর রহমানের বাসার সম্মুখের ছড়াটির পাশে তিনি ভরাট করায় পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যার ফলে অল্প বৃষ্টিতে এই এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কুলাউড়া-চান্দগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক ডুবে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে।

মাখন দেবনাথ, শ্যামল কর বলেন, ‘৫-৬ বছর আগে সদর ইউনিয়নের ইয়াছিন মেম্বার নিখড়ি ছড়া খনন করান। ম্যাপ দেখে খনন করার জন্য বললেও তিনি তা করেনি। অপরিকল্পিতভাবে খনন করায় আর অনেকে ভূমি দখলে রাখায় আমরা কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। অনেকে ছড়ার পাশ দখল করে বিভিন্ন গাছ ও বাশ বাগান করেছেন।’

একই এলাকার ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান বলেন, ‘নদীর পারে জায়গা কতটুকু আর মানুষের দখলে কতটুকু এগুলা যদি প্রশাসন দেখতেন তাইলে বারবার বন্যায় আমরা ক্ষতির শিকার হতাম না। এটা দেখার যেন কেউ নাই। এরজন্যই যে যে রকম পারের, সে সেই রকম দখল করের।’

বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ এলাকার (গ্রামতলা পৌরসভা অংশের) সিরাজ মিয়া, আব্দুল হানান্ন, আয়াতুন বেগম, বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে আমরা বার বার ক্ষতির শিকার হচ্ছি। এখানে দুটি নার্সারি রয়েছে। নার্সারির ভিতর দিয়ে যে ড্রেন নিমাইর ব্রিজ পর্যন্ত গেছে তা অত্যন্ত ছোট। দেড় ফুট কি দুই ফুট হবে। এই ড্রেন দিয়ে কয়েক গ্রামের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় রাস্তাঘাট ও বাড়ি ঘর ডুবে যায়। এছাড়া নার্সারির পূর্বপাশের পানি নিষ্কাশনের পথে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা।’

পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সরফ উদ্দিন, রিপন আহমদ, আব্দুল আজিজ, আহাদা খাতুন, হাবিবা খাতুনের অভিযোগ, ‘আদিত্যের মহাল এলাকা দিয়ে শহরের পানি নিষ্কাশনের দীর্ঘ দিনের একমাত্র পথটি ব্যবসায়ী হাজী মতিন মিয়া ভরাট করে পাকা দেয়াল নির্মাণ করায় শহরের পানি দ্রুত নামতে পারে না।’

সম্প্রতি শহরে জলাবন্ধতায় হাজী আলাউদ্দিন মার্কেটের ২৮০ টি, রেলওয়ে মাকের্টের ৬০টি, এজেন্সি মার্কেটের ২০, উত্তর চৌমোহনীর প্রবোদিনী মার্কেটের ৬টিসহ কলেজ রোড, দত্ত ম্যানশনের সহস্রাধিক দোকানে বৃষ্টির পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

হাজী আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমার মালিকানাধীন জায়গা ভরাট ও দেয়াল করতে পৌরকর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছি। অনুমতি ছাড়া আমি পাকা দেয়াল ও মাটি ভরাট করিনি। পৌর কর্তৃপক্ষ আমাকে অনুরোধ করায় পানি নিষ্কাষণের জন্য আমি প্রায় ১৫ ফুট জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। এই এলাকায় অনেক ব্যবসায়ী ও বাসিন্দা পাকা ঘর নির্মাণ করে পানি যাবার পথ বন্ধ করেছেন বলে তিনি উল্টো অভিযোগ করেন।’

বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, ‘পৌরশহরের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত ষাটমাছড়া ও দক্ষিণ দিকের নিখড়ি ভরাট ও সিএন্ডবি এলাকার কিছু কিছু স্থান দখল হওয়ায় এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র মাটি ভরাটের কারণে পানি নিষ্কাষণে ব্যাঘাত ঘটছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ষাটমাছাড়া খননের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।’

Post a Comment

Previous Post Next Post