জেগে ওঠা বোধে ভ্রমণ-নেশা

জেগে ওঠা বোধে ভ্রমণ-নেশা
একেএম জাবের, সেন্ট মার্টিন থেকে ফিরেঃ ভ্রমণ পিপাসু মন মানুষের চিয়ায়ত, মানব জীবনের সহজাত মোড়কে আবৃত। জানার আগ্রহে অজানার এই মনটি তাই নিরন্তর ছুটে চলে। রহস্য ভেদ করে, রহস্যের গভীরে ঢুকে। সেই ভ্রমণ পিপাসু মন নিয়ে আমিও ছুটি এদিক-সেদিক। অজানাকে জানার কৌতূহলে...।

জেগে ওঠা বোধে ভ্রমণ-নেশা
ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য পাহাড়-সমুদ্রের চেয়ে ভাল স্থান আর আছে বলে আমার জানা নেই। সমুদ্রে গেলে মানুষের মন উদাস হয়ে যায় তা সবারই জানা। যে জীবনে কোনদিন গান গায় নি তারও সমুদ্রে গেলে গলা ছেড়ে গান গাইতে ইচ্ছে করে। এবারের ট্যুর টা আমার জন্য একটু ভিন্ন রকম ছিল। এই ট্যুরে মোট সাতজন গিয়েছিলাম তাদের মধ্যে আমরা পাঁচ কলিগ (আকরম, হাবিব, মোজাহিদ, মাহবুব ও আমি) ও আরো দুই জন (মামুন ও ইমন)। সাথে যাওয়ার কথা থাকলেও অনাকাঙ্ক্ষিত মটর বাইক এক্সিডেন্টে জামিল ও নজরুল এবং পারিবারিক সমস্যা থাকায় দেলোয়ার ও রাজন যেতে পারেনি।

৬ অক্টোবর রাত ৯ টা ২০মিনিটের উদয়ন ট্রেন, সিলেট থেকে চট্টগ্রাম। নির্ধারিত সময় থেকে ১০/১৫ মি. পরে ট্রেনটি ছাড়লো সিলেট থেকে। আমি ছাড়া বাকী সবাই ট্রেনে। সেই ট্রেন কুলাউড়া এলো প্রায় ১০.৫০ মিনিটে। আমি ট্রেনে উঠে সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলাম। তখন জানলাম যে আমাদের সাথের বাকী চারজন যাচ্ছে না।

আমরা চট্টগ্রাম পৌঁছলাম সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। স্টেশন থেকে ৫ মিনিট হাটলেই নিউমার্কেট। সেখানে সকালের নাস্তা শেষ করে টেম্পুতে বাস টার্মিনাল গেলাম। এখানেই কক্সবাজারের বাস পাওয়া যায়। প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা বাসে করে কক্সবাজার পৌঁছলাম। এখান থেকে সিএনজিতে কলাতলি থেকে একটু সামনে গিয়ে থাকার জায়গা খোঁজা শুরু করলাম। এখানে বিভিন্ন কোয়ালিটির হোটেল আছে। সিএনজির ড্রাইভাররা অনেক কটেজ-রুম দেখালো কিন্তু আমাদের পছন্দ হয়নি (ড্রাইভাররা হোটেল-মোটেলের ব্রোকার হিসেবে কাজ করে)। শেষে পরিচিত একজনের রেফারেন্সে হায়পেরিয়ন বে কুইন হোটেল এন্ড রিসোর্টে একটি ফ্ল্যাট নিলাম। তিনটি এসি রুম দুইটি বাথরুম সহ ভাড়া ১৪০০ টাকা (পর্যটক কম থাকায় ভাড়া কম পড়েছে)।  হোটেলে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম সমুদ্রে।  অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম।

জেগে ওঠা বোধে ভ্রমণ-নেশা
সেন্টমার্টিন যাত্রা কক্সবাজার থেকে প্যাকেজের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন নেয়া হয়। ওখানে এমন অনেক এজেন্ট  আছে। আপনি আপনার হোটেল ম্যানেজারের সাথে কথা বলে পছন্দসই একটি প্যাকেজ ঠিক করে নিতে পারেন। আমরা যে প্যাকেজটি নিলাম সেটি হলো কক্সবাজার থেকে বাসে করে টেকনাফ। সেখান থেকে জাহাজ কেয়ারি সিন্দবাদে সেন্টমার্টিন (আপ-ডাউন)। সাথে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও বিকেলে স্ন্যাক্স। জনপ্রতি  চাইলো ১৪০০ টাকা আর একরাত্র থাকতে হলে খাবার সহ আরো ১ হাজার টাকা,  দামদর করে জনপ্রতি ১১৫০ টাকায় এই প্যাকেজটি নিলাম। সকাল ৭টায় বাসে করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো টেকনাফ ঘাটে। জাহাজ ছাড়লো সোয়া ৯টায়।

জেগে ওঠা বোধে ভ্রমণ-নেশা
আমরা সবাই অনেক আনন্দে জাহাজে উঠলাম, আমাদের প্রথম জার্নি। জাহাজে যাওয়াটা অনেক উপভোগ্য। ওপরে সিট পেলে ভালো। নিচে পেলেও অসুবিধা নেই। নিচে বসে বসে আশপাশের দৃশ্য দেখে তেমন সুবিধা হবে না। মানুষ বেশিরভাগ সময় বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকে । প্রথমে নাফ নদী। তার পর সমুদ্র। একপাশে বাংলাদেশ, একপাশে মায়ানমার। গাংচিলের উড়ে চলা। সে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। বেলা ১২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে চলে গেলাম দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে।  সমুদ্রের এই অপার সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। পানিগুলো মনে হবে নীল দেয়া। আর ঢেউয়ের শো শো শব্দ আপনার মনকে নাচিয়ে তুলবেই। সেখানের হোটেলগুলোতে পাবেন বাহারি সব মাছ। দুপুরের খাওয়া শেষ করে ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম। সেন্টমার্টিনে অসংখ্য হোটেল, কটেজ আছে। ভাডা সিজনে ৩ গুণ।

সেন্টমার্টিনের আরেক নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। ওখানে প্রচুর নারিকেল গাছ রয়েছে। অথচ একটি ডাবের দাম ৩০-৩৫ টাকা।

জেগে ওঠা বোধে ভ্রমণ-নেশা
সেখানকার পানিগুলে এতই স্বচ্ছ যে ৫ ফুট নিচের মাছ-প্রবাল গুলোকে আপনি স্পষ্ট দেখতে পাবেন। সেন্টমার্টিন যাওয়ার সময় অবশ্যই স্যাভলন, রাবারের স্যান্ডেল নিয়ে যাবেন। কারণ প্রবালে আপনার পা এতো মসৃনভাবে কাটবে যে আপনি টেরই পাবেন না। শর্টপ্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জিতো অবশ্যই। আর ভাটার সময় কখনই সমুদ্রে নামবেন না। নামলেও খুব কাছাকাছি থাকবেন। সেন্টমার্টিনে আপনি সবচেয়ে ভাল জলবায়ু এবং আবহাওয়া পাবেন নভেম্বর ও ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে। এটিই এখানকার প্রধান পর্যটন ঋতু। মার্চ ও জুলাই মাসের পর্যটকদের অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রতি সর্বদা খেয়াল রাখতে  হবে। আমরা চলে আসার দুই দিন পরে আবহাওয়া খারাপ থাকায় প্রায় তিন শতাধিক পর্যটক ওখানে আটকা পড়েন।

এ দ্বীপের সাথে জড়িয়ে দ্বীপের একটি সংযোযিত অংশ রয়েছে যার নাম ছেঁড়াদ্বিপ। ছেঁড়াদ্বিপে কোন লোকজন বসবাস করে না। তাই ভ্রমনকারীদের খুব সকালে এখানে যাএা করতে হয় যাতে করে সন্ধ্যা হবার পূর্বেই তারা হোটেলে ফিরে আসতে পারে।
জেগে ওঠা বোধে ভ্রমণ-নেশা

Post a Comment

Previous Post Next Post