অনলাইন ডেস্কঃ
যুবরাজকে ৯ কোটি টাকায়ও বিক্রি করছেন না তার মালিক। হ্যাঁ, যুবরাজ কোন
রাজার ছেলে নয়। একটি ষাড়ের নাম ‘যুবরাজ’। ভারতের হরিয়ানার বংশোদ্ভূত
‘মুররাহ’ জাতের এই ‘যুবরাজকে’ দেখতেই বড় ভিড় জমে এর চারপাশে। এর ওজন এক
হাজার চারশ কেজি। লম্বায় সে ১৪ ফুট আর উচ্চতা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। ‘যুবরাজ’
মিরাটস অল ইন্ডিয়া ক্যাটেল শো প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দশজন পশু
বিশেষজ্ঞের মনোনয়ন পেয়ে ‘যুবরাজ’ এবারের চ্যাম্পিয়ন হয়। ফলে স্বভাবতই খুশী
‘যুবরাজ’ এর মালিক কারামভির সিং।
কিন্তু
কারামভির সিং যখন জানালেন, ‘যুবরাজ’কে চন্ডিগড়ের এক কৃষক প্রায় ৯ কোটি
টাকা (৭ কোটি রুপি) দিয়ে কিনে নিতে চেয়েছিলেন। তিনি সেই প্রস্তাব স্রেফ
নাকচ করে দিয়েছেন। তখন তো উপস্থিত জনতার চক্ষু চড়কগাছ!
একটি
গরুর দাম নয় কোটি টাকা পাওয়ার পরও মালিক বিক্রি করেননি? কেন? আর চন্ডিগড়ের
ওই কৃষক-ই বা এত টাকা দিয়ে কেন ‘যুবরাজকে’ কিনতে চেয়েছিলেন?
‘যুবরাজের’
মালিক কারামভির সিং জবাব, ‘সন্তানতুল্য’ এই গরুটি দিয়ে বছরে তার প্রায় ৫০
লাখ টাকা আয় হয়। আর সবকিছুই কি জীবনে টাকা দিয়ে মাপা যায়?
কীভাবে
সম্ভব? ‘যুবরাজ’ তো গাভী না যে দুধ দেবে বা বাচ্চা দেবে। সেই দুধ বা
বাচ্চা বিক্রি করে কারামভির সিং কাড়িকাড়ি টাকা কামাবেন। ‘যুবরাজ’ তো ষাঁড়।
তার পক্ষে কীভাবে এত টাকা কামানো সম্ভব?
জনতা
অবাক হলেও কারামভির সিংয়ের কথায় কিন্তু মোটেই অবাক হননি সরদার বল্লভ ভাই
প্যাটেল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক রবীন্দ্রর সাংয়ন।
রবীন্দ্রর
ভাষ্যে, ‘মুররাহ’ জাতের প্রকৃত আদর্শ হচ্ছে এই ‘যুবরাজ’। সে প্রতিদিন সাড়ে
তিন থেকে পাঁচ মিলিলিটার পর্যন্ত সিমেন (বীর্য) উৎপাদন করতে পারে। যা দিয়ে
সর্বোচ্চ ৩৫ মিলিলিটার পর্যন্ত সিমেন প্রস্তুত করা যায়। এটি মূলত
‘মুররাহ’ জাতের গরু তৈরির জন্য কৃত্রিমভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
‘বর্তমান
বাজারে একডোজ অর্থাৎ শুন্য দশমিক ২৫ মিলিলিটার সিমেনের দাম দেড় হাজার
টাকা। সেই হিসাবে ‘যুবরাজের’ প্রতিদিনের উৎপাদন ক্ষমতার বাজার মূল্য ২ লাখ
১০ হাজার রুপি। এছাড়া ‘যুবরাজের’ মা-ও প্রতিদিন ২৫ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়।’
বৈজ্ঞানিক
রবীন্দ্রর বলেন, ফলে ‘যুবরাজের’ মালিক যে দামের কথা বলেছেন, তাতে আমি
মোটেই অবাক হইনি। কারণ, ‘যুবরাজের’ সিমেনের একচেটিয়া বাজার আছে ভারতের
দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে।’
‘মুররাহ’
বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত জাতগুলোর একটি। এটি মূলত হরিয়ানা রাজ্যের রোথক ও
জিন্দ জেলার প্রাণী। তবে উত্তর প্রদেশের পশ্চিমেও এর দেখা মেলে।
‘যুবরাজকে’
কেন এবার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হল? এর জবাবে মিরাট প্রাণিসম্পদ
বিভাগের প্রধান রাজবীর সিং, যিনি এই প্রতিযোগিতার একজন বিচারকও, তিনি বলেন,
গরুর মোট ৩০টি বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে এই প্রতিযোগিতায় নম্বর দেওয়া
হয়। তারমধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে- অঙ্গসংস্থানগত বৈশিষ্ট্য, সিমেনের
উর্বরতা, বংশানুক্রমিক ইতিহাস, এমনকি প্রতিযোগির মায়ের দুধের উৎপাদন
ক্ষমতাও এখানে বিবেচ্য।
প্রতিযোগিতায়
থারপারকার, ব্রাউন সুইস, গির, জার্সি প্রভৃতি প্রজাতির গরু এসেছিলো।
সবাইকে টপকেই এবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলে নিয়েছে ‘মুররাহ
যুবরাজ’।
‘যুবরাজের’ খাবারের তালিকায় আছে- প্রতিদিন ২০ লিটার দুধ, পাঁচ কেজি আপেল ও ১৫ কেজি খুবই উন্নতমানের পশুখাদ্য।
