মফস্বল থেকে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম হয়ে চমক দেখানো লংলা কলেজের এগিয়ে চলা...

মফস্বল থেকে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম হয়ে চমক দেখানো লংলা কলেজের এগিয়ে চলা...
সৈয়দ আশফাক তানভীর: সদ্য ঘোষিত এইচ.এস.সি পরীক্ষার ফলাফলে উপজেলার মধ্যে সর্বাধিক জিপিএ-৫সহ প্রথম স্থান অর্জন করে মফস্বলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ চমক সৃষ্টি করেছে। ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে দক্ষিন লংলার শিক্ষাবিস্থারে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান শিক্ষার্থী প্রায় ২২০০ জন। এ কলেজটির অনেক সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ধারাবাহিক ভাবে ভালো ফলাফলের কারনে প্রশংসিত হচ্ছে সর্ব মহলে। সরেজমিন লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজে গিয়ে দেখা যায় চলতি বছরে এইচ.এস.সি পরীক্ষার ফলাফলে উপজেলার মধ্যে প্রথম স্থান ও সর্বাধিক ৩জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করায় আনন্দে আপুøত কলেজের শিক্ষক, গর্ভনিং বডির সদস্য, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপকালে জানা যায় এই কলেজে ভর্তি হওয়া অনেক শিক্ষার্থী মাধ্যমিক পর্যায়ে জিপিএ-৫ না পেয়েও এই কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে জিপিএ-৫ অর্জন করছে প্রতিবছর। চলতি বছর এইচ.এস.সি পরীক্ষায় এই কলেজ থেকে ৬০১ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে ৪৫৫ জন উত্তির্ণ হয়। যার মধ্যে ৩জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ (নয়ন কুমার দে, হেপি বেগম, ফাহমিদা আক্তার), এ গ্রেড ৪৩, এ মাইনাস গ্রেড ৭৫, বি গ্রেড ১৬৪, সি গ্রেড ১৬২, ডি গ্রেড ০৮ জন। মোট ৭৫.৭১% ফলাফলের মাধ্যমে উপজেলার মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে। বিগত পাঁচ বছরের ফলাফলে ২০১২ সালে ৯৫% (জিপিএ-৫ ২৫টি) , ২০১৩ সালে ৬০%, ২০১৪ সালে ৮২% (জিপিএ-৫, ০৫টি), ২০১৫ সালে ৫৯% (জিপিএ-৫, ০১টি)। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৬ উপলক্ষে চলতি বছরে কলেজটি উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কলেজ এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মর্যাদা অর্জন করেন ইংরেজী বিষয়ের প্রভাষক মোঃ গোলাপ মিয়া। বর্তমানে এ কলেজের উলেখযোগ্য সমস্যা গুলো হচ্ছে- শ্রেণী কক্ষ সংকট, শিক্ষার্থী মিলনায়তনের অভাব, কম্পিউটার ল্যাব ও লাইব্রেরী ভবন নেই, নামাজের স্থান সংকট, বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট, ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা, খেলার মাঠের অভাব। তাছাড়া ২০০৭ সাল থেকে স্নাতক (পাস) কোর্স চালু থাকলেও এখনো তা এমপিও ভূক্ত হয়নি। নানা সমস্যা থাকা সত্বেও ভালো ফলাফলের পাশাপাশি এ কলেজটির উল্লেখযোগ্য সহশিক্ষা কার্যক্রম গুলো হচ্ছে- ফ্রি ব্লার্ড গ্রুপিং ও আই ক্যাম্প, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র পরিচালিত বই পড়া কর্মসূচী, এসেম্বলি, সাপ্তাহিক সাংস্কৃতিক চর্চা, যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও বাংলা নববর্ষ উদযাপন, মুক্তিযুদ্ধেও আলোকচিত্র প্রদর্শণী, বাষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ, স্কাউট কার্যক্রম ও শিক্ষাসফর, ডিজিটাল ক্লাস পরিচালনা। ২০১২ সালে উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট এ চ্যাম্পিয়ন ও ২০১৫ সালে জেলা পর্যায়ে রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। কলেজের পক্ষ থেকে দরিদ্র ও মেধাবি শিক্ষার্থীদেরকে বিনাবেতন/অর্ধবেতন এবং এ+ প্রাপ্ত ও মুক্তিযোদ্ধার সšতানদের বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। এ কলেজটির শিক্ষা বিস্তার ও ভালো ফলাফলের পেছনে যারা প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তারা হলেন-

মফস্বল থেকে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম হয়ে চমক দেখানো লংলা কলেজের এগিয়ে চলা...
অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. আতাউর রহমান, সহকারী অধ্যাপক মো. নজমুল হোসেন, মোছা. নাজমা বানু, শাহনাজ বাহার। প্রভাষক মো. হানিফ, ইন্দ্রজিৎ রায়, জয়ন্ত কুমার দেবনাথ, মো. মাজহারুল ইসলাম, মো. হেলাল খান, রেজিনা মুনমুন মিমি, মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, গায়ত্রী চক্রবর্তী, মো. গোলাপ মিয়া, মিস লিলি বেগম, সুয়েজ উদ্দিন খান, সৈয়দ আতিকুজ্জামান, খালেদ আহমদ, আক্তার হোসেন, হালিমা বেগম, মো. শহিদুল্লাহ শেখ, সত্যজিত কির্তুনিয়া, কল্লোল দাস, মো. নজরুল ইসলাম, রিমা বেগম, প্রদর্শক সুরজিত কুমার দেব, সমরেশ কুমার দাস রায়, সহ: লাইব্রেরীয়ান খাইরুল আনাম, মো. আব্দুল মন্নান হিসাব সহকারী, অফিস সহকারী সাদেক আহমদ চৌধুরী, কম্পিউটার অপারেটর তোফায়েল বেগ, শিক্ষাকর্মী মো. শফিক মিয়া, পরেন্দ্র মালাকার, জোৎস্না রানী দেব, সুশীল শুক্ল বৈদ্য, হোছনে আরা, আয়ূব আলী, বাসনা রানী মল্লিক, লাকী রানী পাল, আবিদ হোসেন।
চলতি বছর জিপিএ-৫ অর্জনকারী ফাহমিদা আক্তার জানান, আমি হায়দরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৮৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে লংলা কলেজ থেকে চলতি বছর এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এ+ পাওয়ার পিছনে এই কলেজের শিক্ষকদের ক্লাস দান ও সার্বিক তথ্যাবধানে আমার এ ফলাফল অর্জিত হয়েছে ।
অর্থনীতি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. নজমুল হোসেন জানান, একঝাক উদ্যমী, অতি আন্তরিক শিক্ষকমন্ডলীর সার্বিক সহযোগীতা ও কলেজ গভর্ণিং বডির সকল সম্মানিত সদস্যবৃন্ধের সর্বাঙ্গিন তদারকিতে কলেজটি আজ উপজেলার শ্রেষ্ঠ কলেজে উন্নীত হয়েছে। রাজনীতি মুক্ত কলেজ ক্যাম্পাস, কলেজ অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের সেলফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ, সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহন (১ম, ২য়, ৩য় সাময়িক, নির্বাচনী এবং সর্বশেষ মডেল টেস্ট গ্রহন), প্রত্যেক শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের গ্র“প গঠন, নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তির্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ তত্ত্বাবধানে পাঠদান, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সমাবেশ করা, কলেজের দৈনিক রুটিনে সকল বিষয়ের ক্লাসের প্রতি সমান গুরুত্ত্ব প্রদানের কারনে কলেজের এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আতাউর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে আমরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। লংলা কলেজের শিক্ষক ও গর্ভনিং বডির আন্তরিকতা এবং সার্বিক পরিচালনায় আমরা এ ফলাফল অর্জনে গর্বিত। আগামিতে আরো ভালো ফলাফল প্রত্যাশায় তিনি সকলের সহযোগীতা চেয়েছেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post