পাউন্ডের দরপতনে মৌলভীবাজারের ঈদ মার্কেটে মন্দাভাব

পাউন্ডের দরপতনে মৌলভীবাজারের ঈদ মার্কেটে মন্দাভাব
এস আলম সুমন: ব্রেক্সিটের আচঁড় লেগেছে মৌলভীবাজারে। ক’দিন থেকে থমকে গেছে স্থানীয় ব্যবসা, বাণিজ্য। দেখা দিচ্ছে স্থবিরতা। পাউন্ড লেনদেনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যাংক ও র্কাব মার্কেটেও। ঈদ সামনে তারপরও দোকানীরা আশানুরুপ ক্রেতা পাচ্ছেন না। ব্রেক্রিটের প্রভাব কাঠিয়ে উঠা নিয়ে বৃটেনের মত নানা কারণে উদ্বিগ্ন মৌলভীবাজারের মানুষও। জানা যায় এবছর মৌলভীবাজারের অধিকাংশ ইংল্যান্ড প্রবাসী ঈদ উপলক্ষে আসছেন না দেশে। আর পাউন্ডের দরপতনে হঠাৎ করে রেমিটেন্স আসা কমতে থাকায় এই বিরুপ প্রভাব। ইইউতে বৃটেনিদের থাকা না থাকা গণভোটের ফলাফলের পর ক্রমাগত পাউন্ডের দরপতনে এমন নাজেহাল অবস্থা। ইইউতে বৃটেনের রিমেইন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন মৌলভীবাজারবাসীও। নির্বাচনী এ ক্যাম্পেইন চলার শুরু থেকেই এ নিয়ে নানা আলোচনা হত ওখানে বসবাসকারী স্বজনদের সাথে। ভোটের আগের দিন থেকেই এ নিয়ে চলছিল নানা জল্পনা কল্পনাও। এর নেপথ্যে ছিল নিজেদের লাভ ক্ষতির হিসাব নিকাশ। আর প্রাপ্তি ও প্রাপ্তি। লন্ডন প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের প্রতিটি গ্রামেই রয়েছেন একাধীক বৃটেন প্রবাসী। তাই আতœীয় স্বজন বৃটেনের প্রবাসী থাকায় ওদের পাঠানো রেমিটেন্স দিয়েই চলে তাদের সংসার। আর এখানকার বেশী লোক বৃটেনের প্রবাসী হওয়ায় তাদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপর অনেকটাই র্নিভরশীল ওখানকার ব্যবসা বাণিজ্য। গত কয়েকদিন থেকে বেক্রিটের প্রভাব পড়েছে মৌলভীবাজারেও। ব্যবসায়ীরা এমনটিই টের পাচ্ছেন বলে জানালেন। মৌলভীবাজারের অন্যতম ডির্পাটমেন্টাল শপিং সেন্টার এম বি ও বিলাসের পরিচালক আনোয়ার ইকবাল ও সুমন আহমদ জানান ঈদের এই সময়টিতে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্টানে ক্রেতা বিক্রেতাদের প্রচন্ড ভিড় থাকলেও এবছর বৃটিশ পাউন্ডের দরপতনে বৃটেন প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থায় বির্পযয় ঘটায় ক্রেতা কমে গেছে। বৃটেন ছাড়াও ইউরোপ, আমেরীকাসহ অনান্য দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা থাকায় তারপরও কিছুটা হলেও চলছে তাদের কেনা বেচা। লন্ডন প্রবাসী কুলাউড়ার জয়চন্ডি গ্রামের জামাল উদ্দিন রুবেল ও মৌলভীবাজারের সাম্পাসী কাজী বাড়ির ইমাদ মৌলা জানান গণভোটের পর পাউন্ডের ক্রমাগত দরপতনে বৃটেন প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠানো কমিয়ে দিচ্ছেন। অতি প্রয়োজনীয় না হলে তারা রেমিটেন্স পাঠাতে চাইছেন না পরবর্তীতে পাউন্ডের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার আশায়। আর একারণেই হঠাৎ করে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ব্যাংক সুত্রে জানা যায় বর্তমানে বৃটিশ পাউন্ডের দাম ১০১.৮০ টাকা যা কিছু দিন আগে ছিল ১১৮ টাকা। তবে মৌলভীবাজারের র্কাব মার্কেটে বৃটিশ পাউন্ড ৮০-৮৫ টাকা দরে ক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। মৌলভীবাজারের র্কাব মার্কেট হিসেবে পরিচিত শহরের বেরির পার এলাকায় রয়েল মার্কেটে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনহীন ৮টি ফরেঞ্জ মানি এক্রচেইঞ্জের দোকান রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যারা মূলত এধরনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অবৈধ্য ভাবে চালান রমরমা ব্যবসা। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদীত মৌলভীবাজার সৈয়দ ফরেন মানি এক্রচেইঞ্জের স্বত্বাধীকারী সৈয়দ ফয়ছল আহমদ জানান এ কয়দিন থেকে তাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে ১০-১৫ রোজা থেকে তাদের ব্যবসা ভালো হলেও এ বছর উল্টোচিত্র পাউন্ডের দরপতনে। মৌলভীবাজার সোনালী ব্যাংকের এ্যাসিসটেন্ড জেনারেল ম্যানেজার দেওয়ান মো: মনিরুজ্জামান ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো: মোস্তাক আহমদ জানান ইইউ থেকে ইংল্যান্ড বেরিয়ে যাওয়ার গনভোটের পর বৃটিশ পাউন্ডের অব্যাহত দরপতনে বৃটেন প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানো কমে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ব্যাংক গুলোতে পাউন্ডের লেনদেনের এমন ধ্বস প্রত্যক্ষ হচ্ছে। বৃটেন এটি কাটিয়ে উঠতে না পারলে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যে। মৌলভীবাজার ব্যাংকার অফিসার এসোসিয়েশনের সভাপতি এডভোকেট আবু তাহের বলেন ব্রেক্রিটের প্রভাবে পাউন্ডের দরপতনে ইংল্যান্ড থেকে এখন রেমিটেন্সটা কম আসছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন দর বাড়লেই বৃটেন প্রবাসীরা জমানো পাউন্ড দেশে পাঠাবেন তখন আর এই স্থবিরতা থাকবেনা। বৃটিশ বাংলাদেশ ন্যাশনাল কাউন্সিল (ঁশ) বাংলাদেশের সভাপতি এডভোকেট নুরুল ইসলাম শেফুল জানান ইইউ থেকে বৃটেন বেরিয়ে আসার সিন্ধান্তে প্রাথমিক ভাবে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যে ও পাউন্ডের দরপতনে বিরুপ প্রভাব পড়লেও তা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। এসময়ে আমাদের দেশে বৃটেন থেকে আসা রেমিটেন্সে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তবে এই রেমেইনের পরে ঘুরে ফিরে বাংলাদেশীরা হোটেল ও কারি ব্যবসাসহ অনান্য সবকিছুতেই ব্যাপক সাফল্য পাবে। এবং সে দেশে আমাদের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post