আঁর খোঁজ নিব কে রে...

আঁর খোঁজ নিব কে রে...
অনলাইন ডেস্কঃ সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আলাউদ্দিন সাব্বিরের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সাব্বিরকে হারিয়ে তার মা আছমা বেগম, তিন বোন নাছরিন বেগম, নাজবিন আক্তার ও নাহিদা আক্তার বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। নিহত সাব্বির কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের নেতড়া গ্রামের বড় বাড়ির মৃত আমিনুল ইসলামের পুত্র। সৌদির তায়েফ থেকে কাজ শেষে রিয়াদে ফেরার সময় সোমবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় সাব্বিরের মৃত্যু হয়।
বুধবার দুপুরে নিহতের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, জীবিকা উপার্জনের তাগিদে সাব্বির ২০১৩ সালে দ্বিতীয় বাড়ের মতো সৌদি আরব যায়। তিনি ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৫ মাসের ছুটিতে দেশে এসে চট্টগ্রামের ভুজপুর থানার হেঁয়াকো এলাকার নুরুল ইসলাম মেম্বারের মেয়ে জরিনা আক্তার আখিকে বিয়ে করেন। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে আবার সৌদি আরব চলে যায় সাব্বির।
ইতোমধ্যে তার স্ত্রী জরিনা আক্তার ৮ মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়েছেন। গত সোমবার (২৮ জুন) রাতে সৌদি আরবে রিয়াদে সড়ক দুর্ঘটনায় সাব্বির এবং পাশ্ববর্তী নাঙ্গলকোট উপজেলার পরিকোট (ছর জামুরাইল) গ্রামের রিপন নিহত হন। এছাড়া এ ঘট্নায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
সাব্বিরের মৃত্যুর খবর শুনে স্ত্রী জরিনা আক্তার গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে সাব্বিরের মা আছমা বেগম বারবার মুর্ছা গিয়ে বলছেন- ‘আঁর খোঁজ নিব কে রে..। আন্নেরা আঁর হুতুরে আনি দেন। আঁই ওউন কেন্নে বাঁচমু’। এমন পরিস্থিতিতে শান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না প্রতিবেশীরা। নিহত সাব্বিরের তিন বোনের মধ্যে বড় বোন নাছরিনের বিয়ে হয়েছে। আরও দুই বোন বিয়ের উপযুক্ত। পরিবারের উপার্জন করার মতো আর কেউ নেই বলে জানান প্রতিবেশীরা।
স্থানীয়রা জানান, ছোটবেলা থেকে সাব্বির শান্ত স্বভাবের ছিল। কারও সাথে কখনো ঝগড়া-বিবাদ করতো না। তার মৃত্যুর ফলে পরিবারের ভরণ পোষণ করার কেউ নেই। সাব্বিরের পরিবারের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
অপরদিকে একই দুর্ঘটনায় নাঙ্গলকোট উপজেলার ছর জামুরাইল গ্রামের রিপনের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। সাংবাদিকরা ডাকাতি নদীর পারে তার বাড়িতে গেলে পিতা মিজানুর রহমান উচ্চঃস্বরে ছেলের জন্য কান্না শুরু করেন। ৬ বছর আগে বিদেশ গিয়ে ছেলে লাশ হয়ে ফিরবে বলে তিনি কখনও ভাবেন নি।
রিপনের ভাই শিপন জানান, ‘ঈদের আগেই সে বাড়ি ফিরে আসার ইচ্ছায় পরিবারের লোকজনের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করেছে। কে জানে ভাইয়ের এমন অবস্থা হবে’। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। দুই ভাই বেকার। ঈদের আগে তার বাড়ি আসার কথা ছিলো। বিমানবন্দর থেকে গাড়ি করে তাকে নিয়ে আসার জন্য তার বাবাকে বলেছিলেন। তার জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছিলো। ঈদের পরে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।

Post a Comment

Previous Post Next Post