কুলাউড়ার আলী আহমদ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে এখন পত্রিকা বিক্রেতা

কুলাউড়ার আলী আহমদ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে এখন পত্রিকা বিক্রেতা
স্টাফ রিপোর্টারঃ একজন আলী আহমদ ছিলেন ডাক বিভাগের সহকারি পরিদর্শক। অবসর গ্রহণ করে ছেলেসহ পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারান। সেই চক্রই তার আলী আকবরকে অপহরণ করে। অপহরণের একবছর অতিবাহিত হলেও কোন সন্ধান পাননি ছেলের। সর্বস্ব হারিয়ে এখন কুলাউড়া শহরের পথে পথে পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কুলাউড়া শহরের মাগুরার বাসিন্দা সহজ সরল আলী আহমদ (৫৮) দীর্ঘদিন সরকারি চাকুরি শেষে ২০১২ সালেল ০৮ এপ্রিল অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পূর্বে সর্বশেষ কর্মস্থল ছিলো সিলেটের বিয়ানী বাজার উপজেলায়। স্ত্রী সমিরুন বেগম ও একমাত্র পুত্র আলী আকবর (২০)কে নিয়ে বিয়ানীবাজারে বসবাসকালে পরিচয় হয় বিয়ানীবাজার উপজেলার বৈরাগীবাজারের খশির সড়ক ভাঙ্গি গ্রামের প্রতারক ওলিউর রহমান গাজী (৪৮) ও তার সহযোগি প্রতারক চক্রের সাথে। ওই চক্রটি আলী আহমদ ও তার একমাত্র ছেলে আলী আকবরকে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় পাঠানোর প্রলোভন দেখায়। তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেন আলী আহমদ। প্রতারক চক্রের কথামতো প্রথমে ৪ লাখ টাকা দেন। পরবর্তি তারিখে অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি নিজের পেনশন ও সঞ্চয়ের ২১ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ওই রাতেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ি ওলিউর রহমান গাজীর সহযোগিরা রাতে বাসার দরজা ভেঙে টাকাসহ মুল্যবান সামগ্রী লুট করে নেয়। ঘটনার পর আলী আহমদ বিয়ানীবাজার থানা পুলিশকে অবহিত করলে তৎকালীন ওসি তদন্ত দেলোয়ার হোসেন ও এসআই সিকন্দর আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। এদিকে ওলিউর রহমান গাজী ও তার সহযোগিরা এলাকার প্রভাবশালী ও বিত্তশালী হওয়ায় ডাকাতির ঘটনায় আলী আহমদ বিয়ানীবাজার থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ আবুল কালাম ড্রাইভার ও আবুল কালাম ভঙ্গ ড্রাইভার, ফারুক আহমদ নামক ৩ জন আসামীকে আটক করে। কিন্তু পুলিশ ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করায় আলী আহমদ ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর সিলেট জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দেন। আদালত বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জকে মামলা গ্রহণ করে ৭ দিনের মধ্যে আদালতকে অবগত করার নির্দেশ দেন। এদিকে চতুর আসামীপক্ষ বিষয়টি বুঝতে পেরে বিষয়টি আপোষ নিষ্পত্তি করে তাকে পুনরায় আমেরিকা পাঠানোর নামে অঙ্গিকারনামা দেয়। প্রতারক চক্র এবার আমেরিকা নেয়ার কথা বলে আলী আহমদ ও তার ছেলেকে ঢাকার ফকিরাপুলে হোটেল সুগন্ধায় রেখে পালিয়ে যায়। এঘটনায় আলী আহমদ ঢাকার মতিঝিল থানায় ও খিলগাঁও থানায় পৃথক জিডি করেন। এরপর তিনি ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করেন। এদিকে ওইচক্র গত বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি আলী আহমদের ছেলে আলী আকবর (২০) কে দিনেদুপুরে অপহরণ করে। আলী আকবর বিয়ানীবাজারের নিদনপুর ইউনিয়নের মুরাদগঞ্জ বাজারে আহাদ মিয়ার চায়ের দোকানের কর্মচারী ছিলো। এঘটনায় দোকানী আহাদ মিয়া থানায় অভিযোগ দিয়েছেন বলে আলী আহমদকে জানান। কিন্তু ঘটনার একবছর অতিবাহিত হলেও কোন খোঁজ মেলেনি ছেলের। এদিকে সর্বস্ব হারিয়ে আলী আহমদ অনেকটা পাগল প্রায়। দু’মুটো অন্নের জোগাড় করতে তাকে বেছে নিতে হয়েছে পত্রিকা বিক্রির কাজ। তাতে মামলা চালানো আর ছেলের খোঁজ করা দুষ্কর এখন আলী আহমদের জন্য। আলী আহমদের একটাই চাওয়া, প্রশাসন যেন তার ছেলেকে অপহরণকারী চক্রের কবল থেকে জীবিত উদ্ধার করে দেয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post