নিউজ ডেস্কঃ আজ ২৮ অক্টোবর বুধবার, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী। এই দিনটি পালনে কমলগঞ্জে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ-এ পুষ্পার্ঘ অর্পন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন। কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ বুধবার তার স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন, ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৭১ সালের এই দিনের ভোর বেলা মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ধলই সীমান্ত চৌকিতে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন জাতির এই সূর্য সন্তান। সেদিন তাঁর রক্তে সিক্ত হয়েছিল কমলগঞ্জ। স্বাধীন বাংলার জন্য তাঁর সর্বোচ্চ ত্যাগ নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়ায় বাঙ্গালী তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামের আক্কাছ আলী মন্ডল ও কায়ছুন্নেছার সাহসী সন্তান ছিলেন হামিদুর রহমান। জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের ১১ টি সেক্টরের মধ্যে ৪ নং সেক্টর ছিল মেজর জেনারেল সি আর দত্তের অধীনে। সেটির একটি সাব সেক্টর হলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর। সেই সেক্টর থেকে ২৪ অক্টোবর শেষ রাত্র হতে ২৮ অক্টোবর ভোর পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে ইপিআর, পরবর্তীতে বিডিআর ও বর্তমান বিজিবির ফাঁড়ির সামনে থাকা পাক সেনাদের সাথে তুমুল যুদ্ধ চলে মুক্তিবাহিনীর। ধলই সীমান্তে আক্রমন কারী মুক্তিবাহিনীর প্লাটুনের এ্যাসল্ট অফিসার ছিলেন মেজর (অব.) কাইয়ুম চৌধুরী। আর সিপাহী হামিদুর রহমান ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরীর রানার। চারদিকে চা বাগান, মাঝখানে ধলই সীমান্ত চৌকি। চৌকি থেকে দক্ষিণপূর্ব দিকে ত্রিপুরার কমলপুর সাবসেক্টর ক্যাম্প থেকে সকল প্রস্তুতি নিয়ে ২৮ অক্টোবর ভোরে কাইয়ুমের নেতৃত্বে একটি দল পাক সেনাদের উপর চতুর্দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমন চালায়। ব্যাপক গোলাবর্ষনে পাক সেনাদের ক্যাম্পে ধরে যায় আগুন। প্রচন্ড গুলিবর্ষন ও পাকবাহিনীর পুতে রাখা মাইন বিষ্ফোরণে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন। ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য হামিদুর রহমান সীমান্ত চৌকি দখলের উদ্দেশ্যে মৃত্যুকে তুচ্ছ করে হালকা একটি মেশিনগান নিয়ে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে শক্রপক্ষের ৫০ গজের মধ্যে ঢুকে পড়েন। গর্জে উঠে তার হাতের মেশিনগান। শক্র দলের অধিনায়কসহ বেশ কয়েকজন সৈন্য এতে প্রাণ হারায়। এমন সময় শক্র পক্ষের একটি বুলেট তার কপালে বিদ্ধ হয়। মুহুর্তেই সামীন্তবর্তী ছড়ার পারে মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়লেন হামিদুর রহমান।
১৯৯২ সালে তৎকালীন বিডিআর বর্তমান বিজিবির উদ্যোগে সর্ব প্রথম ধলই সীমান্ত চৌকির পাশে নির্মাণ করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতি স্মরণী। ২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১০ শতাংশ জায়গার উপর সাড়ে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত বিভাগ নির্মান করে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিস্তম্ভ। এছাড়া কমলগঞ্জের ভানুগাছ-মাধবপুর সড়কটির নামকরন করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান সড়ক হিসেবে। ২০০৭ সালে ধলই বিওপির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বীরশ্রেষ্ট শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান সীমান্ত ফাঁড়ি।
২০১০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে শ্রীমঙ্গস্থ ১৪ বিজিবির সাবেক অধিনায়ক ল্যাফটেন্যান্ট কর্নেল নুরুল হুদার উদ্যোগে ধলই সীমান্ত চৌকি এলাকায় গড়ে তোলা হয় আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট। নির্মান করা হয় একটি বড় পুকুর, প্রস্তাবিত মনুমেন্টে রাখা হয় গাড়ী পার্কিং এরিয়া, টয়লেট, ওয়েটিং রুম, রিসোর্ট, কেফিটরিয়া, গলঘর। নির্মান করা হয় সীমান্ত স্মৃতি কুঞ্জ দুতলা ঘর, সীমান্ত অবকাশ যাপন কেন্দ্র। যা পর্যটকদের জন্য এখন আকর্ষনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত হয়েছে।