নিউজ ডেস্কঃ ইঁদুর আকারে ছোট হলেও প্রতি বছরে প্রায় ১০/১২ টন সবধরণের খাদ্যশস্য নষ্ট করে ফেলছে, যার বাজার মূল্য ৭শ’ কোটি টাকারও বেশি। এসব খাদ্যশস্যের মধ্যে গম শতকরা ৪ থেকে ১২ ভাগ, ধান শতকরা ৫ থেকে ৭ ভাগ, গোল আলু ৫-৭ ভাগ নষ্ট করছে। এরা বছরে শুধুমাত্র ধান ও গমের প্রায় ৫শ’ মেট্রিক টন পর্যন্ত ক্ষতি করে থাকে। ইঁদুর শুধু ক্ষেতের ফসল নষ্ট করছে তা কিন্ত নয়, ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন বই-খাতা, কাপড়, আসবাবপত্র, বিছানাপত্র ইত্যাদি কেটে ফেলে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে, সাথে ছড়াচ্ছে প্রায় ৩০ ধরণের রোগ জীবাণু। পুরো শীত মৌসুম জুড়ে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান শুরু হয়েছে। ‘ইঁদুর ধরুন, ইঁদুর মারুন, ইঁদুরমুক্ত খামার গড়ুন- এবারে এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এই কার্যক্রম ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে আগামি ৬ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। মাঠের ফসল উৎপাদন ও গুদামজাত শষ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ইঁদুর প্রধান সমস্যা। এছাড়াও মুরগির খামারে গর্ত করাসহ ডিম ও ছোট মুরগি খেয়ে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার টাকা ক্ষতি করে থাকে। কৃষি বিভাগ জানায়, ইঁদুর নিধন কার্যক্রমকে জোরদার করার মাধ্যমে ফসলের একটা বড় অংশ রক্ষা সম্ভব। ইঁদুর মাঠের দানা জাতীয়, শাকসবজি, ও মাটির নিচের ফসল আলু, মুলা, গাঁজর, ওলকপি জাতীয় সবজি নষ্ট করে। ইঁদুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সেচনালায় গর্ত করে। এতে করে বাঁধ ও সেচনালা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটায়। এ কারণে ইঁদুর দমন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্য মতে, ইঁদুরের বংশ বৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি। সুষ্ঠু পরিবেশে একজোড়া ইঁদুর থেকে বছরে প্রায় ৩ হাজার ইঁদুর জন্মলাভ করতে পারে। জন্মদানের দু’দিনের মধ্যেই এরা পুনরায় গর্ভধারণে সক্ষম হয়। জন্মদানের ৩ মাসের মধ্যে বাচ্চা দিতে সক্ষম হয়। ইঁদুরের জীবনকাল ২ থেকে ৩ বছর। ইঁদুর ধান, গম, ভুট্টা, বাদাম, ফলমূল বিশেষ করে শাকসবজি, নারিকেল, পেয়ারা, সফেদা, লিচু, আম, লাউ, মিষ্টি আলু ইত্যাদি কৃষিজ ফসল খেয়ে ক্ষতি করে। ধান ও গমের শীষ আসার সময় ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে কেটে গর্তের ভেতর নিয়ে বাসা তৈরি করে এবং খায়। ইঁদুর যতটা না খায় তার চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি খাদ্যদ্রব্য নষ্ট করে। খাদ্যদ্রব্যে মলমূত্র, পশম এবং রোগ জীবাণু সংক্রমিত করার মাধ্যমে ইঁদুর ব্যাপক ক্ষতি করছে। গর্ত করে ঘরের কাঠামো নষ্ট করাসহ খাদ্যদ্রব্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে নষ্ট করে মানুষ ও গৃহপালিত পশুপাখির জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন ও বিস্তার করে। বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে ইঁদুরের উপদ্রুব কমিয়ে আনা যায়। যেহেতু ইঁদুর নোংরা স্থান পছন্দ করে, তাই বাড়িঘর, ক্ষেত-খামার, পুকুরপাড়, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, নদীর পাড় ইত্যাদি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খাদ্য গুদাম ও খড়ের গাদা মাটির সাথে তৈরি না করে উচু মাচা তৈরি করে তার উপর করতে হবে। ইঁদুর যাতে গর্ত করতে না পারে সেজন্য ক্ষেতের আইল ছেঁটে চিকন করতে হবে। নারিকেল ও সুপারি গাছে মাটির ৫ থেকে ৬ ফুট উঁচুতে ও আড়াই ফুট চওড়া মসৃণ টিনের পাত লাগিয়ে ইঁদুর প্রতিরোধ করা যায়। মানুষের মাথার চুল নেটের মাধ্যমে নারিকেল গাছে ব্যান্ডেজ করে রাখলে ইঁদুর ও কাঠবিড়ালি কম ক্ষতি করে। পেঁচা, গুইশাপ, বেজি, শিয়াল, বিড়াল জাতীয় প্রাণির প্রধান খাদ্য হচ্ছে ইঁদুর। এই প্রাণিগুলোকে সংরক্ষণ করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ ইঁদুর সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ইঁদুর নিধন অভিযান কর্মসূচি চলবে শীতের মৌসুমের দু’মাস সময পর্যন্ত। যদিও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়োজনে সব প্রাণিরই বেঁচে থাকার দরকার রয়েছে। তবু ইঁদুরের ক্ষতিকর দিকগুলো বেশি হওয়ার কারণে নিধন না করেও উপায় নেই।
ট্যাগ »
জাতীয়/সমগ্র বাংলা
