হাকালুকির কচমা বিলে নৌকা বাইচ

হাকালুকির কচমা বিলে নৌকা বাইচ
হোসাইন আহমদ: ‘কোন মেস্তরী নাও বানাইলো কেমন দেখা যায়/ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ূর পংখির নাও’ মৌলভীবাজারের হাকালুকি হওরের দক্ষিণ তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কচমা বিলে গত মঙ্গলবার বিকেলে এমনই ঝিলমিল করছিল অনেক নৌকা। গ্রাম বাংলার চিরন্তন আঞ্চলিক সারি গান গেয়ে বৈঠা, খঞ্জনি, ঢাক-ঢোল আর করতালের তালে তালে হয়ে গেলো ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা বাইচ। নৌকা বাইচকে গিরে গত কয়েক দিন ধরে ভাটি অঞ্চলে চলছিল নানা কৌতুহল। দিনটির প্রহর গুণছিলেন অঞ্চলের সর্বস্থরের মানুষ। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে নৌকা বাইচকে নিয়ে চলছিল কলপনা ঝলপনা। গ্রাম বাংলার হাওর অঞ্চলের অতি পরিচিত সংস্কৃতি এই নৌকা বাইছ প্রতিযোগীতা নানা কারণে আজ বিলিন হতে চলেছে। বছর জুড়ে নানা সমস্যায় থাকা হাওর অঞ্চলের মানুষদের বর্ষা মওসুমে নৌকা বাইছ প্রতিযোগীতাই ছিল তাদের আনন্দের অন্যতম খোরাক। স্থানীয়রা জানালেন আগে প্রতিবছরই নানা সংগঠনের ব্যানারে ওখানে এমন একাধিক প্রতিযোগীতার আয়োজন হলেও র্দীঘ দিন পর ওই এলাকায় অনুষ্টিত হল ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা। হাওর পাড়ের লোকজন জানালেন নৌকা দৌড় প্রতিযোগীতার দিনক্ষন ঠিক হওয়ার পর থেকেই ওই এলাকার লোকজন তাদের আত্মীয় স্বজন ও বিবাহিত মেয়েদের জামাই বাড়ির লোকদের তাদের এলাকার এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা উপভোগ করার জন্য নিমন্ত্রণ দেন। তাদের এমন নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে আত্মীয় স্বজনরা আগের দিন থেকেই তাদের বাড়িতে অবস্থান করেন। নৌকা দৌড় প্রতিযোগীতাকে কেন্দ্র করে এই এলাকা পরিনত হয় আত্মীয় স্বজনদের মিলন মেলায়। এদিকে নৌকা বাইচ দেখতে হাওরের চতুর্দিকের প্রায় শতাধিক ডিঙি ও ছোট-ছোট নৌকা ভুকশিমইল, আলমপুর ও কানেহাত গ্রামের কচমা বিলকে বেষ্টনী তৈরী করে জলে ভাসতে থাকে। দুপাশ ঘিরে এসব নৌকার বেষ্টনী দর্শনার্থীদের আলাদা আনন্দ যোগায়। এসব নৌকায় স্কুল/কলেজ পড়ুয়া ছাত্র/ছাত্রী, ছেলে, বৃদ্ধ, বধু, কিশোরীসহ সকল বয়সের দর্শক বসে নৌকা বাইচ উপভোগ করে। এছাড়াও অনেকের নৌকা না থাকায় ভুকশিমইল-কুলাউড়া রোডে দাড়িয়ে প্রতিযোগীতা দেখলে প্রায় ২ ঘন্টা যানচলাচ বিচ্ছিন্ন ছিল। বাড়ী ঘরের ছাদ ও গাছের ডালে বসে নৌকা বাইচ উপভোগ করে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শকরা। নৌকা বাইচ দেখতে আসা রাজন আহমদ, ফেরদৌস আহমদ, কামরুল ইসলাম, প্রবাসী সাইফুর রহমান, নজরুল ইসলাম, রুমান মিয়া জানান, আমরা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ দেখতে প্রথম এসেছি আমাদের অনেক অনেক ভালো লাগছে। কমিটির কাছে আমাদের দাবী প্রতি বছর যেন নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়। বাইচের আয়োজক নবাবগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্ধরা জানান, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ও নতুন প্রজন্মকে এই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করতেই বাইচের আয়োজন করা হয়েছে। ভুকশিমইল নবাবগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির আয়োজনে ৬টি নৌকা নিয়ে অনুষ্ঠিত এ বাইচে ১ম হয় বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের নৌকা, ২য় হয় কুলাউড়ার ভুকশিমইল গ্রামের সাদীপুর গ্রামের নৌকা, ৩য় হয় হাকালুকির নৌকা। বাইচ শেষে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভুকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, কুলাউড়া থানার ওসি মতিয়ার রহমান প্রমুখ। অনুষ্টানে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
হাকালুকির কচমা বিলে নৌকা বাইচ
হাকালুকির কচমা বিলে নৌকা বাইচ

Post a Comment

Previous Post Next Post