![]() |
পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে ২টিতে ফোরকানের মৃত্যদণ্ড |
নিউজ ডেস্কঃ ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ৫টি অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭০-৭১ সালে ফোরকান মল্লিক মুসলিম লীগের কর্মী হিসেবে একই গ্রামের শান্তি কমিটির সভাপতি আজহার উদ্দিন খান, খবির বিশ্বাস, সুবিদখালীর শাহজাহান সিকদার, ওয়াজেদ সিকদার, কাকড়াবুনিয়া গ্রামের আলী আকবর গাজী ও ইউসুফ আলীসহ অন্যান্যের সঙ্গে মুসলিম লীগের পক্ষে প্রচারণা চালাতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তারা রাজাকার বাহিনী গঠন করে। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার সুবিদখালী পুরাতন হাসপাতাল ভবনটিতে ছিল রাজাকারদের প্রধান ক্যাম্প। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক সুবিদখালী বাজারের ডা. দেবেন্দ্রনাথ সরকার ও তার স্ত্রীকে হত্যার পর ওই বাড়িটিকে থানা শান্তি কমিটির প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে তারা। এসব ক্যাম্প-কার্যালয় থেকে মির্জাগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে ফোরকান মল্লিক ও তার বাহিনী।
ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগ:
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৭ জুন থেকে ৩ জুলাই ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী অন্যান্য সশস্ত্র রাজাকার গানবোটে করে পাকিস্তানী সেনাদের মির্জাগঞ্জ থানার কাকড়াবুনিয়া গ্রামে নিয়ে আসে। পাকিস্তানী সেনাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসার পর ওই গ্রামের হাওলাদার বাড়ির কাঞ্চন আলী হাওলাদার ও হাজী আবুল হাশেম হাওলাদারসহ মোট সাতজনকে তারা আটকের পর নির্যাতন করে। তাদের বাড়ি-ঘর লুটপাট এবং জোর করে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়। আটককৃতদের এক মাস আটক রাখার পর ছেড়ে দেয়া হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ২ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী অন্যান্য সশস্ত্র রাজাকাররা গানবোটে করে পাকিস্তানি সেনাদের মির্জাগঞ্জ থানার দেউলি গ্রামে নিয়ে আসে। পাকিস্তানী সেনাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসার পর ওই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলতাফ হায়দারসহ মোট ছয়জনের ঘর-বাড়িতে লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১২ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী অন্যান্য সশস্ত্র রাজাকার গানবোটে করে পাকিস্তানী সেনাদের মির্জাগঞ্জ থানার সুবিদখালীতে নিয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদবাহক কাকড়াবুনিয়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিন খলিফা, মির্জাগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের জমাদ্দার, সুবিদখালী বাজারের ডা. দেবেন্দ্রনাথ ও তার স্ত্রী বিভা রানীকে আটকের পর নির্যাতন করে তাদের হত্যা করে। এ অভিযোগে ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, ধর্মান্তরকরণ এবং বিতারণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২২ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট সময়ের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী অন্যান্য সশস্ত্র রাজাকার গানবোটে করে পাকিস্তানী সেনাদের মির্জাগঞ্জ থানার কাকড়াবুনিয়া বাজারে আসে। সেখানে তারা চারজনকে হত্যা করে। এছাড়াও ফোরকান মল্লিক ও তার সহযোগী রাজাকার এবং পাকিস্তান সেনারা হত্যা, গণহত্যা, জখম, আটক, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধ সংঘটিত করে। এ অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়।
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে ২২ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট সময়ের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী অন্যান্য সশস্ত্র রাজাকার মির্জাগঞ্জ থানার দক্ষিণ কলাগাছিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন মৃধাকে আটকের পর নির্যাতন এবং বাড়ি-ঘর লুটপাট করে। এ অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।