কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করলেন হাসিনা-মোদি; খুশির আমেজ বইছে

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন
নিউজ ডেস্কঃ কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলওয়ে লাইন প্রকল্পসহ আরও ৭টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করলেন হাসিনা-মোদি। শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে এই প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলওয়ে লাইন, খুলনা-মংলা পোর্ট রেলওয়ে লাইন, ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত প্রথম মৈত্রী সেতু, শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠীবাড়ীর সম্প্রসারিত উন্নয়ন কার্যক্রম, তারাপুর-কমলাসাগর সীমান্তহাট, সারদা পুলিশ লাইনে বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী ভবন ও বিএসটিআই’র উন্নত মানের টেস্টিং ল্যাব। এর আগে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলি হলে বাংলাদেশ-ভারত প্রতিনিধি দল বৈঠকে বসে। বৈঠকে দুই দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রেলসূত্র জানিয়েছে, কুলাউড়া জংশন থেকে শাহবাজপুর হয়ে সরাসরি ভারতে ব্রডগ্রীজের রেলপথ হবে। বর্তমানে দু’দেশের মধ্যে প্রটোকল সই হয়েছে। এদিকে ১৩ বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকা রেলপথটি ফের চালু হবে-এমন খবরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে খুশির আমেজ বইছে। তবে কবে চালু হতে যাচ্ছে দীর্ঘ যুগ ধরে বন্ধ থাকা রেললাইন এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। উল্লেখ্য, ১৮৮৫ সালে স্থাপিত আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে শাহবাজপুর-কুলাউড়া রেলপথটি উক্ত রেল লাইনে ঘন ঘন ট্রেন দূর্ঘটনা, কাঠের শ্লিপার, সেতুসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ সংস্কারের অভাবে ২০০২ সালের ৭ জুলাই ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়। এরপর রেলপথটির সংস্কারসহ ট্রেন চালুর দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী পালন করে আসলেও আজ অবধি এ সেকশনে ট্রেন চালু হয়নি। বৃটিশ আমলে নির্মিত আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অর্ন্তভুক্ত কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল লাইন ভারতের পূর্বাঞ্চল শিলচর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ও এ লাইনে চলাচলকারী ট্রেন যাত্রীসহ মালামাল বহন করত। 
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন
এ সেকশনে জুড়ী, দক্ষিনভাগ, কাঠালতলী, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর ষ্টেশনের মাধ্যমে প্রতিদিন দু’বার ট্রেন কুলাউড়া ও সিলেট আসা যাওয়া করত। এ লাইনে চলাচলকারী ট্রেন স্থানীয়ভাবে “লাতুর ট্রেন” নামে অধিক পরিচিত ছিল। রেললাইনটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা আর উদাসীনতায় রেললাইনের কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি লোপাট হয়েছে। কুলাউড়া-শাহাবাজপুর রেললাইনের পাশে রেলওয়ের ভূমির বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলে পাকাঘর নির্মাণসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে ভূমিখেকো চক্র। এছাড়া রেলের অনেক ভূমি অবৈধ দখলে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন। এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ও স্থানীয় সাপ্তাহিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয় এবং ট্রেন চালুর দাবীতে সিলেট উন্নয়ন বিভাগসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নানান কর্মসূচী পালন করে । সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট এডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাছ খান ও বর্তমান হুইপ সংসদ সদস্য শাহাব উদ্দিন রেললাইন চালুর জোর দাবি জানিয়ে সংসদে বক্তব্য রাখেন। এরই আলোকে ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ের শাহবাজপুর-কুলাউড়া সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের পর আর প্রকল্পটির কোনো কাজ হয়নি। এরপর ২০১৩ সালের ৯ নভেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌলভীবাজারের বড়লেখা আসলে ঐ সময় বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত বিশাল জনসভায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহাব উদ্দিন আবারও রেললাইন চালুর জোর দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে রেললাইন চালুর ঘোষণা দেন। অবশেষে একনেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর-সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প (সংশোধিত) অনুমোদন ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করলেন হাসিনা-মোদি। এ সংবাদে খুশির আমেজ লক্ষ্য করা গেছে বড়লেখা-জুড়ী-কুলাউড়া ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ।

Post a Comment

Previous Post Next Post