আবারও এভারেস্ট জয় করলেন সিলেটের আকি রহমান


নিউজ ডেস্কঃ আকি রহমান ব্রিটিশ বাংলাদেশি পর্বতারোহী। বাড়ি  সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার বাউধরন গ্রামে। দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। তাঁর শৈশব কেটেছে যুক্তরাজ্যের ওল্ডহ্যাম শহরে। এবার তিনি দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া স্পর্শ করেছেন।

বিশ্বের বিপৎসংকুল ১৪টি উঁচু পর্বত আরোহণের নতুন অভিযানের অংশ হিসেবে এভারেস্ট জয় করলেন তিনি।

পর্বত অভিযান থেকে সংগৃহীত অর্থ ইউকেআইএমের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের গাজা, যুক্তরাজ্যের ‘কমিউনিটি ওয়েলবিয়িং’ প্রকল্প, ‘চিলড্রেন অ্যান্ড অরফান’ প্রকল্পসহ ইসলামিক মিশনের আফ্রিকা, সিরিয়া, মরক্কো, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের বিপন্ন ও অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করবেন আকি।

জানা গেছে, গত ২২ মে স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান আকি । এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে প্রথম ব্রিটিশ-বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেছিলেন তিনি। মাত্র ২১ ঘণ্টায় এই দুঃসাহসী অভিযান শেষ করেন তিনি। তাঁর ওই অভিযান যুক্তরাজ্যে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল।

গত ১৫ এপ্রিল থেকে বিশ্বের বিপৎসংকুল ১৪টি উঁচু পর্বত আরোহণের অভিযানে নেমেছেন আকি। এবারের এ অভিযানের মাধ্যমে তিনি দেড় মিলিয়ন পাউন্ডের তহবিল সংগ্রহ করতে চান। তহবিল থেকে সংগৃহীত অর্থ ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিভিন্ন দেশের নিপীড়িত অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করবেন তিনি।

তিনি ধারাবাহিকভাবে ১৪টি পর্বত আরোহণের এই দীর্ঘ অভিযান শেষ হবে আগামী বছরের অক্টোবরে। এ অভিযান সফল হলে তিনি হবেন বিশ্বের ৫২তম ব্যক্তি, যিনি ১৪টি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ আরোহণের মাইলফলক স্পর্শ করবেন।

অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৯ মে বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ লোৎসে (৮ হাজার ৫১৬ মিটার) জয় করেন আকি রহমান। এরপর ২২ মে দ্বিতীয়বারের মতো ওঠেন এভারেস্টের চূড়ায়।

আকি চার ধাপে ১৪টি পর্বত আরোহণের কঠিন অভিযান শেষ করতে চান। প্রথম পর্যায়ে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাউন্ট এভারেস্ট, লোৎসে ও মাকালু পর্বতশৃঙ্গ। এ বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত আরোহণ করবেন এসব পর্বতের চূড়ায়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে জুন থেকে আগস্টের মধ্যে পাকিস্তানের নানগা পর্বত, গাসব্রম ওয়ান, গাসব্রম টু ও কেটু এবং চীনের ব্রড পিক। তৃতীয় পর্যায়ে আগামী বছরের এপ্রিল থেকে জুনে নেপালের অন্নপূর্ণা, চীন ও নেপালের চু ইউ, চীনের শিশাপাগমা এবং চতুর্থ পর্যায়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আরোহণ করবেন নেপালের মানাচলু ও দাওলাগিরি পর্বত।

তিন সন্তানের জনক আকি ছোট-বড় বেশ কয়েকটি পর্বতশৃঙ্গ জয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে তানজানিয়ার সবচেয়ে উঁচু পর্বত মাউন্ট কিলিমানজারো জয় করে প্রথম সাফল্য অর্জন করেন তিনি। এরপর তিনি ফ্রান্সের সবচেয়ে উঁচু ৪ হাজার ৮১০ মিটার মন্ট ব্লাঙ্ক পর্বত জয় করেন।

২০২০ সালের অক্টোবরে ২৪ ঘণ্টায় জয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাশিয়া ও ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু পর্বত মাউন্ট এলব্রস (উচ্চতা ৫ হাজার ৬৪২ মিটার) মাত্র ৮ ঘণ্টায় আরোহণ করে চূড়া স্পর্শ করেন আকি রহমান। পাশাপাশি রাশিয়ার কারবাদিনো-বলকারিয়াও জয় করেন তিনি।

এরপর ২০২১ সালে নেপালে অবস্থিত পৃথিবীর কঠিনতম পর্বত হিমালয় আমাদা ব্ল্যাম জয় করেন আকি রহমান, যার উচ্চতা ৬ হাজার ৮৫৬ মিটার।

এ প্রসঙ্গে আকি রহমান বলেন, ‘এ দুটি শৃঙ্গে আমি তিন দিনের ব্যবধানে উঠেছি। এটি আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। কারণ, মৃত্যু উপত্যকায় (ডেথ জোনে) পাঁচ দিন কাটিয়েছি আমি। লোৎসে জয়ের পর ভালো আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর পর এভারেস্টে উঠেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘খুব ক্লান্ত ছিলাম। কষ্ট হলেও আমি আমার এই পর্বতারোহণে সেসব মানুষের কথা ভেবেছি, যাদের সহায়তা করার জন্য এ অভিযানে নেমেছি। তহবিল সংগ্রহ করছি। আমার সংগ্রাম ওই সব মানুষের সংগ্রামের তুলনায় কিছুই নয়।’

Post a Comment

Previous Post Next Post