আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ


নিউজ ডেস্কঃ আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী ভাষণের জন্য দিনটি মাইলফলক হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে তখনকার রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমাবেশে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন।

বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ভাষণেই জাতি পেয়ে গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা।

২০১৭ সালে ইউনেসকো এ ভাষণকে বিশ্ব ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে গ্রহণ করে। এটি বিশ্বের ৭৮টি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল, নথি ও বক্তৃতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী বিজয়ী আওয়ামী লীগ তথা বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করলেও ১ মার্চ অপ্রত্যাশিতভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ২ ও ৩ মার্চ সারা দেশে হরতাল পালন করে।

এই পটভূমিতে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতায় এমন এক বক্তৃতা দেন, যা পুরো জাতিকে মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। স্বাধীনতার যে ডাক বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, তা বিদ্যুৎ গতিতে দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

সেদিন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত হন। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ময়দান ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ময়দানজুড়ে স্লোগান ছিল, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা।’

ভাষণে জনতাকে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রায় ১৯ মিনিটের ভাষণে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’

প্রকৃতপক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

কবি নির্মলেন্দু গুণ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে দেখেছেন অমর কবিতা হিসেবে৷ আর বঙ্গবন্ধুকে অভিহিত করেছেন কবি হিসেবে৷ তিনি তার ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো' কবিতাটি লিখেছেন ৭ মার্চের ভাষণের ওপর ভিত্তি করে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে আজকের দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ৭ মার্চ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post