হাকালুকি হাওড়ে পানির জন্য হাহাকার, চাষাবাদ ব্যাহত



হোসাইন আহমদঃ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওড়ে পানির জন্য হাহাকার চলছে। কৃষকরা তিন থেকে চার গুণ টাকা খরচ করেও বোরো জমিতে পানি দিতে পারছেন না। যার ফলে বৃহত্তম এই হাওড়ে ফসল উৎপাদন কমেছে। বেড়েছে কৃষকের ব্যয়। চাহিদামতো পানি না পাওয়ায় চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। হাওড় তীরবর্তী বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাওড় ও কৃষকদের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নেই। যার ফলে ক্রমান্বয়ে হাওড়ে বোরো উৎপাদন কমে যাচ্ছে।



মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে হাকালুকি হাওড়ের অবস্থান। হাওড়ের আয়তন ১৮১.১৫ হেক্টর। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এ হাওড়ে প্রায় ২৩৮টি বিল ও ১০টি নদী রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৫৭ হেক্টর। এর মধ্যে হাওড়ে চাষাবাদ হয়েছে ২৭ হাজার হেক্টর।

কয়েক লাখ কৃষক ও জেলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে হাকালুকি থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। হাওড় অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক ও বর্গাচাষিদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল হাওড়ে উৎপাদিত এক ফসলি বোরো ধান। ওই ফসলের আয় দিয়েই তাদের পুরো বছরের সাংসারিক খরচ এবং ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ সব ব্যয় চলে। কৃষকরা ধারদেনাও মিটান ধান বিক্রির টাকা থেকে।

সরেজমিনে হাকালুকি হাওড়ে গেলে দেখা যায়, বোরো ফসলের শীষ বের হওয়ার সময় এসেছে। কিন্তু নদী, নালা কিংবা বিল কোথাও পানি নেই। পানির জন্য হাহাকার করছেন কৃষকরা। বৃষ্টির অপেক্ষায় আছেন তারা। বোরো জমিতে সেচ দেওয়ার মতো সুবিধা না থাকায় কৃষকরা ফিতা পাইপ দিয়ে ৩-৪ হাজার ফুট দূর থেকে জমিতে পানি দিচ্ছেন। প্রতি ঘণ্টায় খরচ হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আবার অনেক কৃষক টাকা খরচ করেও পানি পাচ্ছেন না। পানির অভাবে বোরো জমি ফেটে চৌচির। পানির অভাবে বোরো ফসল মরে যাচ্ছে। ইজারাদাররা বিল শুকিয়ে মাছ নিধন করছে। যার কারণে বিলেও পানি পাওয়া যায়নি। পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা না থাকায় একদিকে কৃষকদের ব্যয় বাড়ছে এবং অন্যদিকে ফসল উৎপাদন কমে আসছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ফানাই নদীতে পশ্চিম দিকের ভাটেরা ইউনিয়ন থেকে আন ফানাই এবং পূর্বদিক থেকে বান্না নদী এসে মিলিত হয়েছে। ওই ৩ নদীর মিলনস্থলের একটু নিচে চালিয়া এলাকায় স্লুইচ গেট স্থাপন করলে ৩টি নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকবে এবং কৃষরাও চাহিদামতো বোরো জমিতে সেচ দিতে পারবেন।

হাকালুকি হাওড়ে কথা হয় কৃষক ফয়েজ আলী, জিতু মিয়া, ফাকুল মিয়া, মধু মিয়া ও হাজি লিয়াকত আলীর সঙ্গে। তারা বলেন, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে টাকা খরচ করেও জমিতে পানি দিতে পারছি না। কোথাও পানি নেই। স্বাভাকি খরচের চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি টাকা খরচ করে পানি দিতে হচ্ছে। তা-ও আবার সব জায়গায় পানি পাওয়া যায়নি। তারা বলেন, পানি না থাকায় উৎপাদন ভালো হচ্ছে না। আয় কমেছে, ব্যয় বেড়েছে। তাদের দাবি বৃহত্তর স্বার্থে হাওড়ে একটি স্লুইচ গেট স্থাপন করা একান্ত প্রয়োজন। কৃষকরা আরও বলেন, বোরো চাষের পানির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।

কৃষক নেতা রাজন আহমদ বলেন, বিল ইজারাদাররা নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ ধরে। যার কারণে কৃষকরা পানি পাচ্ছেন না। ধানের শীষ বের হওয়ার সময় টাকা দিয়েও পানি পাওয়া যায়নি। কিন্তু এ বিষয় নিয়ে জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকরী কোনো ভূমিকা নেই।

মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, হাকালুকি হাওড়ে স্লুইচ গেট স্থাপনের বিষয়ে জেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা করব এবং কীভাবে কৃষকদের বোরো উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, বিষয়টি নিয়ে যৌথভাবে কাজ করতে হবে এবং বড় একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া যায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে হাকালুকি হাওড়ে স্লুইচ গেট স্থাপনের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। 








 

Post a Comment

Previous Post Next Post