কুলাউড়ায় ট্রেনে আসন বরাদ্দ কম, টিকিট কালোবাজারে



এস আলম সুমন: কুলাউড়া রেলস্টেশনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী যাত্রীর তুলনায় আন্তনগর ট্রেনে বরাদ্দ আসন কম। তাই টিকিট ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কাউন্টার ও অনলাইনে বিক্রি শেষ হয়ে যায়। আর এর বেশির ভাগই চলে যায় কালোবাজারি চক্রের হাতে। বিক্রি হয় দ্বিগুণ দামে।

এ সমস্যা কাটাতে আসন বাড়ানোর দাবি উঠলেও রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন কোচ সংযোগ না হলে আসন বাড়ানো সম্ভব নয়।



রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া রেলস্টেশন দিয়ে সিলেট-ঢাকা পথে প্রতিদিন (সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ছাড়া) চার জোড়া এবং সিলেট-চট্টগ্রাম পথে দুই জোড়া আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এ পথে আন্তনগর কালনী এক্সপ্রেস ছাড়া সব কটি ট্রেনে নতুন বগি সংযোজন করা হয়। সিলেট-ঢাকা পথে কুলাউড়া স্টেশনের জন্য আন্তনগর কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে ১০টি শীতাতপ চেয়ার, ৩টি কেবিন এবং ৬০টি শোভন চেয়ার আসন বরাদ্দ রয়েছে। আন্তনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে ১০টি শীতাতপ চেয়ার ও ৩৫টি শোভন চেয়ার বরাদ্দ রয়েছে।

আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেসে শীতাতপ চেয়ার পাঁচটি, কেবিন তিন, ননএসি কেবিন তিন এবং শোভন চেয়ার ৪৫টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেসে শীতাতপ চেয়ার ১৫টি এবং শোভন চেয়ার ৫৫টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে শীতাতপ চেয়ার ৫টি, কেবিন ৩ ও শোভন চেয়ার ১৫টি আসন বরাদ্দ রয়েছে।

আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ার ২০টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। সব মিলিয়ে এই স্টেশন থেকে ঢাকা পথে ২৪৯টি এবং চট্টগ্রাম পথে ৪৩টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। বর্তমানে বরাদ্দকৃত আসনের টিকিটের ৫০ শতাংশ কাউন্টার এবং বাকি ৫০ শতাংশ টিকিট রেলসেবা অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি হয়।

জানা যায়, এই স্টেশন দিয়ে সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে দিনে তিন সহস্রাধিক যাত্রী যাতায়াত করেন। যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে অ্যাটেনডেন্টসসহ দায়িত্বরতদের টাকা দিয়ে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।

ঢাকাগামী আন্ত:নগর উপবন এক্সপ্রেসের যাত্রী শামীম আহমদ বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে ঢাকা যেতে হচ্ছে। কাউন্টার ও অনলাইনে কোনো টিকিট পাইনি। ২৮০ টাকার টিকিট কিনেছি ৪০০ টাকায়।’

জহুরুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘পরিবার নিয়ে কক্সবাজার যাব। যাত্রার পাঁচ দিন আগে ট্রেনের টিকিট ছাড়া হয়। টিকিট ছাড়ার ১০ মিনিটের মধ্যে সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। চট্টগ্রামের উদয়ন ট্রেনের পাঁচটি টিকিট কালোবাজারে কিনেছি। এক হাজার টাকা বেশি দিয়ে।’

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মোক্তাদির হোসেন ও এম মছব্বির আলী জানান, পাশের একই মানের শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে প্রায় প্রতিটি ট্রেনের আসনসংখ্যা ৮০ থেকে ১০০টি। অথচ এই স্টেশনে বৈষম্য রাখা হয়েছে। অ্যাপের টিকিট কালোবাজারিরা কীভাবে সংগ্রহ করে, কর্তৃপক্ষের সেটি তদারকি করা উচিত।

কুলাউড়া রেলস্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার মো. মুহিব উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় এই স্টেশনের টিকিট অনেক কম। আমরা প্রায়ই টিকিট বাড়ানোর চাহিদা দিই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।’ টিকিট কালোবাজারির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাউন্টার থেকে কোনো টিকিট কালোবাজারি হয় না। অ্যাপের টিকিট কিনে কালোবাজারিরা মানুষের কাছে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা বিপাকে পড়ে যাই।’

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, বর্তমানে টিকিটের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। ভবিষ্যতে যদি ট্রেনে কোচ বাড়ানো যায় তাহলে চাহিদামতো টিকিট সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post