নিউজ ডেস্কঃ সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে নিহত রায়হান খুনের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রধান আসামি আকবর হোসেন ভূঁইয়া ১১ মাস ধরে বন্দি কারাগারে। কিন্তু কারাগারে থেকে রায়হানের পরিবারকে বিব্রত করছে বরখাস্ত হওয়া পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর আকবর হোসেন ভূঁইয়া। এরইমধ্যে কারাগারে সশরীরে সাক্ষ্য নেয়ার সময় রায়হানের চাচা হাবিবউল্লাহর পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেছে আকবর। মাফ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু এতে টলেননি সালমা বেগম ও তার পরিবার।
সালমা বেগম বলেছেন; ‘আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও, মাফ করে দেবো।’ এরপর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এক পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে রায়হানের স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিব্রত রায়হানের মা সালমা বেগম।
গত বছরের ১১ই অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নগরীর কাস্টঘর থেকে ধরে নিয়ে আসা হয় নেহারীপাড়ার যুবক রায়হানকে। ওই রাতে তারা ফাঁড়িতেই নির্যাতন করে রায়হানকে। সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার প্রথমে পুলিশ ঘটনাটি গণপিটুনি বলে প্রচার করলেও পরে সিসিটিভি ফুটেজে সত্যতা মিলে। ইতিমধ্যে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এস আই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, এস আই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস, হারুনুর রশিদ গ্রেপ্তার হয়েছে। ঘটনার দায় স্বীকার করার পর গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়। এখনো তারা কারাগারেই রয়েছে।
গত সপ্তাহে আদালত রায়হান হত্যার চার্জশিট গ্রহণ করেছেন। এখন তার পরিবারের দাবি- ‘রায়হান হত্যার বিচার দ্রুত করা হোক। আসামিদের শাস্তি দেয়া হোক।’ রায়হান হত্যার ঘটনার শাস্তি থেকে বাঁচতে তারা নানা ফন্দি-ফিকির অব্যাহত রেখেছে। রায়হানের মা সালমা বেগম জানিয়েছেন- প্রায় দুই মাস আগে বিভাগীয় মামলার তদন্তের জন্য তাকে ও রায়হানের চাচা হাবিবউল্লাহকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছিলো। কারাগারের বাইরে তিনি অবস্থান করছিলেন। আর আসামিদের মুখোমুখি করা হয় রায়হানের চাচা হাবিবউল্লাহকে। সাক্ষ্য নেয়ার একপর্যায়ে রায়হানের চাচার পায়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে এস আই আকবর। এ সময় রায়হানের চাচার পায়ে ধরে ঘটনার জন্য ক্ষমাও চায়। তবে- তাদের এই ক্ষমা চাওয়ার বিপরীতে আমরা জানিয়ে দিয়েছি; ‘রায়হানকে ফিরিয়ে দাও, মাফ করে দেবো।’ একপর্যায়ে আকবর ছাড়াও অন্য আসামিরা এসে পায়ে ধরে ক্ষমা চায়।’
রায়হানের মা জানিয়েছেন- ‘ওরা তিলে তিলে আমার ছেলেকে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে মেরেছে। ওদের বিচার হতেই হবে। আইনই তাদের শাস্তি দেবে। তবেই আমার রায়হানের আত্মার শান্তি পাবে।’ এই ঘটনার আগের একটি ঘটনা। হঠাৎ একদিন রায়হানের মা ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন সাবেক এক পুলিশ সদস্য। ওই সদস্য কারাগারে ছিল। জামিনে বেরিয়ে এসে রায়হানের মা’সহ পরিবারের সদস্যদের মুখোমুখি হয়। ওই সময় পুলিশ সদস্য আকবরের পক্ষ হয়ে জানায়; আকবর তাদের পরিবারের দায়িত্ব নিতে রাজি। রায়হানের মা, স্ত্রী ও সন্তানের দায়িত্ব সে নেবে। এজন্য সে রায়হানের স্ত্রীকে বিয়ে করতেও রাজি আছে। এদিকে- এমন প্রস্তাবে বিব্রত রায়হানের পরিবার। তারা কোনোভাবেই এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারছেন না। তারা প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই প্রস্তাবে বিব্রত রায়হানের মা’সহ পরিবারের সদস্যরাও।
রায়হানের মা সালমা বেগম জানিয়েছেন- ‘আমার ছেলের খুনি হয়ে সে আমাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেবে- এটা হতে পারে না। সে বিচার চলাকালে আমাদের বিব্রত করছে। এটা তার দৃষ্টতা। সে খুনের ঘটনা থেকে বাঁচতে নানা ফন্দি চালাচ্ছে বলে দাবি করেন সালমা বেগম।’
- ওয়েছ খছরু, মানবজমিন