কুলাউড়ায় 'রাজা সাহেব': আলী সফদর খান



নিউজ ডেস্কঃ আমাদের কুলাউড়া অনেক সমৃদ্ধ ইতিহাসে। এখানকার মাটি ধারণ করে আছে সুদীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের বহু রক্তসাক্ষ্য। বৃহত্তর সিলেটে ঘটে যাওয়া নানকার বিদ্রোহ (খাদ্যের বিনিময়ে দাসের মতো বিক্রি হয়ে যাওয়া ব্যক্তিটিই নানকার), ভানুবিল বিদ্রোহ' (নয়টি গ্রামের সমষ্টি ভানুবিল মৌজায় জমিদার কর্তৃক অস্বাভাবিক খাজনা বৃদ্ধি), বালিশিরা আন্দোলন, করাইয়া হাওর আন্দোলন, কাওয়াদীঘি হাওর রক্ষা সংগ্রাম ইত্যাদি আন্দোলন আর ১৯৩১-৩২ সালে সংঘটিত হওয়া 'কুলাউড়া বিদ্রোহ' (কুলাউড়া গ্রামের নির্যাতিত নানকারদের বিদ্রোহ)। এ সবগুলো আন্দোলনই ছিলো মূলত সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদের শোষণ-নিপীড়নমূলক ঘৃণ্য-নগ্ন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। আর সেই সামন্ত ব্যবস্থার একজন ধারক-বাহক উজ্জ্বল 'প্রতিভূ' হয়েও নিজের জমিদারি তথা বাপ-দাদার বিরুদ্ধে লড়েছেন, লড়তে সহযোগিতা করেছেন তৎকালীন অনেক বিপ্লবীদের..

যিনি এই কাজটি করেছেন তিনি হলেন জমিদার নবাব আলী আমজাদ খানের নাতি ও নবাব আলী হায়দার খানের পুত্র আলী সফদর খান। কুলাউড়ায় 'রাজা সাহেব' নামেই যাঁর ব্যাপক পরিচিতি। ১৯১৯ সালের ১৯ জুলাই মাতামহ মুর্শিদাবাদের নবাব ওয়াসেফ আলী মির্জার বাড়ি প্যালেস ওয়াসেফ মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন রাজা সাহেব। ছোট বেলায় বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় একবার বহিষ্কারও হয়েছিলেন স্কুল থেকে। কলকাতায় কমিউনিস্ট নেতা স্নেহাংশু আচার্যের সাথে পরিচয় হলে রাজা সাহেব তারই প্রভাবে আকৃষ্ট হয়ে সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতি করার। 

পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রার্থী তাঁর বাবা নবাব আলী হায়দার খান এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন থেকে বামপন্থী ও প্রগতিশীলদের আরো কাছে চলে যান রাজা সাহেব। সর্ম্পক বাড়তে থাকে কমিউনিস্টদের সাথেও। তারই সুবাদে ৫৭ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন তিনি। প্রাদেশিক কমিটির সদস্য ও সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে রাজা সাহেব ন্যাপ (ভাসানী) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, ১৯৬৬ সালে পৃথিমপাশায় অনুষ্ঠিত কৃষক সম্মেলনে জেলা কমিটির সভাপতি, ১৯৬৭ সালে লস্করপুরে অনুষ্ঠিত সমিতির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। 

নবাব আলী সফদর খান রাজা সাহেবের নেতৃত্ব ছিলো প্রতিটি কৃষক আন্দোলনেই। স্বাধীনতা যুদ্ধেও পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে প্রাণে বাঁচাতে জনতাকে সীমান্ত পার করে দিতে রাজা সাহেব বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন। রাজা সাহেব ১৯৭৪ সালে ১৬ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে লাল সালাম❤️

তথ্যসূত্রঃ সোনার মলাট- তাজুল মোহাম্মদ, বৃহত্তর সিলেটের আদিপর্ব- মাহবুব সিদ্দিকী

Post a Comment

Previous Post Next Post