এক তরুণের মানবিক উদ্যোগ


বিশেষ প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সরকারের নির্দেশনায় মানুষ ঘরবন্ধী হওয়ার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে দিনমজুর, সাধারণ মানুষ। কাজ-কর্ম না থাকায় অর্থের অভাবে যাতে কেউ না খেয়ে থাকে সেই লক্ষ্যে বিগত এক মাস থেকে নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে কুলাউড়ার তরুণ ছাত্রনেতা ফাহাদ চৌধুরী। তিনি প্রতিদিন ৮/১০ টি পরিবারের কাছে বিনা মূল্যে খাবার ফেরি করে যাচ্ছেন। বিগত একমাসে প্রায় ৩২০ পরিবারের মুখে বিনা মূল্যে খাবার ফেরি করে হাসি ফুটিয়েছেন।

করোনাভাইরাসের ছোবলে সারাবিশ্বের মানুষ দিশেহারা। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ লাশ হয়ে বিদায় নিচ্ছেন পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে।প্রতিটি জানপদের মানুষ এখন আতঙ্কগ্রস্ত।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।বন্ধ হয়েগেছে আয়ের পথ।বাংলাদেশে  লকডাউনের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষদেরকে অনাহারে, অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।মুখ ফুটে না বলা মধ্যবিত্তরাও ভালো নেই।এধরণের সংকটময় মুহূর্তে কিছু মানুষ তাদের মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে থাকেন।

তেমনি এক মানবিক তরুণ ফাহাদ মাহফুজ চৌধুরী।লকডাউনের শুরু থেকেই তার জন্মস্থান মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় অভাবগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে প্রতিদিনই সাধ্যমত চেষ্টা করছেন। অনেকটা নীরবে চলছে তার এই মানবিক কার্যক্রম।এপ্রিলের শুরুর দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে অভাবগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নিজের মোবাইল নাম্বার দিয়ে প্রয়োজনে যোগাযোগ করার আহবান জানিয়েছিলেন।

সাহায্য  গ্রহীতার পরিচয় গোপন রাখবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।অন্যদেরকে উৎসাহিত করতে কখনো দিনে কখনো রাতের বেলায় ছুটে চলার ছবি ফেইসবুকে প্রচার করলেও যাদেরকে সহায়তা করছেন তাদের পরিচয় গোপন রাখছেন।নিজের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও এই মহৎ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তার এক বন্ধু। পাশে থেকে সহযোগিতা করছেন তার বন্ধু নজরুল ইসলাম, হায়দার মোহাম্মদ শিমুল, ইমরান এবং খালতো ভাই শাহজাহান চৌধুরী রিপন।

প্রথমদিকে প্রতিদিন ৩০/৪০ টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিলেও এখন প্রতিদিন ৮-১০ টির বেশি দিতে পারছেন না।কুলাউড়া ছাড়াও সিলেট শহর, ছাতক এবং বিয়ানীবাজার থেকে কয়েকটি পরিবার যোগাযোগ করেছেন। তাদের কাছেও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন।খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল,ডাল,তেল,আলু,পেয়াজ, ছোলা, মশলা ইত্যাদি।এরই মধ্যে ৭ রমজানে কুলাউড়া চৌমুহনীতে দাঁড়িয়ে ফ্রি ইফতারি বিতরণ করেছেন।ভবিষ্যতে আরো বিতরণ করার পরিকল্পনা রয়েছ বলে জানান। তিনি জানান প্রতিবেশীরা যাতে ক্ষুধার্ত না থাকে এ উদ্দেশ্যেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ কতটুকু কষ্টে আছে তা উপলব্ধি করি যখন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো থেকে ফোন আসে।যারা তাকে সহযোগিতা করছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা।এতে মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ফাহাদ মাহফুজ চৌধুরী সিলেট  ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি পাশ করে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলএম পড়ছেন।বার কাউন্সিলের এবারের এমসিকিউ(MCQ) পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন।লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই আইন পেশায় যোগ দিবেন।আইন পেশায় গরীবদেরকে বিনামূল্যে সেবা দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তার।

Post a Comment

Previous Post Next Post