পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে শেরপুরে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা


বিশেষ প্রতিনিধিঃ এ অঞ্চলের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন বছর ঘুরে কখন মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হবে। তাই আগে থেকে প্রস্তুত থাকেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। মৌলভীবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জের সীমানা ঘেষে জেলার শেরপুর এলাকায় বসে প্রতি বছর মাছের মেলা। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মাছের মেলাটি শুরু হলে এটি এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া ৩ দিন ব্যাপী এই মেলা শেষ হবে বুধবার দূপুরে।

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী ৩ দিন ব্যাপী মাছের মেলা প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পাড়ে শুরু হয়েছে। প্রচন্ড শীতে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেও মেলা জুড়ে ছিল ক্রেতা বিক্রেতা আর কৌতুহলী মানুষের ঢল। প্রায় দুইশত বছর পূর্ব থেকে চলে আসা মেলায় হাওর ও নদীতে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা দেশীয় প্রজাতির টাটকা মাছ কিনতে ক্রেতারা ও পাইকাররা ভীড় জমান। মেলায় আগের মত নেই জুয়া ও যাত্রার নামে অশ্লীলতা। গেল ক’বছর থেকে প্রশাসন স্থানীয়দের অনুরোধে তা বন্ধ করে দিয়েছে। মেলায় এক সাথে বড় আকারের এত মাছ দেখে নতুন আগুন্তুক অনেকেই আশ্চর্য হন। তাই মাছ কিনতে ও দেখতে উৎসুক মানুষের ভীড় ও বাড়তি কৌতুহল নিবারণে তারা পুরো মাছের মেলা ঘুরে দেখেন।

মৌলভীবাজারের শেরপুরের মাছের মেলা ঘুরে দেখা গেল একটি কাতলা মাছের দাম হাকা হয়েছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার, আইড় মাছের দাম হাঁকা হয় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার। বোয়াল মাছের দাম ১ লক্ষ ১০ হাজার। আর একটি আড়ই মাছ বিক্রি হয়েছে ৭৫ হাজার টাকায়।

মেলায় আগত ক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, হাওর ও নদীতে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা দেশীয় প্রজাতির ফরমালিন মুক্ত টাটকা মাছ কিনতে আসেন। মাছের মেলা উপলক্ষে অনেকেই নিজ এলাকায় আসেন পরিবার পরিজন নিয়ে মাছ কিনতে। মেলা উপলক্ষে অনেক প্রবাসী দেশে আসেন। তাছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের আত্নীয় স্বজনরাও আসেন বাড়িতে নানা জাতের মাছের স্বাদ নিতে। একই মন্তব্য জানালেন যুক্তরাজ্য প্রবাসি মুহিবুর রহমান।

মাছ ব্যবসায়ী আমীর আলী ও রমিজ উদ্দিন জানান ঐতিহ্য ধরে রাখতে বছর জুড়ে নানা কষ্ঠেতারা মাছ সংগ্রহে রাখেন। হাওর ও নদীতে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা মাছ সাধারণত নিয়ে আসেন এই মেলায়। তারা জানালেন মেলায় স্থানীয় হাওর ও নদীর অনেক বড় বড় জীবিত মাছ ও ফরমালিন মুক্ত নিয়ে আসেন। পরিপক্ষ এ মাছ গুলো খেতেও সুস্বাদু। তবে এ বছর মেলা উপলক্ষে মাছের সংগ্রহ বেশি থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি অনেকটা কম।

ব্যবসায়ীরা মেলায় পার্শবর্তী কুশিয়ারা নদী, হাকালুকি হাওর, কাওয়াদিঘি হাওর, হাইল হাওর ও সুনামগঞ্জের টাঙুগুয়ার হাওর সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা রুই, কাতলা, বোয়াল, গজার, বাঘাইড় ও আইড় মাছ সহ বিশাল আকৃতির মাছ নিয়ে আসেন মোলায়।

মাছের মেলা অয়োজক কমিমিটি সভাপতি মোঃ আশরাফ আলী খান জানান গত ৫ বছর ধরে জুয়া সহ যাত্রা ও পুতুল নাচের নামে অশ্লিলতা বন্ধ হয়ে শুধু মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিয্য ফিরে পেয়েছে। এছাড়াও প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব সরকারকে তারা দিলেও মেলার জন্য এখনও স্থায়ী কোন স্থান গড়ে উঠেনি। তিনি সরকারের দায়িত্বশীলদের কাছে ঐতিয্যবাহী এ মাছের মেলা ঠিকিয়ে রাখতে স্থায়ী ভাবে একটি স্থান নির্দ্দরণের দাবী করেন।

যদিও এটি মাছের মেলা নামে পরিচিত তথাপি মাছ ছাড়াও ফার্নিচার, গৃহস্থালী সামগ্রী, খেলনা ইমিটেশন,কাপড়, জুতা, সহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের দোকান স্থান পায়। বর্তমানে এই মাছের মেলা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মিলনমেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ ছাড়াও বাদ যায়নি মুড়ি মুড়কি আর মন্ডা মিঠাইসহ কতকি মুখরোচক খাবার দাবারে আয়োজন।

Post a Comment

Previous Post Next Post