কুলাউড়াকে পর্যটন জেলা ঘোষণার দাবিতে মতবিনিময়


বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলাকে দেশের ৬৫তম জেলা ও পর্যটন জেলা ঘোষণার দাবি ক্রমশই জোরাল হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখাসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে কুলাউড়াকে পর্যটন জেলার দাবি তুলেছেন উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, এক সময়ের প্রতিভাবান সাংবাদিক আব্দুল বাছিত বাচ্চু।

এ উপলক্ষে মঙ্গলবার রাত ৮টায় কুলাউড়ার একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে পর্যটন জেলা ঘোষণার দাবির যৌক্তিকথা নিয়ে মতবিনিময় করেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু। মতবিনিময় সভায় অংশ নেন কুলাউড়ায় কর্মরত ৩৫ জন গণমাধ্যমকর্মী।

মতবিনিময় সভায় আব্দুল বাছিত বাচ্চু জানান, গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময়ের আগে এই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে একটি খোলা চিঠি লিখেন। সেখানে তিনি দেশের অনেক ছোট জেলার উদাহরণ টেনে নতুন জেলার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। প্রস্তাবিত জেলায় ৪ উপজেলা, ৩ পৌরসভা, ৩৮টি ইউনিয়ন, ১০টি ছোট বড় নদ-নদী, অর্ধশতাধিক চা বাগান।

কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নকে দুটি উপজেলা করা যেতে পারে। এতে ৪টির স্থলে ৫টি উপজেলা নিয়ে হতে পারে প্রস্তাবিত জেলা। আবার কমলগঞ্জকে বাদ দিয়েও ৪টি উপজেলা নিয়ে পর্যটন জেলা হওয়া সম্ভব। প্রস্তাবিত এই জেলার জনসংখ্যা হবে প্রায় ১১ লাখ আর জেলার আয়তন হবে ১৬৪৩ দশমিক ৯৭ বর্গকিলোমিটার। তিনটি সংসদীয় আসন (বড়লেখা-জুড়ী, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ) হবে নতুন এই জেলায়। আর নতুন এই জেলা হলে পর্যটকদের যেমন আকর্ষণ আর এ খাতের আয় বাড়বে ঠিক তেমনি অবহেলিত পূর্বাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন আর পরিবর্তন হবে। দেশে-বিদেশে থাকা দেশের পূর্বাঞ্চলের অনেক বিশিষ্টজন এ বিষয়ে সহমত পোষণ করছেন।

চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু আরো জানান, পর্যটকদের জন্য যেমন আকর্ষণীয় স্পট দরকার হয়, ঠিক তেমনি প্রয়োজন হয় সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, মানসম্মত খাবার ও আবাসিক ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা আর গাইডলাইন। কুলাউড়াকে যদি পর্যটন জেলা করা হয়, তাহলে পর্যটকরা এই জেলায় এসে যেসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করবে সেই তালিকায় রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি হাওর, মাধবকুন্ড ও হাম হাম জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, শমসের নগর বিমান ঘাটি, অসংখ্য চাবাগান, খাসিয়া পল্লী, দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা, চাতলাপুর স্থলবন্দর, মুড়াই ছড়া ইকোপার্ক, নদী ছড়া সবই দেশের পূর্বাঞ্চলের কুলাউড়া, জুড়ি, বড়লেখা ও কমলগঞ্জে অবস্থিত। তাছাড়া খাসিয়া, গারো, মুনিপুরি, শাওতাল, চা শ্রমিক হিন্দু মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস। তাই এই এলাকার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলা নিয়ে আরো একটি পৃথক জেলা তথা দেশের ৬৫তম জেলা করা হলে পর্যটন খাতের অভাবনীয় সাফল্য আসবে।

এখানকার মানুষের মতে, যোগাযোগ ও মধ্যবর্তী অবস্থান বিবেচনা করে প্রস্তাবিত জেলার হেডকোয়ার্টার হতে পারে কুলাউড়ায়। এতে পর্যটকদের যাতায়াত ব্যয় কমে যাবে অর্ধেক। দেশের যেকোনো এলাকা থেকে হেলিকপ্টার, বিমান, ট্রেনে অথবা সড়ক পথে এখানে আসতে পারবেন পর্যটকরা। আর জেলা সদর হলে এই এলাকার নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ভৌত অবকাঠামো গড়ে উঠবে। ফলে পর্যটকদের আবাসিক সমস্যারও সমাধান হবে।

প্রস্তাবিত জেলার আয়তন আর জনসংখ্যা দেশের অনেক জেলার চেয়ে বেশি হবে। যেমন দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের আয়তন ১৪০৪ দশমিক ৩৩ বর্গকিলোমিটার, রাজবাড়ীর আয়তন ১০৯২ দশমিক ৩০ বর্গকিলোমিটার, দক্ষিণ পশ্চিমের মাগুরার আয়তন ১০৪৯ বর্গকিলোমিটার, চুয়াডাঙ্গার ১১৭০ দশমিক ৮৭ বর্গকিলোমিটার আর মধ্যাঞ্চলের নারায়ণগঞ্জ জেলার আয়তন মাত্র ৬৮৩ দশমিক ১৭ বর্গকিলোমিটার। এই সবকটির আয়তন প্রস্তাবিত পর্যটন জেলার চেয়ে অনেক কম। এমনি অনেক জেলায় সংসদীয় আসন মাত্র ২টি করে। আর পার্বত্য অঞ্চলে তো একেক জেলায় মাত্র একটি করে সংসদীয় আসন।

এ সময় একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি সুশীল সেন গুপ্ত, জেলা সাংবাদিক ফোরামের সহ-সভাপতি ও নিউনেশন প্রতিনিধি এম. মছব্বির আলী, কুলাউড়া সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মোক্তাদির হোসেন, ইনকিলাব প্রতিনিধি মো. মানজুরুল হক, ডেইলী স্টারের সাংবাদিক মিন্টু দেশোয়ারা, কেবিসি নিউজের বার্তা প্রধান আতিকুর রহমান আখই, কুলাউড়া সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল ইসলাম, রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার ধর, মানবজমিন প্রতিনিধি আলাউদ্দিন কবির, কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি মাহফুজ শাকিলসহ আরো অনেকে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post