পরাক্রমশালী শাসক মুসা খানের মাজারটি অরক্ষিত


জুলিয়াস সিজার তালুকদারঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র একটি বিদ্যাপীঠ নয়, ইতিহাসের একটি জীবন্ত জাদুঘর; বহু ইতিহাস সৃষ্টির আতুরঘরও। এই ভূমির রয়েছে অত্যন্ত শক্তিশালী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস। সেসব ইতিহাসের দলিল বা স্মৃতিচিহ্ন হয়ে অস্তিত্ত্বের জানান দিচ্ছে বহু স্থাপনা। 

অনেক স্থাপনার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক স্মৃতি বহনকারী স্মৃতি স্মারক 'মুসা খানের মাজার'৷ মাজারটির অবস্থান কার্জন হলের পশ্চিম ও লিটন হলের উত্তরপাশের একটি জায়গায়। মূসা খানের একাধিক পরিচয় রয়েছে, নানা কারণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর অন্যতম পরিচয়- তিনি হলের মহাপরাক্রমশালী শাসক, বারভূঁইয়া খ্যাত বাঙল অঞ্চলের জমিদার শ্রেণীর সর্দার ও মোঘল শাসক সম্রাট আকবরের আনুগত্য অস্বীকারকারী ভূবনখ্যাত ঈশা খাঁর পুত্র। আকবরের শাসন বলয়ের বাহিরে ঈশা খাঁ নিজ শাসন স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে দীর্ঘকাল বাঙলা শাসন করেন। তাঁর মৃত্যুর পরেই মূলত মূসা খান বাঙলার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন৷ তিনিও বারভূঁইয়াদের সর্দার ছিলেন। পিতার মতো তিনি বাঙলার স্বাধীন শাসকরুপে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। 

১৫৯৯ সাল থেকে ১৬১১ সাল পর্যন্ত, এক যুগ সময় ধরে তিনি দিল্লীর প্রভাব বলয়মুক্ত স্বাধীন বাঙলা শাসনে বারভূঁইয়াদের নেতৃত্বদান করেন৷ এক পর্যায়ে মোঘল সুবাদার ইসলাম খানের সাথে তাঁর সন্ধির কথা থাকলে যথার্থ সম্মান না পাওয়ায় তিনি সন্ধি স্থাপন না করে বিদ্রোহী শাসক হিসেবেই অস্তিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেন। তবে মোঘল আগ্রাসন তাকে পরবর্তীতে সন্ধি স্থাপনে বাধ্য করে। সন্ধি স্থাপনের পর ১৬১১ সাল হতে তাকে বাগ-ই-মুসা খান নামক বাংলো বাড়িতে নজরদারীর মধ্যে থাকতে দেয়া হয় এবং তাঁর ভাইয়েরা নিজ নিজ জমিদারি ফেরত পান। তিনি এই সময়ে তাঁর ফৌজ মোঘলদের ব্যবহার করতে দিতেন। মোঘল সুবাদার ইব্রাহীম খান ফতেহ জং ১৬১৭ সালে মুসা খানের উপর থেকে নজরদারী প্রত্যাহার করেন। 

১৬১৬ সালে তিনি পার্বত্য ত্রিপুরা অভিযান করেন এবং রাজা যশোমানিক্যকে পরাজিত ও বন্ধি করেন। ১৬২০ সালে তিনি মগদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম অভিযানে নেতৃত্ব দেন। 

১৬২৩ সালে তিনি অসুস্থতা জনিত কারণে পরলোক গমন করলে বাগ-ই-মুসা খানেই তাকে সমাহিত করা হয়। অর্থাৎ, বর্তমান কার্জন হল, লিটন হল এলাকাই ছিল তাঁর বাগ-ই-মুসা খান। 

তাঁর মাজারটি মাজার স্থাপত্যের এক বিশেষ নিদর্শন ছিল। কারুকাজখচিত মাজারটি স্বাধীনতার আগেও স্বীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছিল কিন্তু আজ মাজারটি একটি নর্দমা। কোন নাম ফলক পর্যন্ত নেই। অযত্ন ও অবহেলায় মাজারটির এই জীর্ণ দশা৷ প্রতিবেশি ভারতের স্থাপত্য সংরক্ষণ ও ইতিহাস নির্ভর সিনেমা নির্মান জাতিগত গৌরব তুলে ধরার অনন্য উদাহরণ। আমরা পদদলিত করছি এই মাটির এক বীর সন্তানকে ; ইতিহাস পাঠে তো বাঙালির মনোযোগ বরাবরই অনুপস্থিত৷ 

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই সমাধি সংরক্ষণ, নামফলক স্থাপন ও ইতিহাস বর্ণিত সাইনবোর্ড স্থাপনের বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদেরকে আমাদের ইতিহাস জানতে হবে।

লেখনঃ জুলিয়াস সিজার তালুকদার, জি এস , এস এম হল ছাত্র সংসদ। ঢাবি। 

Post a Comment

Previous Post Next Post