বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস; নির্মূল করাই চ্যালেঞ্জ


অনলাইন ডেস্কঃ সুদীর্ঘকাল ধরে যক্ষ্মা বিশ্বব্যাপী অন্যতম প্রধান সংক্রামক রোগের স্থান দখল করে রেখেছে। এ রোগে বিশ্বে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। বিশেষ করে দরিদ্র এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোতে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।

২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা একটি কর্মকৌশল (এন্ড টিবি) ঘোষণা করেছে। তবে নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূল করার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। আজ রোববার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এ উপলক্ষে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে নানা তথ্য জানানো হয়।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৫ সালে যক্ষ্মাকে মহামারি হিসেবে উল্লেখ করে নির্মূলের লক্ষ্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য কর্মকৌশল অনুমোদন করে। উচ্চাভিলাষী সেই কর্মকৌশল অনুযায়ী ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৯৩ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যক্ষ্মাকে গ্লোবাল এমার্জেন্সি ঘোষণা করা হয়। সংস্থার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা রোগী সর্বাধিক, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। যক্ষ্মা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য হলেও এটি একটি বায়ুবাহিত রোগ।
এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রত নগরায়ন, অপুষ্টি, দারিদ্র্য প্রভৃতি কারণে এটি বিস্তারের আশঙ্কা অনেক বেশি। দেশে দীর্ঘদিন ধরে রোগটির বিস্তার ঘটায় এবং রোগ জীবাণু মানবদেহে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সুপ্ত থাকায় নির্ধারিত সময়ে দেশে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হতে পারে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বে ১০ দশমিক চার মিলিয়ন লোক নতুনভাবে যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয় এবং এক দশমিক তিন মিলিয়ন লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটে উন্নয়নশীল দেশে। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে কর্মক্ষম নারী ও পুরুষই বেশি। বিশ্বে মানুষ হত্যাকারী সংক্রামক রোগের মধ্যে যক্ষ্মাকে শীর্ষ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। তাদের দাবি, এ রোগে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার ৫শ’ জন প্রাণ হারায়।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখে ২২১ জন নতুন করে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৩৬ জন মারা যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে দুই লাখ ৬৭ হাজার ২৭৬ জন যক্ষ্মারোগী আছে। এর মধ্যে শিশু যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ৩৫২ জন। ২০১৮ সালে যক্ষ্মা বিষয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের ‘আন্ডার টু অ্যান্ড টিউবারক্লোসিস : এন আরজেন্ট গ্লোবাল রিসপন্স এপিডেমিক’ শীর্ষক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যক্ষ্মা নির্মূলে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অঙ্গীকারবদ্ধ হন। সেই বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার ২০২২ সালের মধ্যে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার রোগীকে শনাক্ত এবং চিকিৎসার আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। এর মধ্যে এক লাখ ১০ হাজার শিশু এবং ১৭ হাজার ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মারোগী অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া ৯ লাখ ৬৯ হাজার রোগীকে এ সময়ে যক্ষ্মা প্রতিরোধের আওতায় আনার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমবিডিসি) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে দেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূল করা চ্যালেঞ্জ হলেও অসম্ভব নয়। আমি মনে করি, নির্ধারিত সময়েই আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব। কেননা প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার ১৯৩টি জিন এক্সপার্ট মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মাসহ সব ধরনের যক্ষ্মারোগী শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া কর্মসূচি সমন্বয়, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার অংশীদারিত্বে গৃহীত কর্মসূচি সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ কারণে মনে করি, নির্ধারিত সময়ে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনও সক্ষম হব।

আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস:
যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বলা হয়, যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে সরকার যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশ ও প্রকোপের হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায়। এ লক্ষ্যে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে ব্র্যাকসহ ২৫টি বেসরকারি সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ চেস্ট অ্যান্ড হার্ট অ্যাসোসিয়েশন মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী ইনোগ্রাল সেশন এবং সায়েন্টিফিক সেমিনারের আয়োজন করে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ইটস টাইম’।

Post a Comment

Previous Post Next Post