রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্ব নেতাদের শোক নিন্দা


অনলাইন ডেস্কঃ নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারা। এছাড়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও এমন বর্বর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানানো হয়।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এক শোক বার্তায় বলেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। আমরা এর নিন্দা জানাই। রাষ্ট্রপতি এ ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

শোক-বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদের হুমকি নির্মূলে নিউজিল্যান্ডসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা ও কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখবে।

হামলায় প্রায় অর্ধশত প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে এ হামলাকে ‘নৃশংসতার অসুস্থ চর্চা’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি হতাহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ হামলা বিশ্বজুড়ে ‘চরমপন্থা ও ইসলামের প্রতি’ বাড়তে থাকা ভীতির সর্বশেষ উদাহরণ। বিশ্বে মুসলমানরাই গণহত্যার শিকার হচ্ছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শোক প্রকাশ করে টুইটারে লেখেন, মসজিদে ভয়াবহ গণহত্যার পর আমার উষ্ণ সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা রইল নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের জন্য। যে কোনো সহায়তার জন্য আমরা নিউজিল্যান্ডের পাশে রয়েছি।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, পরিবারের সদস্য হিসেবে নিউজিল্যান্ডবাসী ভাই-বোনদের জন্য আমরা শোকাহত। আমরা এখানে দাঁড়িয়ে তাদের সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আজ একজন চরম ডানপন্থী নৃশংস সন্ত্রাসী যে হামলা চালিয়েছে তার নিন্দা জানাচ্ছি।

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেনো মারসুদি নিন্দা জানিয়ে বলেন, বিশেষ করে প্রার্থনার স্থান, যেখানে জুমার নামাজ চলছিল সেখানে হামলার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছি।

ফিজির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিমারামা বলেন, নিউজিল্যান্ডে আমাদের ভাই-বোনদের শোকে ফিজির জনগণের হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। এ হামলায় হতাহতদের মধ্যে ফিজির একাধিক নাগরিক রয়েছেন বলে জানা গেছে।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের দুই নাগরিক আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে বলেছে, এটা সাধারণ মানুষের ওপর নির্বোধের মতো হামলা। আশা করি বর্বর এ হামলার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার হবে।

ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, অর্থহীন সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় তিনি গভীরভাবে শোকাহত। ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এ ঘটনায় নিন্দা ও গভীর শোক জানিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও নিন্দা ও শোক প্রকাশ করেছেন।

এদিকে নিজেদের সন্ত্রাসমুক্ত বলে দাবি করা নিউজিল্যান্ডে এমন হামলা অনেক দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসমুক্ত দাবি করা দেশগুলোতেও মাঝে মধ্যে এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার দুপুরে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের ভিআইপ লাউঞ্জে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

ক্রিকেটারদের কম নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এমনটি জানা নেই। তবে আমাদের দেশে আমরা ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। গত দুই তিন বছরে আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। অবশ্য বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিতে হচ্ছে। তবে আমাদের ক্রিকেটাররা ভালো আছেন। বর্তমানে নিউজিল্যান্ডের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিচ্ছে।

ঘটনার পর সেখানে অবস্থানরত জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যসহ অন্য বাংলাদেশিদের সার্বিক সহযোগিতা করছে নিউজিল্যান্ড সরকার। নিজের ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ডেপুটি হাইকমিশনার তারেক ক্রিকেট টিমের সঙ্গে রয়েছেন। সেখানকার পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে হাইকমিশনার কথা বলেছেন। নিউজিল্যান্ড আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে এবং সবকিছু করবে। বিসিবির অনুরোধে আমরা বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছি।

হামলায় হতাহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও শোক জানিয়েছে ১৪ দল। শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে ১৪ দলের পক্ষ থেকে এ নিন্দা ও শোক প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম।

এদিকে গুলিতে বহু মানুষের হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনায় অল্পের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা রক্ষা পাওয়ায় মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করেছে দলটি। সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ শুকরিয়া আদায় করেন।

হতাহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও শোক জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী, জাতীয় পার্টি জেপির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসনে মঞ্জু এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম।

Post a Comment

Previous Post Next Post