ঢাকার পাশে হচ্ছে আটটি স্যাটেলাইট সিটি


অনলাইন ডেস্কঃ জনসংখ্যার চাপ কমাতে রাজধানী ঢাকার আশপাশে আটটি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। একই সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের হাত উঁচু-নিচু করে নয়, সিগন্যাল বাতির মাধ্যমে ঢাকা শহরে ঢাকা চলাচল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শিগগিরই চালু হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জঙ্গিবাদের মতো মাদক নির্মূলেও সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মাদকমুক্ত দেশ ও সমাজ গড়তে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যেসব মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা সরকার করছে। একই সঙ্গে মাদকবিরোধী অভিযান চলমান থাকবে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে শেখ হাসিনা  বলেন, ‘রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য, নিজের জন্য নয়। কাজেই মানুষের সমস্যা জানার ও সমাধানের চেষ্টা করি। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এটাই আমার কর্তব্য বলে মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা ভোগ করার বিষয় নয়, জনসেবার বিষয়। সে জন্যই বাংলাদেশের মানুষের কিভাবে কল্যাণ করতে পারি, সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।’

হচ্ছে আটটি স্যাটেলাইট সিটি : সরকারি দলের সদস্য বেনজীর আহমদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যার চাপ কমানোর জন্য এর আগে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় চারটি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের লক্ষ্যে পিপিপি পদ্ধতিতে প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—বংশী-ধামরাই স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন, ধলেশ্বরী-সিঙ্গাইর স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন, ইছামতি-সিরাজদিখান স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন ও সাভার স্যাটেলাইট টাউনে হাইরাইজ অ্যাপার্টমেন্ট। প্রকল্পগুলো পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় আটটি স্যাটেলাইট সিটি বিশেষ করে ঢাকার উত্তরে ও দক্ষিণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) দুটি এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ঢাকার পশ্চিমে ও দক্ষিণে দুটি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো হচ্ছে—কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন প্রকল্প, বন্যা প্রবাহ এলাকা, জলাশয় সংরক্ষণ ও কমপ্যাক্ট টাউনশিপ কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন প্রকল্প, ঢাকা দক্ষিণে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প ও ঢাকার পশ্চিমে সাভার উপজেলায় আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প।

ঢাকায় গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু : জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকার যানজট নিরসনে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে বিআরটিসিসহ গণপরিবহন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ বিআরটিসি লাভজনক নয়। আমরা ক্ষমতায় এসে আবার বিআরটিসিকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিই।’

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ‘যাঁরা সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করেন তাঁদের বলব, বেশি সময় যেন ট্রাফিক আটকে রাখা না হয়। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু হলে দুর্ভোগ কিছু কমবে। শিগগিরই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করে অটোমেটিক এবং রিমোট কন্ট্রোলের সমন্ব্বয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট অনুযায়ী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শুরু করা হবে।’

যানজট নিরসন : রাজধানীর যানজট নিরসনে পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী মহানগরীর সঙ্গে দ্রুত গতির আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণ, গাবতলী থেকে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-২ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ঢাকা শহরের চারদিকে দুটি রিং রোড (ইনার ও মিডল) নির্মাণ, পিপিপি ভিত্তিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, যান্ত্রিক কার পার্কিং সিস্টেম চালুকরণ, পথচারীবান্ধব সড়ক ও ফুটপাত উন্নয়ন, আমিনবাজার থেকে গাবতলী-রাসেল স্কয়ার-নিউ মার্কেট হয়ে পলাশী/আজিমপুর পর্যন্ত মিরপুর রোডে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে এলিভেটেড বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে। তিনি জানান, যানজট কমাতে তিনি তাঁর বহরে ৫২টি গাড়ির বদলে আটটি গাড়ি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

ঢাকার শহরের চারদিকে বৃত্তাকার রেলপথ : দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে গত ১০ বছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হলে শিগগিরই ঢাকা মহানগরীকে যানজটমুক্ত করা হবে আশা করা যায়। আগামী দিনের পরিকল্পনার মধ্যে ঢাকা শহরের চারদিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পও রয়েছে।

আত্মসমর্পণ করা মাদক ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে : জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যাদের আত্মসমর্পণ করাচ্ছে, তাদের চিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মাদক থেকে দূরে রাখার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা আত্মসমর্পণ করছে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা অন্য কোনো ব্যবসায় নিয়োজিত হয়ে ভালোভাবে চলতে পারে। এভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, যেখানে মাদক চোলাচালান হয়, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও চোরাচালান বন্ধে সরকার পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী মাদক পরিবহন ও চোরাচালানের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) বিধান রাখা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

জঙ্গিবাদ নির্মূলেও জিরো টলারেন্স : গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। জঙ্গিবাদ নির্মূলসংক্রান্ত বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা : মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে দেশের সব গ্রামকে শহরের সুযোগ-সুবিধা দিতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য এসেছে। কৃষিজ ও অকৃষিজ উভয় ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ড বহুগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে। ফলে গ্রামীণ পরিবারের আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অকৃষি খাতের অবদান বেড়ে চলেছে। - কালেরকন্ঠ

Post a Comment

Previous Post Next Post