প্রাবাসে নিজ প্রতিবেশীর লাশ আটকে রেখে টাকা দাবি!

৩৯ দিন পর লাশ ফিরল দেশে
বিশেষ প্রতিনিধিঃ প্রাবাসে নিজ প্রতিবেশীর লাশ আটকে রেখে দেশে স্বজনদের কাছে টাকা দাবি করলেন আরেক প্রবাসী। বিষয়টি চাউর হলে পরবর্তীতে নিজের প্রতারণার দায় স্বীকার করে মুচলেকা দিয়েছেন টাকা দাবীকারী ময়না মিয়া। অবশেষে  প্রবাসে মৃতু্র ৩৯ দিন পর আবদুল আজিজের লাশ ফিরল দেশে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে সমালোচনার ঝড়।

জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পাট্রাই গ্রামের আবদুল আজিজ (৫০) নামের এক বাংলাদেশি শ্রমিক গত বছরের (২০১৮) ২ ডিসেম্বর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজার একটি হাসপাতালে মারা যান। এ সময় একই গ্রামের ময়না মিয়া (৪০) নামের আরেক বাংলাদেশি নানা কৌশলে তাঁর (আজিজের প্রতিবেশী) লাশ আটকে রাখেন। একপর্যায়ে ময়না লাশ দেশে পাঠানোর কথা বলে আজিজের স্বজনদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শারজায় বসবাসকারী বাংলাদেশি ও দুবাই কনসাল জেনারেলের উদ্যোগে ৩৯ দিন পর গত বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) আজিজের লাশ দেশে পাঠানো হয়। ময়নার বাড়িও একই এলাকায়। তিনি প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে লিখিত মুচলেকা দিয়েছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আজিজ ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে শারজায় ছিলেন। ২ ডিসেম্বর ময়না স্বজনদের মোবাইলে তাঁর মৃত্যু সংবাদটি জানান। পরে ময়না আবারও ফোনে বলেন, অজিজের লাশ দেশে পাঠানোর ব্যাপারে তিনি চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছেন। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ পড়বে। ওই টাকা না দিলে লাশ পাঠানো সম্ভব হবে না। তিনি স্বজনদের কাছে ওই টাকার ব্যবস্থা করে রাখতে বলেন। এ অবস্থায় তাঁরা উৎকণ্ঠায় পড়ে যান। স্বজনেরা বিভিন্নভাবে শারজায় বসবাসকারী কয়েক জন বাংলাদেশির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাঁদের পরামর্শে  দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলের কাছে লিখিত আবেদন পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ জানুয়ারি (২০১৯) কনসাল জেনারেল ইকবাল হোসেন খাঁন ময়নাকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে আনেন। এ সময় বাংলাদেশি বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠনের কয়েক জন নেতাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে ময়না প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি লিখিত মুচলেকা দেন। পরে কনসাল জেনারেলের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বিমানে আজিজের লাশ দেশে পাঠানো হয়। প্রতারণার বিষয়ে ময়নার দেওয়া লিখিত মুচলেকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।

কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক বলেন, ‘আজিজ ও ময়নার বাড়ি পাশাপাশি। ময়নার এ আচরণে আমরা খুবই ব্যথিত হয়েছি। এ কাজটা তাঁর মোটেই সমীচীন হয়নি। ময়নার মতো লোকেরাই বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেন। কনসাল জেনারেল উদ্যোগ না নিলে লাশ আসতে হয়তো আরও বিলম্ব হতো। জানাজা শেষে শুক্রবার সকালে আজিজের লাশ স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়ে গেছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post