কুলাউড়ায় এখনো নৌকার আশাবাদী এমপি আব্দুল মতিন


স্টাফ রিপোর্টারঃ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনে আওয়ামীলীগ দলীয় কোন প্রার্থীকে নৌকার মনোনয়ন না দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমাদানকারী বর্তমান এমপি ও কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন এমপি এখনো এই আসনে আওয়ামীলীগের জয়লাভের জন্য নৌকার দাবি জানিয়েছেন। কুলাউড়ায় মহাজোট থেকে এখনো কোন প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে নৌকা প্রতীক না দেয়ায় তৃণমূলের চাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মতিন গণমাধ্যমে এক লিখিত বিবৃতিতে জানান, “একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুলাউড়া আসনে যেহেতু আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে এখন কোন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়নি, তাই আমি এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। আমি সংগঠনের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি ব্যতীত যদি অন্য কাউকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয় তাহলে আমি আমার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নৌকার পক্ষে কাজ করব। আমাদের মূল লক্ষ্যে হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হওয়া এবং জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী করে দেশকে উন্নয়নের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো”।

জানা যায়, বর্তমান এমপি আব্দুল মতিন পঞ্চাশ বছর ধরে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পঞ্চাশ বছরের এ পথচেলায় বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কঠিন পথও অতিক্রম করে তিনি বার বার জনপ্রতিনিধি হয়েছেন মানুষের ভালোবাসায়। কুলাউড়ায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করা এমন জনপ্রতিনিধি আর কেউ নেই। বার বার ভোটের মাঠে কৌশলে জয়ী হয়ে নীরবে চমক দেখিয়েছেন এ জনপ্রতিনিধি। এমপি মতিন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ফিল্ড কমান্ডার হিসেবে ইকো সেক্টর-৪ থেকে বিহার চাকুলিয়া ক্যান্টেনম্যান্টে ট্রেইনিং গ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭২-১৯৭৫ সালে শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শ্রমিকলীগের নেতা হিসেবে অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের জন্য ৩মাস রাশিয়া সফর করেন। ১৯৯৮-২০০৩ সাল পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা কৃষকলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সাল থেকে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে ২০০৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় দায়িত্বভার ছাড়লেও পরবর্তীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি হবার তিনবছর পর পুনরায় সভাপতির পদ গ্রহণ ও দলীয় এমপি হিসেবে পার্লামেন্টে স্বীকৃতি পান। তিনি ১৯৭৩ সালে ১ম বারের মত জয়চন্ডী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, পরবর্তীতে তিনি ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে তিনবার চেয়ারম্যান দায়িত্বপালন এবং ১৯৮৫ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৫- ১৯৯০ পর্যন্ত পাঁচ বছর উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালে আবারও জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বারের মত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন কালীন সময়ে ২০১৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে চমক দেখান। এমপি হিসেবে দায়িত্বপালন কালে কুলাউড়ার সংসদীয় আসনে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ৩৭টি উদ্ধমুখী ও ৪তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প, দুটি সরকারি এ্যাম্বুলেস, রাজাপুর সেতুর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন, কুলাউড়া-পৃথিমপাশা, হাজিপুর, শরীফপুর, চাতলা স্থল বন্দর ভায়া টিলাগাঁও সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, ব্রাহ্মণবাজার-শমসেরনগর সড়ক, ব্রাহ্মণবাজার-ভাটেরা সড়ক, লস্করপুর-রাঙ্গিছড়া সড়ক, কুলাউড়া-ভূকশিমইল সড়ক, কুলাউড়া-চান্দগ্রাম সড়ক, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সংস্কার কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনসহ গ্রামীন অবকাটামো উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া কুলাউড়া সরকারি কলেজ ও নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সরকারি করণ হয়েছে। কুলাউড়া স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, ডিজিটাল ডিসপ্লে উদ্দীপন, আধুনিক জনমিলন কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন, মুক্তিযোদ্ধা ছগির আলীর কবর সংরক্ষণ, বধ্যভূমি চিহ্নিত করণ, গোগালী ছড়া, পলকী ছড়া, আল ফানাই ছড়া খনন করা হয়েছে। কুলাউড়ায় বিদ্যুতের সাব-স্টেশন নির্মাণসহ শতকরা ৯৫ ভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। কুলাউড়ায় বিভিন্ন ধমীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মন্দির ও ঈদগাহে বিশেষ বরাদ্দ ১কোটি ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। উপজেলার অর্ধ শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।

আব্দুল মতিন বলেন, আমার সময়কালে যা উন্নয়ন হয়েছে, তা জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান। আমি একজন প্রতিনিধি মাত্র। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি কুলাউড়াবাসীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। মানুষের আন্তরিক ভালোবাসায় আমি একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছি। এটা আমার পরম পাওয়া। যদি আবারো সুযোগ পাই তাহলে আমৃত্যু মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবো।

উল্লেখ্য, আব্দুল মতিন কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের মৃত মোঃ আব্দুল মজিদ ও মৃত মন্তরিমা বিবির পুত্র। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি স্ত্রী ছাড়াও এক কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। শিক্ষাজীবনে তিনি সিলেট মদনমোহন কলেজ থেকে বি.এ এপিয়ার্ড ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৬-১৯৬৮ সালে সিলেট মদনমোহন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি ১৯৬৩-১৯৬৪ সাল পর্যন্ত উপজেলার হিংগাজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই বছর ইংরেজী বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post