মধ্যরাতে হোটেল লবিতে যা বলেছিলেন সাকিব


স্পোর্টস ডেস্কঃ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় স্টেডিয়াম সরগরম হলেও বিজয়ের মুকুটসহ হোটেলে ফেরার সময় মধ্যরাতে জড়ো হওয়া ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশিদের মধ্যে সে প্রসঙ্গের অবতারণা একবারের জন্যেও ঘটেনি। সকলেই ‘থ্যাঙ্ক ইউ সাকিব, থ্যাঙ্ক ইউ তামিম, মুশফিক, ইত্যাদি নাম উচ্চারণ করে টাইগারদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান। 

এসময় দু'গালে বাংলাদেশের পতাকা খচিত একদল তরুনীকে ‘জয় বাংলা’ বলতে শোনা যায়। এছাড়া হোটেল লবি থেকে নিরাপত্তা বেষ্টিতভাবে সাকিবসহ অন্য খেলোয়াড়রা যখন লিফটে উঠছিলেন তখনও এক ভক্ত সাকিবের কাছে অটোগ্রাফ চেয়েছিলেন। ‘আমি এখন টায়ার্ড’-এ কথা বলে লিফটের দিকে যান সাকিব। তখন সেই ভক্ত সাকিবের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করে বলেন, ‘বেশি ভাব দেখাচ্ছে’। তার কন্ঠে ছিল তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব। এ সময় সাকিব কিছুটা রাগান্বিতভাবে সেই ভক্তের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আয় ওপরে আয়, অটোগ্রাফ দেব।’

এরপরই লিফট বন্ধ হয়ে যায়, আর নিজ কক্ষে চলে যান সাকিব। এ ঘটনা ঘটে গত রবিবার দিবাগত রাত দু’টার দিকে। সাকিবের বাহিনী হোটেল লবিতে অবতরণ করেন রাতে পৌণে দু’টার দিকে। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশকে বিজয়ী ঘোষণা করার পরই ফোর্ট লডারডেল সিটিতে ম্যারিয়ট নর্থ হোটেল লবিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটজার্সি পরিহিত ভক্তরা জড়ো হতে থাকেন। ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা একটি প্লেকার্ড সামনে রেখে সকলেই অভূতপূর্ব শৃঙ্খলায় দু’লাইনে অবস্থান নেন। 

ক্যালিফোর্নিয়া, টরন্টো, অটোয়া, টেক্সাস, নিউইয়র্ক, ক্যানসাস, ওয়াশিংটন ডিসি, মিশিগান, শিকাগো, জর্জিয়া এবনফ বাংলাদেশ থেকে আসা অনেককেই দেখা যায় সেই লাইনে। একদল তরুণী ছিলেন ফুল হাতে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছাড়া এমন প্রস্তুতি কল্পনাও করা যায় না। যদিও এটি ছিল একেবারেই তাৎক্ষণিক।

ক্যানসাস থেকে আসা রবিউল করিম বেলাল বলেন, একাত্তরে যেমন বাঙালিরা লাঠি হাতে পাক হায়েনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, ঠিক একই ধরনের চেতনা কাজ করে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। আধা ঘন্টা অপেক্ষার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা আসেন হোটেল লবিতে। তারা ছিলেন মনোক্ষুন্ন। তবে তাদেরকেও বাঙালিরা ধন্যবাদ জানান। যদিও সকল খেলোয়াড়ই ছিলেন বিষন্ন। চোখে-মুখে ছিল না কোন জবাব। ধীর পায়ে সকলে হোটেল কক্ষে চলে যান তারা। 

এরপর অপেক্ষা সাকিব বাহিনীর জন্যে। ৪৫ মিনিট পর আসে সাকিব বাহিনীকে বহনকারি গাড়ি। সামনে পেছনে পুলিশ। গাড়ি থেকে নামার পরই ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে মধ্যরাতের নিরবতা ভঙ্গ হয়। অপেক্ষমান ভক্তরা ‘থ্যাঙ্ক ইউ সাকিব’ বলতে থাকেন। প্রায় সকলের হাতের ফোন সচল হয়। ম্যাচের ক্লান্তির ধকলের পরেও সাকিবসহ সকলেই অনেক কষ্টে হাস্যোজ্জ্বলভাবে সকলের দিকে তাকান এবং ধীর পায়ে হোটেলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। 

দু’পাশে দাঁড়ানো ভক্তরা তখনো শৃঙ্খলার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। আগেই সকলকে অনুরোধ করা হয়েছিল ক্লান্ত সাকিব এবং তার বাহিনীকে যেন ‘সেলফি অথবা অটোগ্রাফের জন্যে বিরক্ত করা না হয়। এরপরেও কেউ কেউ চেষ্টা করে সফল হয়েছেন। লিফটে উঠার অপেক্ষায় থাকা সাকিবকে কাছে টেনে এক ভক্ত সেলফি তোলেন। তখনও কোন প্রতিবাদ করেননি সাকিব। এরপর যখন অটোগ্রাফের চাপ দিচ্ছিলেন তখনই বিরক্তি প্রকাশ করেন সাকিব আল হাসান। 

সে সময় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রসঙ্গ ছিল না। সেখানে অনেকেই ছিলেন কাছাকাছি দূরত্বে। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের হোস্ট কমিটির অন্যতম সমন্বয়কারি আতিকুর রহমান জানান, ‘খেলার মাঠে স্লোগান উঠেছিল নিরাপদ সড়কের। যদিও সেটি অনেকেই পছন্দ করেননি। কারণ খেলাধুলায় কোন রাজনীতির সম্পৃক্ততা থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাজিত করে সাকিব বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস রচনা করলো। সেই ইতিহাস কালিমালিপ্ত করার এমন অপচেষ্টায় প্রবাসীরা ক্ষুব্ধ। ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার চলতে থাকলে এক সময় তথ্যপ্রযুক্তির অনেক কিছুই আর আকৃষ্ট করবে না সাধারণ মানুষকে’ বলে উল্লেখ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের নেতা হাসানুজ্জামান। তিনিও ছিলেন মধ্যরাতে সাকিব বাহিনীকে প্রবাসীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post