সৌদি আরব-কানাডা উত্তেজনা বাড়ছেই


অনলাইন ডেস্কঃ মানবাধিকার ইস্যুতে সৌদি আরব ও কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা এতটুকু প্রশমিত হয়নি; বরং বেড়েছে। ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের’ অভিযোগে কানাডার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের পর সৌদি আরব এবার টরন্টোর সঙ্গে বিমানের সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে। অন্যদিকে কানাডা বলেছে, মানবাধিকারের পক্ষে তারা কথা বলেই যাবে।

‘নতুন সৌদি’ গড়ার লক্ষ্যে গত এক বছরে বেশ কয়েকটি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এসব পদক্ষেপের মধ্যে সিনেমা হল খুলে দেওয়ার পাশাপাশি নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মতো বিষয়ও আছে। কিন্তু সম্প্রতি সৌদি আরবের নারীবাদী ও মানবাধিকারকর্মীদের ব্যাপকহারে ধরপাকড় করা হয়। সৌদি সরকারের অভিযোগ, এসব অধিকারকর্মী জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছেন এবং রাষ্ট্রের শত্রুদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক রয়েছে। কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে ধরপাকড়ের নিন্দা জানিয়ে আটক অধিকারকর্মীদের মুক্তির আহ্বান জানায়। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা কানাডার ওই বিবৃতিকে কেন্দ্র করেই।

সৌদি আরবের অভিযোগ, কানাডা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। এ অভিযোগে সোমবার সকালে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক টুইটার বার্তায় কানাডার রাষ্ট্রদূত ডেনিস হোরাককে বহিষ্কার করে সৌদি ত্যাগের নির্দেশ দেয়। এ জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয় মাত্র ২৪ ঘণ্টা। সৌদি আরব ঘোষণা দেয়, কানাডার সঙ্গে নতুন যেসব বিনিয়োগ ও বাণিজ্য রয়েছে, তাও স্থগিত থাকবে।

একই দিন সন্ধ্যায় উত্তেজনা আরো বেড়ে যায় যখন সৌদি আরব জানায়, কানাডায় তাদের যত শিক্ষার্থী আছে, তাদের অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করা হবে। প্রায় একই সময়ে ‘সৌদিয়া’ এয়ারলাইনস জানায়, তারা টরন্টোর সঙ্গে (কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের রাজধানী) বিমানের সব ফ্লাইট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সৌদি আরবের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এতেও থামেনি। সরকারপন্থী এক টুইটার অ্যাকাউন্টে এমন একটি ভিডিও ফুটেজ (ডিজিটাল ইমেজ) ছাড়া হয়, যেখানে দেখা যায় একটি বিমান টরন্টোর আকাশসীমার দিকে যাচ্ছে। ফুটেজটি বানানো হয়েছে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার মতো করে। যদিও এটি কয়েক ঘণ্টা পর মুছে ফেলার পাশাপাশি ক্ষমা চাওয়া হয়। এর বাইরে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদেল আল-জুবায়ের এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সৌদি আরব বাইরের যেকোনো হস্তক্ষেপ কঠোর হাতে দমন করবে।’ কানাডা সরকার যে অবস্থান নিয়েছে, তা মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে বলে দাবি করেন আল-জুবায়ের।

এদিকে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরে যেখানেই হোক, কানাডা মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াবেই। আর নারীর অধিকার মানে মানবাধিকারও।’ এ ছাড়া পৃথক এক বিবৃতিতে ফ্রিল্যান্ড বলেন, ‘বন্দি মানবাধিকারকর্মীদের পক্ষে কথা বলার কারণে কানাডার রাষ্ট্রদূতকে সৌদি আরব বহিষ্কার করায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কনসুলার সেবাসহ সৌদি আরবে কানাডা দূতাবাসের সব কার্যক্রম চালু আছে।’

উল্লেখ্য, সৌদি আরবে গত কয়েক দিন যেসব অধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সৌদি-মার্কিন বিখ্যাত নারী অধিকারকর্মী সমর বাদাউয়িও আছেন। ইসলাম অবমাননার দায়ে ২০১২ সালে তাঁর ভাই রাইফ বাদউয়ির এক হাজার চাবুকাঘাত ও ১০ বছর কারাদণ্ড হয়। সূত্র : এএফপি।

Post a Comment

Previous Post Next Post