মানুষের চিকিৎসা সেবায় কুকুর!


ডা. সাঈদ এনাম: স্নায়ুরোগ গুলোর মধ্যে এপিলেপ্সি বা মৃগী রোগ বেশ রহস্যময়। মৃগী রোগের অনেক ধরন রয়েছে। ব্রেইনের কিছু কোষের অকস্মাৎ, অস্বাভাবিক ইলেক্ট্রিক্যাল ডিসচার্জ এর ফলেই মৃগী রোগের লক্ষণ শরীরে দেখা দেয়। লক্ষণ গুলো দেখা দেয় ব্রেইনের ঠিক কোন অংশের কোষ গুলো এ রকম অস্বাভাবিক আচরন করছে তার উপর। এসব লক্ষন গুলোর মধ্যে রয়েছে হঠাৎ শরীরের কোন অংশ বা অংগ অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে থাকা, কেঁপে কেঁপে পড়ে যাওয়া, পড়ে যেয়ে আঘাত পাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসময় রোগীরা প্রশ্রাব পায়খানাও করে দেন। পুরো ব্যাপার টা মাত্র ক’মিনিটেই শেষ হয়।

এই লক্ষণ গুলো আবার মানসিক রোগ কনভারসন ডিসওর্ডার এর লক্ষন গুলোর সাথে কিছুটা মিলে যায়। তবে কনভারসন ডিসওর্ডার এর রোগী রা কখনো পড়ে গিয়ে আঘাত প্রাপ্ত হননা, অজ্ঞান হননা বা প্রশ্রাব পায়খানা করে দেননা।

কনভারসন ডিসওর্ডার এর বেশ কিছু ব্যক্তিগত, বা সামাজিক কারন থাকে যা নিয়ে রোগীরারা থাকেন খুবই উদ্বিগ্ন, বিব্রত, বিপদগ্রস্থ এবং এই কারন গুলোই কালক্রমে শারীরিক লক্ষননের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সহজ ভাষায় সাইকোলজিক্যাল কনফ্লিক্ট কনভার্টেড টু ফিজিক্যাল সিমটম। আমি কনভারসন ডিসওর্ডারের এ পর্যন্ত যত রুগী দেখেছি তার বেশির ভাগই রয়েছেন টিন এজ এর মেয়ে। সাইকোথেরাপির মাধ্যমে এরোগ পুরোপুরি সেরে যায়।

মৃগীরোগী দের মধ্যে আবার অনেকের বেশ কিছু মানসিক রোগ দেখা দেয়, যেমন এনজাইটি ডিপ্রেশন। মৃগীরোগের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। বেশ কিছু ঔষধ এখন বেশ কার্যকরী তবে তা নিয়মিত খেতে হয়, এবং দীর্ঘ সময় ধরে। চিকিৎসা কালীন সময়ে মৃগী রোগীদের বেশ কিছু নিয়মের মধ্যে চলতে হয়। তাদেরকে বিশেষ পরিচর্যায় থাকতে হয়। কেননা হঠাৎ যে কোন স্ট্রেস বা কোন স্ট্রেস ছাড়াই দেহের মধ্যে মৃগী রোগের লক্ষন চলে আসে, ফলে ঘটে যেতে পারে বেশ ভয়াবহ বিপত্তি।

উন্নত দেশে মৃগী রোগীদের দেখভাল করার জন্যে কুকুর কে কাজে লাগানো হয়। এই বিশেষ কুকুর গুলোকে বলে সিজার ডগ।

সিজার ডগ ( Seizure Dog) এক ধরনের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর। যেহেতু এপিলেপ্সি তে( মৃগী রোগ ) আক্রান্ত রোগীরা হঠাৎ করে প্রচন্ড খিচুনি দিয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ফলে সামান্য একটু অসতর্কতায় যে কোন সময় পারিপার্শ্বিক কারনে এপিলেপ্সি বা মৃগী রোগী দের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে।

নিয়মিত ঔষধ এর পাশাপাশি কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ তাদের পরিহার করে চলতে হয় যেমন ড্রাইভিং, সুইমিং।
এই এপিলেপটিক পেসেন্ট এর টেক কেয়ারের জন্যে পশ্চিমা কয়েকটি দেশে কিছু কুকুর কে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে সার্বক্ষণিক মৃগী রোগীদের প্রহরায় রাখা হয়। এদের মধ্যে কিছু কুকুরের কাজ থাকে মৃগীরোগী দের খিচুনির পুর্বাভাশ এলার্ম বাজানোর মাধ্যমে আশেপাশের সবাইকে জানিয়ে দেয়া, কিছু কুকুরের কাজ থাকে খিচুনি এবং অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়ে মৃগী রোগীর কোন যাতে কোন শারীরিক ক্ষতি না হয় তার দিকে খেয়াল রাখা আর কিছু কুকুরের কাজ থাকে সাথে সাথে ইমার্জেন্সী টেলিফোন কল করে এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা।

কুকুর কি খিচুনির পূর্বাভাস বুঝতে পারে বা পারলেও তা কিভাবে এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তবে অনেকে বিশ্বাস করেন গৃহপালিত পশুপাখিদের অদ্ভুত কিছু ক্ষমতা রয়েছে যার মাধ্যমে তারা সুনামি, ভুমিকম্প, বজ্রপাত সহ নানান প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিছুটা পূর্বেই টের পেয়ে যায় ।

লেখকঃ ডা. মো. সাঈদ এনাম, সাইকিয়াট্রিস্ট।

Post a Comment

Previous Post Next Post