অটিজম কি এবং এর থেকে বাঁচার উপায়


ডা. সাঈদ এনাম: ক্লাসিক্যাল অটিজম বা অটিজম হলো মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক বিকাশ ব্যাহত জনিত সমস্যা। বিশ্বে প্রতি একশো শিশুতে একজন অটিজম বৈশিষ্ঠের শিশু পাওয়া যায়। অটিজম এর পুরো নাম “অটিজম স্পেকট্রাম ডিসওর্ডার”। সংক্ষেপে এ এস ডি (ASD) বা ক্লাসিক্যাল অটিজম বলে। অটিস্টিক শিশুদের দের আচার আচারনে নানান বৈচিত্রের সমাহার থাকে, সেজন্যেই এর নাম “অটিস্টিক স্পেকট্রাম ডিসওর্ডার”।

সম্প্রতি আমেরিকান নিউরো-সাইকিয়াট্রিস্ট দের গবেষণায় দেখা গেছে তাদের দেশে প্রায় আটষট্টি শিশুতে একজনের অটিজম এর বৈশিষ্ট্য আছে। এখন পর্যন্ত ব্রেইনের এই ডিসওর্ডার এর নির্দিষ্ট কোন কারন জানা যায়নি তবে ধরা হয় জেনেটিক্স এর জন্যে বহুলাংশে দায়ী। তবে মদ বা মাদকাসক্তি, গর্ভাবস্থায় মায়েদের কিছু রোগ, তাদের অযত্ন অবহেলা এবং গর্ভাবস্থায় কিছু ড্রাগ যেমন, ভেলপ্রোয়িক এসিড যা “মূড ডিসওর্ডার” বা “মৃগীরোগে” ব্যবহৃত হয়, তার ব্যবহার থেকে এটি হতে পারে। মেয়ে শিশুর তুলনায় ছেলেদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অনুপাতিক হারে যা ১:৫।

যেহেতু এটা স্নায়ুবিক বিকাশ ব্যাহত জনিত সমস্যা, তাই এর লক্ষন গুলোও ব্রেইন এর কাজকর্মের সাথে সর্ম্পর্কিত। আমাদের দৈনন্দিন চলাফেরা, কথাবার্তা, আচার ব্যবহার ইত্যাদি সব গুলোর মুল নিয়ন্ত্রক হলো আমাদের দেড় কেজি ওজনের ব্রেইন।

সাধারণত ৩ বছর বয়সে একটা মানব শিশুর ব্রেইন দৈনন্দিন সকল কাজ গুলোকে পুরোপুরি রপ্ত করে নেয়। তাই বলা যায় তিন বছর বয়সেই অটিজমের লক্ষন গুলো পুরোপুরিভাবে স্পষ্ট হয়ে যায়।
তবে অটিজম এর প্রকারভেদে এই উপসর্গ গুলোর কম বা বেশী হয়। আবার কখনো কখনো লক্ষণগুলো কিছুটা দেরিতেও আসতে দেখা যায়। কারো ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্রেইনের ডেভেলপমেন্ট হয়, পরে থেমে যায় এবং কমতে থাকে।

একেক প্রকার ভেদে একেক অটিস্টিক শিশুর একেক রকমের উপসর্গ থাকতে পারে। তবে কিছু কিছু সাধারণ লক্ষন আছে যা সকল শিশুতেই থাকে।

শিশুর মধ্যে অটিজম এর লক্ষণ থাকলে সর্বপ্রথম সেটা তার মা’র কাছে ধরা পড়ে। আমার কাছে অনেক মা’ই উদ্বিগ্ন হয়ে আসেন এই বলে যে, “তার শিশুটি অন্যান্য শিশুর মতো ব্যবহার করছেনা, কেমন যেনো একটু আলাদা, সারাক্ষণ আনমনে। চোখে চোখে তাকাচ্ছেনা, এনজয় করছেনা, কথা বলতে পারেনা, উত্তর দেয়না, বা অযথা জেদ ধরে থাকে”। এবং কিছু ক্ষেত্র দেখা যায় মায়েদের অবজারভেশনই সঠিক হয়। তাই আমি মাঝেমধ্যে শিশুর “মা’কেই বলি অটিস্টিক বেবির প্রথম সনাক্তকারী ডাক্তার।

পরিবারে অনেকেই আছেন অটিস্টিক বেবি দেখলে খুব ঘাবড়ে যান। মনে করেন বাতাস বা উপরি লেগেছে, কিংবা গর্ভাবস্থায় মা’র গায়ে খারাপ বাতাস লেগেছে। অনেকে আবার এরজন্যে মা,বাব বা বংশের কারোউ কে দায়ী করেন। এগুলো স্রেফ কুসংস্কার। অথচ ক্ষেত্র বিশেষে অটিস্টিক শিশুরা সাধারণ শিশুদের চেয়ে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে থাকে। অবাক হলেও সত্যি, পৃথিবী পালটে দেয়া বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকের মাঝে অটিজমের লক্ষন ছিলো। এদের মধ্যে স্যার আইজ্যাক নিউটন, আইনস্টাইন, আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল, বিজ্ঞানী কুরি,আর্কিমিডিস, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন এর নাম উল্লেখযোগ্য।

বয়স অনুযায়ী অটিজমের বৈশিষ্টঃ

একটি শিশুর মাইলস্টোন অব ডেভেলপমেন্ট বা মাস, বছর অনুপাতে শিশুর স্নায়বিক বিকাশ বিবেচনা করলে ধাপে ধাপে যে সকল উপসর্গ একটা অটিস্টিক শিশুর মধ্যে দেখা যেতে পারে, তার তুলনামূলক একটি ধারণা নীচে দেয়া হলো।

৩ মাস বয়সেঃ

(এসময় ডায়াগনোসিস কেবল সাইকিয়াট্রিস্ট করতে পারেন)
  • মা বা বাবার মুখটির সাথে পরিচিত থাকবেনা, দেখলে হাসবেনা।
  • শব্দের বা আলোর উৎসের দিকে তাকাবে না, প্রতিক্রিয়া করবে না।
  • চলমান খেলনা বা বস্তুর প্রতি মনযোগী হবেনা, ধরতে চাইবে না, নাড়াচাড়া করবেনা।
  • “ব-ব” “ত-ত” শব্দগুলো করবে না।


৭-৮ মাস বয়সে যা দেখা যেতে পারেঃ

  • শিশু হাসবেনা, কারো সাথে খেলবে না, খেলা উপভোগ করবে না,উষ্ণ সম্পর্ক হবে না।
  • হাতের নাগালের বাইরের খেলনা হাত বাড়িয়ে আনতে চেষ্টা করবে না, আগ্রহ দেখাবে না।
  • শব্দ করলে শব্দের উৎসের দিকে তাকাবেনা।
  • মা বা বাবার মুখের প্রতি আলাদা কোন আকর্ষণ দেখাবে না, আইডেন্টিফাই করতে পারবেনা।
  • ঘাড় শক্ত করে, সাপোর্ট সহ বা সাপোর্ট ছাড়া বাছানায় বসবেনা।
  • নাম ধরে ডাকলে তাকাবে না।
  • “অপছন্দ” বা “না” জিনিষ টি বুঝাতে পারবে না
  • উপুড় করে শোয়ালে চিৎ হবেনা। (সাধারণত এ বয়সে এটা করে)
  • হাত পা ছুড়াছুড়ি, নাড়াচাড়া করা, শব্দ করা, হাসি কান্না ইত্যাদি দ্বারা মনোযোগ আকর্ষণ করবেনা।


১২ মাস বা ১ বছর বয়সে যা দেখা যেতে পারেঃ
  • অপরিচিত কাউকে দেখলে লজ্জা বা ভয় পাবেনা।
  • মা বাবার কাছ থেকে সরালে কাঁদবেনা।
  • “না” বললে সেটা বুঝবেনা বা মানবেনা।
  • শব্দ অনুকরণ করতে পারবেনা বা করবেনা।
  • আংগুল মুখে নিয়ে চুষবেনা।
  • “দাদা” “মামা” “নানা” “তাতা” ইত্যাদি পরিচিত শব্দ বলবেনা বা বলতে পারবেনা।
  • সাপোর্ট নিয়ে দাড়াতে বা হাঠতে পারবেনা।
  • হামাগুড়ি দিয়ে আগ্রহী কছুর দিকে আগাবেনা।
  • পেয়ালা বা গ্লাস আকৃতির কিছু দিলে তা মুখের কাছে নিয়ে পানি খাবার মতো চেষ্টা করবেনা,
  • মোবাইলে শব্দ করলে তা ধরবে না, ধরে নিয়ে মুখে বা কানে দিবেনা।
  • (অনুকরণ)
  • খেলনা বক্স বা জার থেকে খেলনা বের করতে বা ঢুকাতে পারবেনা।
  • আগ্রহী খেলনা বা বস্তুর পেতে তার দিকে চোখ বা আংগুল দিয়ে নির্দেশ করবে না।
  • নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেবে না।
  • বিপদে পড়লে বা কষ্ট পেলে সাহায্য নিবে না।
  • কোন অর্থপুর্ণ অঙ্গ ভঙ্গি করবে না। যেমন মাথা দোলানো, হাত নেড়ে টা-টা দেয়া, ইত্যাদি।
  • আগ্রহের খেলনা বা বস্তু কাপড় বা কাগজ দিয়ে তার সামনে লুকালে তা খোঁজে বের করতে পারবেনা।
  • অহ, আহ,অফ, হু, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে কিছু বুঝাতে পারবেনা অথবা এসব শব্দ অনুকরণ করবেনা।


২৪ মাস বা ২বছর বয়সে যা দেখা যেতে পারেঃ
  • হাঁটবে না। দোড়াবেনা আর তা করলেও উদ্দেশ্যহীন, অগোছালো ।
  • সমবয়সী শিশু দেখলে রোমাঞ্চিত হবেনা, বা মিশবে না।
  • “পছন্দ” “অপছন্দ” বুঝাতে পারবেনা।
  • “লাল” “নীল” “সবুজ” বা বিভিন্ন রঙ বা এর ছবি আলাদা করে বুঝাতে পারবেনা।
  • কিছু দেখিয়ে দিলে অনুকরণ করবেনা।
  • খেলনা বা কোন বস্তু পিছনে টেনে টেনে নিয়ে যাবেনা বা সামনের দিকে ঠেলে যাবেনা।
  • অতি সাধারন বিষয়ে “হা” বা “না” নির্দেশনাবলী মান্য করবে না, বুঝবেনা।


৩৬ মাস ৩ বছর বয়সে যা দেখা যেতে পারেঃ
  • শিশু আগ্রহ, অনাগ্রহ কিছুই বুঝাবে না বা বুঝাতে পারবেনা।
  • “আমি” বা “আমার” এটা বুঝাতে পারবে না।
  • কথাবার্তা অস্পষ্ট থাকবে।
  • হঠাৎ একেবারেই অর্থহীন শব্দ বলবে।
  • জিজ্ঞেস করলে নাম, বয়স বলতে পারবেনা।
  • শিশুদের সাথে মিশবে না, খেলবে না। খেললেও তা শিখিয়ে দেয়ার মতো না, হয়ত অদ্ভুত রকম খেলবে।
  • অন্যকে আঘাত করে বসবে বা নিজেকেও আঘাত করতে থাকবে।
  • চোখে চোখ রেখে কথা বলবেনা।
  • সিঁড়ি দিয়ে এক পা দু’পা ওঠা নামা করতে পারবেনা।
  • অপরিচিত কাউকে গ্রাহ্য করবে না।
  • রঙ দিয়ে আঁকাজোকা করবে না।


তবে তিন বছরের এসকল মাইলস্টোন অব ডেভেলপমেন্ট এর অসামঞ্জস্য পর্যবেক্ষণ করে করে বিশেষজ্ঞ ছাড়া সাধারণ কারো কাছে অটিজম ব্যাপারটি নিশ্চিত হওয়া অনেকটাই কঠিন। কারন অনেক সময় বয়সের সাথে সাথে বেড়ে উঠার মধ্যে যে অসামঞ্জস্য থাকে, তা আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সময়ের হের ফের হয়, এমন কি কখনো কখনো ঠিকও হয়ে যায়।

আবার এমনও হয় জন্ম থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বেড়ে উঠায় তেমন কোন ত্রুটি হয়তো প্রথমে দেখা যায়না, কিন্তু পরবর্তীতে হঠাৎ করে বিকাশ ব্যাহত দেখা দেয় ফলে ধীরে ধীরে তার পক্ষে স্বাভাবিক ভাবে আর চলাফেরা বা মেলামেশা সম্ভব হয় না।

শিশুর মাইলস্টোন অব ডেভেলপমেন্ট এর ধাপে ধাপে পাওয়া লক্ষন বিবেচনা না করে যদি সামগ্রিকভাবে তিন বছর বয়েসী একটি অটিস্টিক শিশুর র লক্ষন গুলো খেয়াল করা হয় তবে দেখা যাবে,

“তারা আনমনা থাকে। আপন জগতে বিচরণ করে। আবেগ প্রকাশ করতে পারে না। কারনে বা অকারনে চরম ক্ষিপ্ত হয়। নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেনা। দেখিয়ে দেওয়া কিছুতে বেশি মনযোগী হয় না, আবার কখনো কখনো ঘন্টার পর ঘন্টা নিজে থেকে অর্থহীন কাজ মগ্ন থাকে। ডাকলে সাড়া দেয় না। জিজ্ঞেস করলে নিজের নাম বলবেনা। চোখে চোখ রেখে কথা বলবেনা। হাত পা অদ্ভুত ভাবে নাড়াবে, প্যাচাবে। আঘাত পেলে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবেনা। তাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বললে সে শুনবে না। ধরতে গেলে বা জড়িয়ে ধরলে হয়ত বাধা দেবে। একা থাকতে চাইবে। বার বার একই শব্দ বা অদ্ভুত শব্দ ও বাক্য মুখ দিয়ে করবে। আশেপাশের কারো প্রতি বা কিছুর প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাবেনা। রুটিন মেনে চলতে পারবেনা। অর্থহীন কিছুতে অনেক সময় অস্বাভাবিক আকর্ষণ দেখাবে। বিনাকারনে নিয়ত মেজাজ পাল্টাবে অত্যাধিক হাঁসি বা কান্নার মাধ্যমে। যে কোন পরিবর্তন তার মাঝে প্রচণ্ড জেদ তৈরি করবে। নিজেকে বা অন্যকে অকারনে আঘাত করবে। বিপদ শংকা বুঝবে না এবং সাহায্য চাইবেনা।

অটিজম এর প্রকারভেদঃ
ব্রেইনের ডেভেলপমেন্ট ও লক্ষণ এর বিবেচনা করে ডি এস এম-৫ অনুযায়ী অটিজম পাঁচ প্রকার, যথা এ এস ডি বা ক্লাসিক্যাল অটিজম, এসপারজার্স সিনড্রোম, পারভারসিভ ডেভেলপমেন্ট ডিসওর্ডার, রেট সিনড্রোম, চাইল্ডহুড ডিসইন্টোগ্রেটিভ ডিসওর্ডার।

অটিজম এ ব্রেইনে কি হয়ঃ
ব্রেইনের গুরুত্বপূর্ণ এরিয়া যেমন ফ্রন্টাল লোব, প্যারাইটাল লোব, রেটিকুলার সিস্টেম, সেরিবেলাম ইত্যাদি তে নিউরন লস থাকে, সুগঠিত থাকেনা, কানেকশন উল্টোপাল্টা থাকে, এমন কি অনেক অপরিচিত নিউরন থাকে যা থাকার কথা না।

অটিস্টিক বেবির বিশেষ বৈশিষ্ট্যঃ
কিছু কিছু অটিস্টিক বেবির স্মৃতি শক্তি অত্যন্ত প্রখর হয়ে থাকে। এমন কি কোন নিদৃষ্ট কোন একটি বিষয়ে সাধারণ বেবিদের তুলনায় অত্যন্ত পারদর্শী হতে পারে। তুখোড় গাণিতিক জ্ঞান সম্পন্নও হয়ে থাকে কেউ কেউ যা কম্পিউটার কেও হার মানায়। কেউ কেউ গান বাজনায় অসাধারণ রকম পারদর্শী হয়। এটাকে এসপারজাস সিনড্রোম বলে

অটিস্টিক শিশুর ভবিষ্যৎঃ
এটা নির্ভর করে মানসিক দক্ষতা, কথাবার্তা বলতে পারা এবং তার সাথে অন্যান্য কোন রোগ যেমন এপিলেপসি, ডাউন সিনড্রোম ইত্যাদি আছে কিনা। তবে সাধারণত দেখা গেছে অটিস্টিক বেবির শতকরা ১০ ভাগ সুস্থ জীবন যাপন এবং সাধারণ স্কুলে পড়তে পারে, কাজকর্ম করতে পারে, ১০ ভাগ শিশু “সহায়তা নিয়ে” জীবন যাপন, স্কুল যাপন করতে পারে এমন কি কাজ কর্মকর্ম করতে পারে, ২০ ভাগ শিশুর ভাগ সহায়তা নিয়ে বাড়িতে থাকতে হয়, বিশেষ স্কুলিং এর প্রয়োজন হয়, ৪০ ভাগ শিশুর বাড়িতে “বিশেষ সহায়তা” নিয়ে থাকতে হয় এবং ১০ ভাগ শিশুকে “বিশেষায়িত হাসপাতালে” চিকিৎসাধীন নিয়ে থাকতে হয়। তবে অটিজম যত দ্রুত ডায়াগনোসিস হবে, তার জন্যে সেটা তত ভালো হবে।

অটিজম শিশুর পরিচর্যাঃ 
যেহেতু অটিজমে আচার আচরণ গত সমস্যাই বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে আচার আচরণ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাইকিয়াট্রিস্ট এর পরামর্শ মতে বেশ কিছু এন্টি সাইকোটিক মেডিকেশন অত্যন্ত সফল ভাবে ব্যবহার করা হয়।

এছাড়া মাল্টিডিসিপ্লিনারী এপ্রোচ যেমন সাইকিয়াট্রিস্ট, নিউরোলজিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট এর সহায়তায় বিহেভিয়ার থেরাপি, স্পীচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে তাদের যত্ন নিতে হয়। বিশেষায়িত স্কুলে শিক্ষাদানের মাধ্যমে তাদের কে যোগ্য হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব। আমাদের দেশে অটিজম এর বৈশিষ্ট্য রয়েছে এরকম শিশুর জন্যে অনেক বিশেষায়িত স্কুল রয়েছে।

অটিজম থেকে বাঁচার উপায়ঃ
অটিজম যেহেতু স্নায়বিক বিকাশ ব্যাহত জনিত সমস্যা সচেতনতার মাধ্যমেই এটি প্রতিরোধ করতে হবে। বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।

পরিবারে কারো স্নায়বিক বিকাশ জনিত সমস্যা বা অটিজম অথবা কোন মানসিক ও আচরণগত সমস্যা থাকলে, পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে অটিজমের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত গর্ভধারণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা না করা, পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, শিশুর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তাছাড়া কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমনঃ

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস স্নায়বিক বিকাশের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় তাই এই সময়ে যথাযথ বিশ্রাম, আহার এবং এন্টিনেটাল কেয়ার নেয়া। এই কেয়ার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিনা মুল্যে দিয়ে থাকেন। এমনকি সরকারের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ বাড়ি বাড়ি যেয়ে এ সেবা নিশ্চিত করেন।

বেশি বয়সে বাচ্চা না নেওয়া।

বাচ্চা নেয়ার আগে মাকে রুবেলা ভেকসিন দিতে হবে।

গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ না খাওয়া।

গর্ভাবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া নুন্যতম চারবার চেক আপে আসা।

মায়ের ধূমপান, বা মায়ের সামনে বা শিশুর সামনে ধুমপান (যা অত্যধিক খারাপ), মদ্যপান, ইয়াবা গ্রহন, গাঁজা নেয়া বা এজাতীয় কোন অভ্যাস থাকলে বাচ্চা নেয়ার আগে পরে অবশ্যই তা ছেড়ে দিতে হবে।

বাচ্চাকে প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ এবং পরবর্তীতে পুর্ন দুই বৎসর বুকের দুধের পাশাপাশি সুষম খাবার খাওয়াতে হবে।

লেখক: 
ডা. মুহাম্মাদ সাঈদ এনাম ওয়ালিদ
এমবিবিএস ( ডিএমসি কে- ৫২) এম ফিল (সাইকিয়াট্রি)
সাইকিয়াট্রিস্ট ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট।

Post a Comment

Previous Post Next Post