#এক
দিড়িম... দিড়িম.....,
ভর দুপুরে দরজার দিড়িম দিড়িম আওয়াজ শুনে মেজাজ টা গেলো বিগড়ে। এই মুহুর্তে কে আবার। রঞ্জিত'দা তো অনেক আগেই দুধ দিয়ে গেলো।
আবারো জোরে জোরে দিড়িম দিড়িম বাড়ি। মনে হলো লাঠি জাতিয় কিছু দিয়ে কেউ বাড়ি দিচ্ছে। আমি কি একটা লিখছিলাম। এখন নতুন একটা বাতিক পেয়ে বসেছে। একটু সময় পেলেই লিখি।
বিরক্ত হয়ে উঠে গিয়ে "ডোর ভিউয়ার" দিয়ে তাকালাম। দেখলাম এক বৃদ্ধ মহিলা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে। দরজা খুললাম।
ছেড়া ময়লা কাপড়, এক হাতে লাঠি, অন্য হাতে একটি ঝুলা। সারাগায়ে অনাহারের গন্ধ।
"বাবা দুইটা ভিক্ষা দিবেন...", বলে হাতটি বাড়িয়ে দিলো আমার কাছে।
চোখটা বন্ধ করে দু তিন সেকেন্ড দাঁড়িয়ে মেজাজ টা ঠিক করলাম,
"এই অসময়ে..., শুক্রবারে আসতে পারোনা..?
"বাবা কি করবো, কেউ নাই..."
"অসময়ে এভাবে লাঠি দিয়ে দরজায় বাড়ি দিলে মানুষ কি বলবে..., এই নাও, রেখে ভাংতি করে দাও.."
হাতে টাকাটা নিয়ে বললো,
"বাবা আমার কাছে ভাংতি নাই.."
চোখ টা আবার বন্ধ করলাম কয়েক সেকেন্ড...।
"ঠিক আছে যাও"
টক টক করে কোনমতে লাঠিতে ভর করে বৃদ্ধা যেতে যেতে ফিরে চেয়ে গেইটের কাছে গিয়ে থামলেন। পানির ট্যাপ দেখিয়ে বললেন,
"বাবা ঐটাতে পানি আছে.."
"ক্যানো.."?
"মাথায় দেবো। মাথাটা সকাল থেকেই ঘুরতেছে, দুই বার পইড়া গেছি.."
"হ্যা আছে.."
আমি দরজা টা ধরাস করে লাগালাম না। একটু তাকিয়ে থাকলাম। বৃদ্ধা খানিকক্ষণ মাথায় পানি দিলো, দু এক ঢোক খেলো। আবার লাঠিতে ভর করে কোনমতে হেটে বেরিয়ে যেতে থাকলো। ঠক ঠক, ঠক ঠক....।
আমি ডাকলাম, "এই এদিকে এসো..."
"ক্যান বাবা, কি করছি। আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ কইরা দেন..."
বড় মায়া লাগলো।
"যাও ঐ রুমে বস গি'য়ে..."
"কেনো বাবা.."
"যাওনা। আমি আসছি.."
#দুই
আমার বাসায় পুরোনো ঘরটার বড় বড় দুই রুম কে একটু সাজিয়ে নিয়ে টেম্পোরারি এক চেম্বারের মতো করে রেখেছি। মফস্বলে থাকতে গেলে বাসায় ওরকম একটা ব্যবস্থা করে রাখতে হয় বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের জন্যে।
বৃদ্ধার প্রেশার দেখলাম। খুবই লো। কিভাবে যে বেঁচে আছেন, আল্লাহ মালুম।
ড্রয়ার থেকে ওষুধ কোম্পানি র দেওয়া
#ফিজিসিয়ানস_স্যাম্পল থেকে দুটো ভিটামিন আর ক্যালসিয়াম দিয়ে বললাম,
"যাও ওগুলো খেও। আর খাবার স্যালাইন খেও.."
"বাজান আপনি ডাক্তার, বুঝি নাই। আমারে মাফ কইরা দেন। আমার কাছে'তো পয়সা নাই বাবা..."
"না না, লাগবেনা, যাও.."
"ও আল্লাহ আল্লাহ তুমি কই গো" বলে বলে ধীর পায়ে লাঠি ভর দিয়ে বৃদ্ধা বেরিয়ে গেলেন,
ঠক ঠক, ... ঠক ঠক....।
#তিন
আর কিছুদিন পর আমরা বিশ্বে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে আত্মপ্রকাশ করবো। জানিনা এসব রহিমার দাদী আর নানী দের কি হবে...।
"যাও ওগুলো খেও। আর খাবার স্যালাইন খেও.."
"বাজান আপনি ডাক্তার, বুঝি নাই। আমারে মাফ কইরা দেন। আমার কাছে'তো পয়সা নাই বাবা..."
"না না, লাগবেনা, যাও.."
"ও আল্লাহ আল্লাহ তুমি কই গো" বলে বলে ধীর পায়ে লাঠি ভর দিয়ে বৃদ্ধা বেরিয়ে গেলেন,
ঠক ঠক, ... ঠক ঠক....।
#তিন
আর কিছুদিন পর আমরা বিশ্বে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে আত্মপ্রকাশ করবো। জানিনা এসব রহিমার দাদী আর নানী দের কি হবে...।
লেখক: ডা. সাঈদ এনাম ।
এম.বি.বি.এস (ডি এম সি) এম ফিল (সাইকিয়াট্রি) সাইকিয়াট্রিস্ট ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিলেট।