পিরামিড দর্শনে শাওনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা

অনলাইন ডেস্কঃ প্রয়াত জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন রয়েছেন মিশরে। মিশরে গিয়ে পিরামিড দেখা হবে না সেটা তো হতে পারে না। তাই নিজের বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়েই বেরিয়ে পড়েন ফারও সম্রাটদের রাজত্ব দেখতে। বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেজে সেই পিরামিড দেখার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন শাওন।

শাওনের অভিজ্ঞতা তাঁর ফেসবুক থেকে হবহু তুলে ধরা হল:

টাকা দিলে বাঘের চোখও পাওয়া যায়’ এই কথার সত্যতা কতটুকু জানিনা কিন্তু মিশরীয় পাউন্ড দিলে ‘ছবি তোলা নিষেধ’ লেখা জায়গায় দেদারসে ছবি তোলা যায়। এমনকি ছবি তুলতে যে নিরাপত্তা কর্মীর বাধা দেয়ার কথা তিনিই আপনার ফটোগ্রাফারের ভূমিকা পালন করে দেবেন বখশিশ একটু বেশি পেলে।
গিজার গ্রেট পিরামিডের তিনটির মধ্যে দু’টোর ভিতরে প্রবেশ করা যায়। ছোট পিরামিডটি (উচ্চতা ২১৩ ফুট) ফারাও সম্রাট ‘খাফরে’র পুত্র সম্রাট ‘মেনকাউরে’ তাঁর শাসনামলে তৈরী করেন। সেটার ভেতরেই যান বেশির ভাগ পর্যটক ৫০ মিশরীয় পাউন্ড মূল্যের টিকিটের বিনিময়ে। মাঝারি পিরামিড যা ফারাও সম্রাট ‘খাফরে’র আমলে তৈরী, তার অভ্যন্তরে প্রবেশ করা যায় না। আর সবচেয়ে বড় (উচ্চতা ৪৮১ ফুট) এবং সর্বপ্রথম পিরামিড যা তৈরী হয়েছে সম্রাট ‘খাফরে’র পিতা সম্রাট ‘খুফু’র আমলে তার টিকিটের মূল্য ৩০০ মিশরীয় পাউন্ড।এটির অভ্যন্তরে সবাই যেতে পারে না ( যেতে চান না হবে কথাটা)। তার মূল কারন অতিরিক্ত উচ্চতা এবং অত্যন্ত সংকীর্ণ প্রবেশপথ যা আপনাকে একটা দম আটকে আসা অনুভূতির জন্ম দিবে। আপনি যদি ‘claustrophobic’ কিংবা ‘আবদ্ধ জায়গায় ভীতি’ অনুভূতির কেউ হন, তবে সাবধান! মনের ভুলেও ‘খুফু’র পিরামিডে প্রবেশের কথা ভাববেন না।
আমি নিজে ‘claustrophobic’ তার উপর উচ্চতায় ভীতি আছে; বদ্ধ জায়গার গন্ধে আমার শ্বাসকষ্ট কিংবা এ্যাজমা’র অসুবিধা হয়। এবং ডান পা’য়ের হাঁটুর হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার কারনে সিড়ি বাওয়া নিষেধ। তারপরও ‘বেকুব’এর মতো আমি ‘খুফু’র পিরামিডের ভিতরে যাব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। প্রাচীনতম বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য (seven wonders of the ancient world) এর মধ্যে একমাত্র অক্ষত বিস্ময়! এর বাহির ভিতর পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে না দেখলে চলবে! সঙ্গে যাবার জন্য সকল কাজের সঙ্গী বান্ধবী Ditan তৈরী। তার এক কথা- “শাওনকে আমি একা ছাড়ব না। ও যদি পিরামিডের ভিতরে ঢুকে অজ্ঞান টজ্ঞান হয়ে যায়!”
 

বীরদর্পে আমরা দু’জন ‘খুফু’র পিরামিডের অভ্যন্তরে যাবার টিকেট কেটে ফেললাম। বাকিরা গেল ‘মেনকাউরে’র পিরামিডে। টিকেট কাউন্টারে আমাদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা জমা নিয়ে নিল। “ভিতরে ছবি তোলা নিষেধ” এই কথা বলে কাউন্টারে থাকা লোকটা চোখ টিপল। দেখলাম উনারা ফোন নিলেন না। পিরামিডে ঢোকার কিছুদূর পর সেখানে থাকা নিরাপত্তা কর্মী আমাদের টিকেট দেখতে চাইলেন। বললেন- “সঙ্গে ক্যামেরা নাই তো..?” আমরা জানালাম যে ক্যামেরা নেই। তিনি আমার সঙ্গে থাকা আইফোন দেখিয়ে বললেন- তোমার ফোনে ছবি তুলবে না! চাইলে তুলতে পারো।’
এই বলে একটা ৫০ পাউন্ডের নোটের দিকে ইশারা করলেন! আমরা তাকে ১০০ পাউন্ডের একটা নোট দিলাম। ৪৮ টি দাঁত বের করে তিনি আমার হাতের আইফোনের ক্যামেরাতে আমাদের একখানা ছবি তুলে দিলেন। সম্রাট ‘খুফু’র মূল প্রকোষ্ঠে যেতে আমাদের পাড়ি দিতে হলো অনেকখানি পথ; সিড়ি বেয়ে উঠতে হলো প্রায় ১০০ ফুট উচ্চতায়।
কখনো ১৮ ইঞ্চি করিডোরে ‘যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে একেবারে অতল গহ্বরে পড়ে যাব’ টাইপ রেলিং ধরে এগিয়েছি, কখনো ৩০ ইঞ্চি চওড়া, ৩২ ইঞ্চি উচ্চতার দীর্ঘ ঢালু পথ হামাগুড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে ঘেমে, নেয়ে, ভিনদেশী স্বাস্থ্যবান পর্যটকদের ‘oh my God, oh my God’ আর্তনাদ শুনে পৌঁছেছি সম্রাটের প্রকোষ্ঠে। আমি পায়ের ব্যাথায় কিঞ্চিত কষ্ট পেলেও সুস্থ ভাবে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। আর আমার উদ্ধারকারী হিসাবে সঙ্গে যাওয়া বান্ধবীর কি দশা হয়েছে এটা বলে দিয়ে বছরের শেষ দিকে তার হাতে ‘মাইর’ খেতে চাই না ।

Post a Comment

Previous Post Next Post