প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলছে টিলা কাটা !



বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের বড়লেখায় টিলার মাটি কাটা অব্যাহত রয়েছে। পরিবেশ আইন অমান্য করে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দুর্বৃত্তরা অবাধে টিলা কাটা মহোৎসব চলছেই। অবাধে টিলা কাটা চালিয়ে গেলেও তা রোধে প্রশাসন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অব্যাহত টিলা কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে এলাকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য। চলতি বছরে  টিলার মাটি ধসে মারা গেছেন কয়েকজন।

তবে টিলা কাটার বিষয়ে বিভিন্ন সময় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে টনক নড়ে প্রশাসনের। এরপর শুরু হয় অভিযান। করা হয় দু’একজনকে জরিমানা। অভিযানও চলে কিছুদিন। তারপর অদৃশ্য কারণে থেমে যায় প্রশাসনের এ অভিযান। আর এ সুযোগেই টিলা কাটা চালিয়ে যায় টিলা খেকোরা। এসব অপকর্মের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে শুরু করে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার নামও।

অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে। তবে এ আইন যেন টিলা খেকোদের কাছে শুধুই ‘নীতিবাক্য’।

এদিকে টিলা কেটে ও পাদদেশে নির্মাণ করা ঘরের বাসিন্দারাও রয়েছেন ঝুঁকিতে। বর্ষা এলেই এসব এলাকার বাসিন্দাদের আতঙ্ক বেড়ে যায়। চলতি বছরের জুন মাসে উপজেলা সদর ইউনিয়নের ডিমাই এলাকার বিওসি কেছরিগুল (বতাউরা) গ্রামে ভারি বর্ষণে টিলার মাটি ধসে মা মেয়েসহ গত চার বছরে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এছাড়া টিলা ধসে শিশু সন্তানসহ অসংখ্য ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার পাহাড়ি এলাকা সদর ইউনিয়নের ডিমাই, কেছরিগুল, গঙ্গারজল, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের কাশেমনগর, হাকায়িতি, পূর্ব হাতলিয়া, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির বোবারথল, মোহাম্মদনগর, ছোটলেখা, ঘোলসা, চন্ডিনগর, মুড়াউল, অফিস বাজার, উত্তর শাহবাজপুর ইউপির আতুয়া, বড়-আইল, নান্দুয়া, পূর্ব বানীকোনা, শ্রীদরপুর, দক্ষিণভাগ উত্তর (কাঁঠালতলী) ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রকাশ্যে টিলা কাটা হচ্ছে। এসব টিলার মাটি বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে অন্তত দুই শাতাধিক ট্রাক ও ট্রাক্টর। এদের অধিকাংশেরই নেই বৈধ কোনো কাগজপত্র। ট্রাক্টরের সাহায্যে মাটি বহন করায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ও উপজেলা শহরের প্রধান সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অথচ অবাধে এসব ট্রাক্টর উপজেলা শহরের চলাচল করলেও তা যেন দেখেও দেখছে না প্রশাসন।

গত মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে টিলাকাটার দৃশ্য চোখে পড়ে। এই ইউনিয়নের নান্দুয়া গ্রামের বাসিন্দা বশির আলী ও বশারত আলী, করমপুরে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার, বড়-আইলে শিহাব উদ্দিন, জামাল আহমদ ও আতুয়ায় বাবুল মিয়ার বসত বাড়ির টিলা থেকে মাটি কেটে নিতে দেখা গেছে। আতুয়া এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবুল মিয়ার টিলা থেকে মাটি কাটাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আহমেদ শরীফ দেলোয়ার।

তবে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে ব্যবসায়ী আহমেদ শরীফ দেলোয়ারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা মিথ্যা কথা। আমি চেয়ারম্যানের ভাই। এজন্য আমার নামে যড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

অন্যদিকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে করমপুর এলাকায় টিলা কাটার দায়ে (টিলার মালিক) মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার ও ট্রাক্টর চালক দিনার হোসেনকে অর্থদ- করে প্রশাসন। অর্থদ-ের পরও টিলা কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুহেল মাহমুদ বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বলেন, ‘টিলা কাটা আইন বিরোধী কাজ। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। টিলা কাটা বন্ধে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরন করবো। এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। টিলা কাটা বন্ধে ইতিমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। এর সাথে যে কেউ জড়িত থাকুক। তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনের প্রয়োগ করা হবে।’

Post a Comment

Previous Post Next Post