এ কে এম জাবেরঃ বাংলাদেশের মানুষ মায়ানমারে নির্যাতনের শিকার কয়েক লাখ রোহিঙ্গাদের প্রতি সর্বোচ্চ মানবতা দেখিয়েছে। নির্যাতনে বাধ্য হয়ে যারা আমাদের দেশে এসেছে তাদের প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও কয়েকটি দেশের সাহায্য ছাড়াও দেশের প্রায় প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে প্রায় প্রত্যেক মানুষ এবং প্রবাসে বসবাসকারীরাও আন্তরিকভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের কুলাউড়া থেকেও কয়েকটি সংগঠন ও ব্যাক্তিগতভাবে অনেকেই কক্সবাজার গিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়িয়েছে।
সাময়িকভাবে নির্যাতিতরা যতটুকু আশ্রয় ও সাহায্য পাওয়ার কথা তা সরকারের পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষ করেছে। এই মুহুর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আশ্রিতদের নির্দিষ্ট যায়গায় আটকিইয়ে রাখা এবং যতদ্রুত সম্ভব তাদের দেশে ফেরার ব্যাবস্থা করা। আমাদের দেশের সীমিত সম্পদ দিয়ে আমরা এখনো স্বয়ংসম্পুর্ণ নয়, এর মধ্যে যদি রোহিঙ্গারা এদেশে স্থায়ী ভাবে অথবা দীর্গমেয়াদে এদেশে বসবাস করে তাহলে আমাদের অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলবে। যা অত্যান্ত আশংকাজনক। ইতিমধ্যে আশ্রিতরা নানারকম বিশৃংখলা ও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন গনমাধ্যম ও সংস্থার তথ্যমতে ২৫ আগস্ট থেকে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার মোট সংখ্যা বেড়ে ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে। গত রবিবার পর্যন্ত পর্যন্ত ২ লাখ ৪৫ হাজার ৫৫০ জন রোহিঙ্গাকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে আরো প্রায় কয়েক লাখ। এদের সবাইকে নিবন্ধন করতে আরো কয়েকমাস সময় লেগে যেতে পারে। তার আগ পর্যন্ত এদেরকে এক জায়গায় রাখাটাই সরকারের চ্যালেঞ্জ।
ইতিমধ্যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, বান্দরবান, ফেনী, যশোর, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা সদস্যকে আটক করেছে। একশ্রেণির দালাল তাদের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কর্মব্যস্ত শহরে শ্রমজীবী মানুষের ভিড়ে রোহিঙ্গাদের মিশিয়ে দেওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে। এতে সারা দেশ নতুন করে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে একটি সংবাদে দেখা যায়- কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা নারীর হামলায় পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) আহত হয়েছেন। গত শনিবার দুপুরে টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের ডি-ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় ওই নারীসহ ৩জনকে আটক করা হয়েছে।
আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৯ জন এইডস রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজার আসার পর ইউএনএইচসিআর সদস্যরা তাদের শারীরিক পরীক্ষা করলে, এইচআইভি ধরা পড়ে। পরবর্তীতে তাদের দু’জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়। শনাক্তকৃত ছাড়াও অনেকেই আছে যাদের মাধ্যমে এইডস দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছি। এছাড়াও নানারকম সংক্রামক রোগে আক্রান্তদের মাধ্যমেও স্বাস্থ্যঝুকিতে রয়েছে এসব এলাকার জনসাধারণ।
তথ্যসুত্র মতে জানা যায়, অষ্টম শতাব্দীতে আরবদের আগমনের মধ্য দিয়ে আরাকানে মুসলমানদের বসবাস শুরু হয়। আরব বংশোদ্ভূত এই জনগোষ্ঠী মায়্যু সীমান্তবর্তী অঞ্চলের (বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের নিকট) চেয়ে মধ্য আরাকানের নিকটবর্তী ম্রক-ইউ এবং কাইয়্যুকতাও শহরতলীতেই বসবাস করতে পছন্দ করতো। এই অঞ্চলের বসবাসরত মুসলিম জনপদই পরবর্তীকালে রোহিঙ্গা নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৭৮৫ সালে বার্মিজরা আরাকান দখল করে। এর পরে ১৭৯৯ সালে পঁয়ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ বার্মিজদের গ্রেফতার এড়াতে এবং আশ্রয়ের নিমিত্তে আরাকান থেকে নিকটবর্তী চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলে আসে। বার্মার শোসকেরা আরাকানের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে এবং একটা বড় অংশকে আরাকান থেকে বিতাড়িত করে মধ্য বার্মায় পাঠায়। যখন ব্রিটিশরা আরাকান দখল করে তখন যেন এটি ছিল একটি মৃত্যুপূরী।
এখনই সময় সরকারের পক্ষ থেকে রোহিংগাদের দালালমুক্ত রাখা ও প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা। না হয় এই রোহিঙ্গারাই এক সময় বাংলাদেশের জন্য হুমকির কারন হয়ে দাঁড়াবে। যার বাস্তব চিত্র তাদের সহযোগিতা করতে গিয়ে আমার দেশের একজন পুলিশ অফিসার যদি রোহিঙ্গা নারীর হাতে নির্যাতিত হন সেখান থেকেই উপলব্দি করতে হবে আমাদের।
এ কে এম জাবের
সম্পাদক
ডেইলি বিডি মেইল