সামনে ঈদ তাই ভিড় বাড়ছে গাবতলী ও কমলাপুরে

অনলাইন ডেস্কঃ উত্তরবঙ্গে বিধ্বস্ত রাস্তা। হাইওয়ের বহু জায়গায় চলছে সড়ক মেরামতের কাজ। দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের পথে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও মাওয়া ফেরিঘাটে দীর্ঘ যানবাহনের জট। অন্যদিকে রয়েছে কোরবানির পশুর গাড়ির বাড়তি চাপ। সব মিলিয়ে ভয়াবহ যানজটের আশঙ্কায় অনেকেই এবার ঈদে আগেভাগে ঢাকা ছাড়ছেন। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজধানীর রেল, নৌ ও বাস টার্মিনালগুলোতে। নৌবন্দর সদরঘাটে তেমন ভিড় না থাকলেও কমলাপুর রেল স্টেশনে ভিড় বেড়েছে প্রচুর। 
একই অবস্থা গাবতলী বাস টার্মিনালেও। তবে মহাখালী ও সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে এখনও যাত্রীর খুব বেশি বাড়তি চাপ শুরু হয়নি। রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে ঈদযাত্রার প্রথম দিন গতকাল দুটি ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা দেরিতে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ছাড়ে। অন্যদিকে ঢাকা-চিলাহাটি রুটের নীলসাগর এক্সপ্রেস ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট দেরি করে ছাড়ে বেলা পৌনে ১১টায়। এতে এ দুটি ট্রেনের যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। তবে দেরিতে ট্রেন ছাড়লেও নিরাপদে বাড়ি যেতে পারার স্বপ্নে স্বস্তি প্রকাশ করেন অনেক যাত্রী। সুন্দরবন এক্সপ্রেসের যাত্রী আয়েশা আক্তার বলেন, ট্রেন ছাড়তে একটু দেরি হলেও ট্রেনে বাড়ি যেতে পারছি বলে কিছু মনে হচ্ছে না। নীলসাগর এক্সপ্রেস বেশি দেরি করে ছাড়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রী। ট্রেনটির রংপুরের যাত্রী সিদ্দিক মিয়া বলেন, প্রায় তিন ঘণ্টা প্লাটফর্মে বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু এখনও ট্রেন না আসায় মুশকিলে আছি। অন্যদিকে ঈদযাত্রার প্রথম দিন হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে যাত্রী সমাগম বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তবে ট্রেনগুলোতে ভিড় থাকলেও উপচেপড়া ভিড় তৈরি হয়নি। প্রতিটি ট্রেন ছাড়ার সময় স্বাভাবিক সময়ের মতো যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। আবার ট্রেন চলে গেলে প্লাটফর্ম স্বাভাবিক হয়ে আসছে। দুপুর ১২টার ট্রেনে ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছেন ইমরান। ২৮শে আগস্টের অগ্রিম টিকিট দেখিয়ে তিনি বলেন, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে সিলেট যাবো।
ট্রেন প্রায় ফাঁকা। আগে জানলে অগ্রিম টিকিটের জন্য যুদ্ধ করতাম না। তবে কমলাপুর স্টেশনের ৫ নম্বর প্লাটফর্মে মোটামুটি ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সেখানে রাজশাহী এক্সপ্রেসের অপেক্ষায় ছিলেন উত্তরবঙ্গের অসংখ্য যাত্রী। লোকাল এই ট্রেনটি ১২টা ২০ মিনিটে স্টেশনে প্রবেশ করার কথা থাকলেও দুপুর ১টা পর্যন্ত প্লাটফর্মে পৌঁছেনি। ঈশ্বরদীর যাত্রী আবদুল হাকিম বলেন, ঈদের মৌসুম হওয়ায় ট্রেন আসতে একটু দেরি হচ্ছে। এই ট্রেনে সব সময় যাত্রী কিছুটা বেশি থাকে। তিনি বলেন, দেরিতে আসায় ভোগান্তি হলেও ট্রেনে চড়লেই সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। একই রকম চট্টলা এক্সপ্রেস দুপুর দেড়টায় স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও ঠিক সময়ে পৌঁছেনি ট্রেনটি। এতে অপেক্ষা করতে হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের। স্টেশন মাস্টাররা জানান, ট্রেনযোগে ঈদযাত্রার আজ প্রথম দিন। তাই একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার শীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে ২৭টি ট্রেন। সকালের দিকে সুন্দরবন ও নীলসাগর এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেন দুটি একটু দেরিতে ছাড়লেও পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। এটাকে শিডিউল বিপযর্য় মানতে নারাজ তিনি। তিনি বলেন, ঈদযাত্রার প্রথম দিন হওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে ট্রেন শিডিউল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
অন্যদিকে মহাখালী ও সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে এখনও যাত্রীর বাড়তি চাপ শুরু না হলেও ভিড় বাড়তে শুরু করেছে গাবতলী বাস টার্মিনালে। রাস্তার দুর্ভোগ এড়াতে অনেকেই ঈদের ছুটি শুরুর আগে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আহমেদ আলী বলেন, এবার ঈদে রাস্তায় যানজট ও অন্যান্য দুর্ভোগ বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। তাই স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে আগেভাগে গ্রামের বাড়ি মাগুরায় চলে যাচ্ছি। একই এলাকায় যাওয়ার জন্য একে ট্রাভেলসের কাউন্টারে এসেছেন অপর এক যাত্রী মাহদুল হক। তিনি বলেন, গত ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। তাই এবার আগে ভাগেই চলে যাচ্ছি। আর কোরবানির ঈদে রাস্তায় যানজট থাকে বেশি। অন্যদিকে ফেরি ঘাটে দীর্ঘ জট লেগে থাকছে। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে আগেভাগেই মাগুরায় চলে যাচ্ছি। অপর এক যাত্রী হামিদুর রহমান যাবেন ফরিদপুরে। তিনি জানান, ঢাকায় ব্যবসা করি। পরিবার থাকে গ্রামের বাড়িতে। ঈদের আগে আগে ঘাটে ফেরি পারাপারে অনেক সময় লাগে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। তাই আগেভাগে গ্রামে চলে যাচ্ছি। শুধু আহমেদ আলী, মাহমুদুল হক ও হামিদুর রহমানই নয়। তাদের অনেকেই আগেভাগে গ্রামে বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন। গতকাল সকালে গাবতলী ও কল্যাণপুর বাস কাউন্টারগুলোতে গিয়ে দেখা যায় শত শত যাত্রী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। কাউন্টারের বাইরেও গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে মানুষের ভিড় বাড়ছে।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের যাত্রী মনিরুল মিয়া বলেন, গত ঈদে ছুটি না পাওয়ায় বাড়ি গিয়ে ঈদ করতে পারিনি। তাই এবার একটু আগেই ছুটি নিয়েছি। শুনছি বাড়িতে পানি উঠছিল, তাই মনটা খারাপ। অনেক কিছু নষ্ট হয়েছে। তবে উত্তরবঙ্গের রাস্তাঘাট খারাপ থাকায় ঈদে সময়মতো বাড়ি ফিরতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, এখন নাকি ঢাকা থেকে দিনাজপুরে যেতে ২৭ ঘণ্টা লাগছে। রাজশাহীর যাত্রী মাহবুব আলম বলেন, আমি কাপড়ের দোকানে চাকরি করি। গত ঈদের মতো কোরবানির ঈদে দোকানে তেমন কেনাকাটা নেই। তাই আগেভাগেই ছুটি দিয়েছে মালিক। দু’দিন পর রাস্তায় প্রচুর জ্যাম হবে বলে আগেই চলে যাচ্ছি।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই ভিড় বাড়তে থাকবে। তবে মানুষ সবচেয়ে বেশি বাড়ি ফিরবেন ৩০ ও ৩১শে আগস্ট। সবচেয়ে বেশি মানুষ এই দু’দিনের টিকিট কেটেছেন। গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গে চলাচল উত্তরণ কোচ সার্ভিসের ব্যবস্থাপক রথী দেবনাথ বলেন, উত্তরবঙ্গে আমাদের দুটি বাস চলাচল করে। আজ দুটি বাস যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। বাস দুটিতে যাত্রীতে ভরা ছিল। হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার দুলাল বলেন, আজ থেকে আমাদের প্রতিটি বাসের সবগুলো ছিট পূর্ণ হয়ে টার্মিনাল ছেড়েছে। কোনো গাড়িতেই আসন ফাঁকা থাকছে না। হানিফ এন্টারপ্রাইজের মহাব্যবস্থাপক আবদুস সামাদ বলেন, এবার উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের বেহাল অবস্থা। তাই মানুষের ভোগান্তি একটু বেশি হবে। যে বাস আট ঘণ্টায় আসার কথা, তা আসতে ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা সময় লাগছে। যদি ঈদের আগে বৃষ্টি হয় যাতায়াতে আরো বেশি সময় লাগবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post