এবার আউশে স্বপ্ন বুনছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা

এবার আউশে স্বপ্ন বুনছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা
ইমাদ উদ দীন: মাঠের পর মাঠ কৃষিজমিতে চলছে আউশ ধানের আবাদ। বীজতলা থেকে চারাতোলা, জমি তৈরি ও চারাগাছ রোপণসহ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় এমন নানা কাজ। মৌলভীবাজার জেলার প্রতিটি উপজেলার ক্ষেতের মাঠে এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে। এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার সাত উপজেলার চাষিরা। আউশ ধান রোপণ আর পরিচর্যায় তাদের এ ব্যস্ততা।
এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত এ জেলার কৃষক। হঠাৎ চৈত্রের আগাম বন্যায় একটি বোরো ধানও ঘরে তুলতে পারেনি তারা। বোরো ফসল ঘরে তুলতে না পারায় নিঃস্ব হাওর ও নদী পাড়ের পাড়ের কৃষককূল। এমন ক্ষতি পোষাতে দ্বিগুণ ফসল উৎপাদনের স্বপ্ন প্রত্যাশায় এ বছর অনাবাদি জমিও আউশ ধান চাষাবাদের আওতায় এনেছেন জেলার চাষিরা। তাই সকাল-সন্ধ্যা রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৃষি জমিতেই সময় পার করছেন তারা। গেল কদিনের টানা বৃষ্টিতে উঁচু কৃষি জমিতেও পানি জমেছে। এতে আউশ ধান চাষের জন্য সময় সাশ্রয় ও সেচ সহায়ক হয়েছে চাষিদের। 
জানা গেল এমন অনেক উঁচু জমি শুধু শীত মৌসুমে সবজি চাষের জন্য আবাদ হলেও ধান চাষ হতো না। এ বছর আউশ ধানের পর ওই ধরনের জমিতে চাষ হবে শীতকালীন সবজি ফসলের চাষ। চাষিরা জানালেন এবছর হাওর অঞ্চলের বোরো ধান চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জেলার ধান উৎপাদনের সমতা রাখতে তারা অনাবাদি জমিও ধান চাষের আওতায় এনেছেন। তাদের প্রচেষ্টা সফল হলে নতুন করে আউশ ধানের উৎপাদন নিয়ে আগ্রহী হবেন স্থানীয় কৃষকরা। আর প্রতি বছরেই আউশ ধান চাষের আওতায় আসবে অনাবাদি কৃষিজমি। বাড়বে আউশ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও। উৎসাহ পাবে এজেলার কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেল এ বছর বোরো ধান অকাল বন্যায় পানিতে তলিয়ে যাবার পর আউশ ধান চাষাবাদের ওপর গুরুত্ব দেয় স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তারা কৃষকদের মনোবল ধরে রাখতে ও জেলায় ধান উৎপাদনের সমতা রাখতে তারা উদ্যোগী হয়। সেই লক্ষ্যে জেলার অনাবাদি পতিত জমিগুলো আবাদের আওতায় আনতে তারা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেন। তাদের এমন উদ্যোগ সাদরে গ্রহণ করেন চাষিরা। 
কৃষকরা জানান, এ বছর আগাম বৃষ্টি হওয়াতে আউশ ধান চাষের সহায়ক হয়েছে। তাই অনেকেই আগাম আউশ ধানের চাষাবাদ করতে পেরেছেন। তাদের প্রত্যাশা আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আউশের বাম্পার ফলনের। তবে জেলার নদী ও হাওর এলাকায় কৃষকদের আউশের বীজতলা চারা গজানোর পর বানের পানিতে নিমজ্জিত থেকে নষ্ট হয়েছে। 
কৃষকদের সঙ্গে আলাপে জানা গেল তারা এ পর্যন্ত অধিকাংশ জমিতে আউশ ধান রোপণ করেছেন। চাষের জন্য তৈরি হওয়া জমিতে দ্রুত চলছে রোপণের কাজ। আবার অনেক কৃষক প্রায় সপ্তাহ দিন আগেই রোপণের কাজ শেষ করেছেন। তবে সব চাষিই ভালো ফলনের আশায় ফসলের যত্ন নিতে ক্ষেতের জমিতে সময় দিচ্ছেন। লাগানো চারা ধানগুলোর নানাভাবে পরিচর্যা করছেন। তবে কৃষকদের দাবি- সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরকারের তরফে সহযোগিতার। তারা বলেন, স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে শুধু চাষাবাদের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো সহযোগিতা পাই না। আর সবসময় অফিসে গিয়ে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করাও নানা কারণে সম্ভব হয় না। 
তারা বলেন, যেহেতু এ বছর আমরা আগাম বন্যার কারণে নদী ও হাওরের বির্পযয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। সেহেতু আমাদের সরকারি সহযোগিতার খুবই প্রয়োজন। জানা যায়, চাষের সময় ও আবওয়ার ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশের ধান উৎপাদন তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই প্রধান তিনটি ভাগ হল আউশ, আমন ও বোরো। তারই মধ্যে দ্রুত (আশু) ফসল উৎপন্ন হওয়ার বিচারে এই ধানের নাম করা হয়েছে আউশ। এখন চলছে আউশ ধান রোপণের ভর মৌসুম। তাই কৃষকদের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও ব্যস্ত। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ভালো ফলন উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের ক্ষতি পোষাতে সার্বিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের চাইতে ২ হাজার হেক্টর বাড়ানো হয়েছে। এ বছর জেলার কুলাউড়া উপজেলায় আউশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর। জুড়ীতে ২ হাজার ৪২২ হেক্টর। বড়লেখায় ২ হাজার ৪৭৩ হেক্টর। মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৪ হাজার ১৯০ হেক্টর। রাজনগর ৪ হাজার ৮০৬ হেক্টর। কমলগঞ্জ ১১ হাজার ৮০ হেক্টর। শ্রীমঙ্গল ১০ হাজার ৩৮৯ হেক্টর। মোট ৪৩ হাজার ৯০ হেক্টর ও সব উপজেলায় মিলে বাড়তি আরো ২ হাজার হেক্টর জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। 
চাষীরা জানান, তারা ভালো ফলনের আশায় উচ্চ ফলনশীল আউশের জাত, বিআর-২৩, ১২, ১৪,২৭, ৪২, ৪৩, ৪৮, বাউ-৬৩ সহ বিভিন্ন উচ্চ ফলন শীল জাতের ধান আবাদ করছেন। তারা জানালেন, এসব উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান রোপণের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে তাদের স্বপ্নের সোনালি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহজাহান জানান, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চলতি মৌসুমে আউশ ধান আবাদ কার্যক্রম লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ অঞ্চলের কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বছর ৪৫ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে আউশ ধান চাষাবাদ করছেন, এই জেলার কৃষকরা। আউশ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো উৎপাদনের প্রত্যাশা কৃষকদের মতো কৃষি বিভাগেরও।

Post a Comment

Previous Post Next Post