ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাকডাক আর হৈ হুল্লুড় নেই বাজারগুলোতে

বাজারগুলোতে মিলছে না দেশীয় প্রজাতির মাছ
স্টাফ রিপোর্টার: হাওরে মাছের মড়কে প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজার গুলোতে। এখন বাজারে তেমন মাছও নেই। আর ক্রেতাও কম। গেল ক’দিন থেকে আগের মতো জমজমাট নয় মাছের বাজার। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাকডাক আর হৈ হুল্লুড় চোখে পড়ছে কম। এখন অনেকটা দুর্দিন যাচ্ছে জেলার স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীদের। 
হাওর তীরবর্তী মাছের বাজারগুলোতে মিলছে না দেশীয় প্রজাতির মাছ। বাজারে যেগুলো উঠছে তা ফিশারি কিংবা বাহিরের (চালানি) মাছ। তাছাড়া ওই মাছগুলোর দামও চড়া। দরও আগের চাইতে এখন কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেশি। নানা রোগ জীবাণু আর অজানা শঙ্কায় মাছের বদলে সবজি, ডাল আর মোরগের মাংসের দিকে ঝুঁকছেন তারা। জেলার মৎস্য চাহিদা যোগানের অন্যতম উৎস হাকালুকি, কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওর ছাড়াও অনান্য হাওরগুলোতে এ বছর একের পর এক দুর্যোগে নাকাল। 
বোরো ধানের পর মাছে ও অন্যান্য জলজ প্রাণির মড়ক। তাছাড়া হাওর তীরবর্তী এলাকার ব্যাপক সবজি ক্ষেতও বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। হঠাৎ এমন দুর্যোগে দিশাহারা স্থানীয় কৃষি ও জেলে পরিবার। বোরো ধান, মাছ, হাঁস আর সবজি ক্ষেত হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা নির্বাক। জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায় জেলায় ৪১ টন মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে হাকালুকি হাওরে (মৌলভীবাজার অংশে) উৎপাদন হয় ২৫ টন। এ বছর হঠাৎ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে হাওরগুলোর থোড়ওয়ালা ও আধপাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়। দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় পানিতে নিমজ্জিত বোরো ধান পচে অ্যামুনিয়া গ্যাসের কারণে পানি দূষিত হয়। এতে হাকালুকি হাওরে মারা যায় দেশীয় প্রজাতির ২৫ টন ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ। তাদের তথ্য মতে হাকালুকি হাওরের কুলাউড়াতে ৮, জুড়িতে ৭ ও বড়লেখা উপজেলা অংশে ১০ টন মাছ মারা যায়। 

হাকালুকি হাওর পাড়ের মৎস্যজীবীরা জানান এর আগে এমন মাছের মড়ক কখনো দেখেননি তারা। হাকালুকির মতো মাছের মড়ক না হলেও নানা কারণে জেলার অন্যান্য হাওরেও দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে কম। হাকালুকি হাওর পাড়ের জেলেরা জানান গেল ২-৩ দিন থেকে তারা হাওরের বিল এলাকায় জাল ফেলে মাছ পাচ্ছেন না। দীর্ঘ সময় জাল ফেলে অপেক্ষার পরও মাছ ধরা পড়ছে না জালে। অনেকটা শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছেন। মাঝে মধ্যে দু-একজনের জালে ধরা পড়ছে অল্প মাছ। হাওর তীরের ঘাটের বাজার সব সময় হাওরের দেশীয় প্রজাতির মাছের ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় দেখা গেলেও এখন নেই তেমন ক্রেতা-বিক্রেতা। কারণ হিসেবে স্থানীয় সাদিপুর গ্রামের মৎস্যজীবী বাছির মিয়া, দুদু মিয়া, সামরুল মিয়া, সুজাত মিয়া, ফয়ছল মিয়া, নাসিম মিয়া, আয়াছ আলীসহ অনেকেই জানান হাওরের মাছের মড়কের পর জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ছে একে বারেই কম। হাওরের মাছ ছাড়া এ বাজারে অন্য কোনো মাছ উঠে না। 
মৌলভীবাজার শহরের টিসি মার্কেট ও পশ্চিম বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ, রিপন মিয়া, সুলতান আহমদ, আবদুল জলিল, বিল্লাল উদ্দিনসহ অনেকেই জানান এখন তাদের কাছে হাওরের মাছ আসছে কম। যেগুলো আসছে সেগুলোর ক্রেতাও কম। তারা বলেন, সম্প্রতি হাওরে ব্যাপক হারে মাছ মরে পচে যাওয়ার পর মানুষ এসব দেখে এখন নিজে থেকেই মাছ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ওই এলাকায় মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে হাওরের এসব মরা মাছ না খেতে মাইকিং করা হলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে হাওরের মাছ নিয়ে ভয় ঢুকে যায়। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আ.ক.ম শফিক উজ-জামান ও সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন হাওরের অবস্থা এখন ভালো হয়েছে। মাছ ধরা বন্ধ রাখার ঘোষণা প্রত্যাহার করা হয়েছে। জেলেদের জালে ধরা পড়া মাছগুলো বিষাক্ত নয়। এই মাছ খেলে সমস্যা হওয়ার কথা না। খুব শিগগিরই মাছের এই সংকট কাটবে। আমরা জুনের মধ্যেই হাকালুকিতে ১৮ লাখ পোনা মাছ অবমুক্ত করব।

Post a Comment

Previous Post Next Post