রায় বহাল থাকায় সন্তুষ্ট রাজনের বাবা-মা

রায় বহাল থাকায় সন্তুষ্ট রাজনের বাবা-মা
নিউজ ডেস্কঃ এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। সুপ্রিম কোর্টেও যেন এ রায় বহাল থাকে। যত দ্রুত সম্ভব রায় বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। হাইকোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এ দাবি জানিয়েছেন সিলেটে পৈশাচিক নির্যাতনে নিহত শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনের বাবা আজিজুর রহমান আলম এবং মা লুবনা বেগম।

মঙ্গলবার শিশু রাজন হত্যা মামলায় কামরুল ইসলামসহ চার আসামিকে বিচারিক আদালতের দেয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত বাকি ছয় আসামির কারাদণ্ড একটু কমবেশ বহাল রাখা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার বিকেলে রাজনের বাবা-মা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, আসামিরা খুবই প্রভাবশালী।

এ রায়ের পর তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারে। আমাদের পরিবারের ক্ষতি করতে পারে। তাই রায় বাস্তবায়নের পূর্ব পর্যন্ত আমি আমাদের পরিবারের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানাচ্ছি।

নিজের সন্তান হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা।

আজিজুর রহমান ও লুবনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে সামিউল আলম রাজনকে ২০১৫ সালের ৮ জুলাই চুরির অপবাদে কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। মরদেহ গুম করার সময় ধরা পড়ে একজন। পরে পুলিশ বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় হত্যা মামলা করে।

ফেসবুকে প্রচারের উদ্দেশে রাজনকে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে নির্যাতনকারীরা। সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়।

খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠে। এরই মধ্যে মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম সৌদি আরবে পালিয়ে যায়।

পরে সেখানে প্রবাসীদের সহায়তা সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা কামরুল ইসলামকে ধরে পুলিশে দেন। এরপর বাংলাদেশ সরকার সৌদি আরব থেকে কামরুল ইসলামকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করে।

হত্যাকাণ্ডের মাত্র চার মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর রাজন হত্যা মালায় সৌদি প্রবাসী কামরুলসহ চারজনকে ফাঁসি ও আরও জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়দে সাজার আদেশ দেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ মো. আকবর আলী মৃধা। যা মঙ্গলবার বহাল রাখেন হাইকোর্ট।

ফাঁসিরদণ্ড বহাল থাকা আসামিরা হলেন কামরুল ইসলাম, ময়না চৌকিদার, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল ও জাকির হোসেন পাভেল আহমদ।

এই মামলায় নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি নূর মিয়ার দণ্ড কমিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান আসামি কামরুলের তিন ভাই মুহিত আলম, আলী হায়দার ও শামীম আহাম্মেদের সাত বছরের সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। অপর আসামি দুলাল আহাম্মেদ ও আয়াজ আলীর এক বছরের সাজাও বহাল রেখেছেন আদালত।

মঙ্গলবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

গত ১২ মার্চ রাজন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১১ এপ্রিল তারিখ ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট।

গত ৩০ জানুয়ারি রাজন হত্যা মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর রাজন হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।

সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে হাইকোর্টের অনুমতির প্রয়োজন হয়। যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ডেথ রেফারেন্সের পাশাপাশি বিচারিক আদালতের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল দায়ের করেন। সুত্রঃ জাগোনিউজ

Post a Comment

Previous Post Next Post