স্কুলে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান

স্কুলে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান
অনলাইন ডেস্কঃ ঝড়ের তাণ্ডবে রাজবাড়ী জেলার ৩টি স্কুলের শ্রেণিকক্ষ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ফলে শ্রেণিকক্ষ ছাড়াই খোলা আকাশের নিচে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।

মিজানপুর ইউনিয়নের চর জৌকুড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার ভাঙনে জীর্নসীর্ন স্কুলটি ঝড়ের তাণ্ডবে যেন মৃতপ্রায়। তবু থেমে নেই স্কুল কর্তৃপক্ষ। নদীর পাশে খোলা আকাশের নিচেই প্রখর রোদে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় এক ব্যক্তির পরিত্যাক্ত টিনের ২টি কক্ষেও চলছে পাঠদান।

শিক্ষার মান উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন-বাউন্ডারী নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ চললেও তার ছিটেফোঁটাও পৌঁছায়নি এই স্কুলটিতে।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেড় যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও টিনের ঘরেই বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৭ সালে ১৩৫ ফিট দৈর্ঘের তিনটি জোড়া টিনের ঘর নির্মাণের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওইসময় বিদ্যালয়ে অফিস কক্ষসহ মোট ৬টি কক্ষ রাখা হয়। এরপর ২০০৪ সালে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হয়। ২০০৫ সালে সরকারিভাবে শিক্ষকদের জন্য ছোট্ট একটি অফিস কক্ষ এবং একটি টয়লেট নির্মাণ করা হয়। এছাড়া এযাবৎকালে বিদ্যালয়টিতে সরকারি কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি।

তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়টি পদ্মা তীরবর্তী হওয়ায় গত বছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়ের মাত্র ১০০গজ দূরে এসে পৌঁছায়। তখন বিদ্যালয়টির এই বেহাল অবস্থা দেখে স্থানীয় বিশিষ্ট সমাজসেব লুৎফর রহমান মিয়া বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করার জন্য ৪৪শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু এই এক বছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের বিষয়ে কোন সহযোগিতা পাইনি।

ময়নুল ইসলাম বলেন, গত ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় কালবৈশাখী ঝড়ে বিদ্যালয়ের ৪ কক্ষ বিশিষ্ট দুইটি ঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। বাকি একটি ঘরের দুইটি কক্ষ কোনরকম জোরাতালি অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু তারপরেও ওই দুইটি কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে অষ্টম ও দশম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হচ্ছে এবং সপ্তম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। এছাড়া স্থানীয় জহুরুল ইসলামের পরিত্যাক্ত দুইটি টিনের ঘরে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যালয়ের এ বেহাল অবস্থার ফলে চরম বিপাকে পড়েছে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ও ১১জন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও অনেক কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে বিদ্যালয়টি অকেজো হয়ে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি পুণঃনির্মাণে সহযোগিতা চেয়ে ৫ এপ্রিল জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ বান্ডিল ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, গত দুই দিন ধরে আমরা মাঠের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছি। প্রখর রোদে অনেক কষ্ট হয় তবু ক্লাস করি। এদিকে অতিদ্রুত চর জৌকুড়ী উচ্চ বিদ্যালয়টি পদ্মার পাড় থেকে স্থানান্তর করে দানকৃত নির্ধারিত জায়গায় দোতলা বিল্ডিং স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

অন্যদিকে জেলার সূর্য্যনগর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়েও একইভাবে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বিশ্বাস বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ শতাধিক। এমনিতেই শ্রেণিকক্ষের সমস্যা ছিল। তার উপরে ঝড়ে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট টিনসেড ঘরটি ভেঙে যাওয়ায় এখন চরম বিপাকে পড়েছি। নিরূপায় হয়ে খোলা আকাশের নিচেই ক্লাস নিতে হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে ভবনটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রাম অঞ্চলের হলেও বিদ্যালয়টিতে অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করে। তাদের অধিকাংশই গরীব। অনেক সীমাবদ্ধতা স্বত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা বরাবরই ভাল রেজাল্ট করে থাকে। জরুরী ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ঠিক করা সম্ভব না হলে শিক্ষাদান ব্যাহত হবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর।

এছাড়া ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দয়াল নগর মোজাহার আলী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিমা খাতুন বলেন, ঝড়ে আমাদের স্কুলের একমাত্র টিনের ঘরটি ভেঙে পড়ে। দ্বিতীয় কোন ঘর না থাকায় তিনদিন ধরে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। স্কুলটিতে ১৫৭জন শিক্ষার্থী থাকলেও খোলা আকাশের নিচে ক্লাশ নেয়ার কারণে অনেকেই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। আবার যারা আসছে প্রচন্ড গরমের মধ্যে তাদেরও পাঠদানে নানা সমস্যা হচ্ছে। স্কুলটির নিজস্ব কোন অর্থ না থাকায় কবে নাগাদ স্কুলটি মেরামত করতে পারবো তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছি। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা নূরমহল আশরাফী বলেন, বিদ্যালয় তিনটি পুণঃনির্মাণে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিদ্যালয় তিনটির সার্বিক অবস্থা পরিদর্শনের জন্য লোক পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুত্রঃ বিডিপ্রতিদিন

Post a Comment

Previous Post Next Post