অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন

অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন
অনলাইন ডেস্কঃ ইতিহাস কথা বলে আজীবন। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে।

মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে...।

আজ রক্তক্ষরা-অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ ১৯৭১ সালের এই মাসে তীব্র আন্দোলনের পরিণতিতে শুরু হয়। বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হলেও চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১ মার্চ। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এ সময় ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল। ইয়াহিয়া খানের ওই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকরা খেলা ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ততক্ষণে হাজারো মানুষ পল্টন-গুলিস্তানে বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছে। সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।

সেদিন মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা সেখানে গিয়ে প্রথমবারের মতো স্লোগান দেয়, ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। ছাত্ররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কর্মসূচী ঘোষণার দাবি জানায়। বিক্ষোভ-স্লোগানে উত্তাল ঢাকাসহ সারাদেশ। আর কোনো আলোচনা নয়, এবার পাক হানাদারদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি ক্রমশ বেগবান হতে থাকে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাইরে চলছে বিক্ষুব্ধ বাঙালীর কঠোর কর্মসূচী দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ২ ও ৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানে সর্বাত্মক হরতালের ডাক এবং ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভার ঘোষণা দেন।

সেই শুরু। এরপর ১ মার্চ পেরিয়ে ২ মার্চ। একে একে পার হয় ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ২৫টি দিন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর আক্রমণ চালায়, শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এই পথ ধরে বাঙালী দামাল ছেলেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনেন একটি স্বাধীন দেশ- বাংলাদেশ।

বছর ঘুরে এবার এক অন্যরকম পরিবেশে বাঙালীর জীবনে এসেছে অগ্নিঝরা মার্চ। যখন দেশে আবারও ফণা তুলে দাঁড়িয়েছে একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা। বিএনপিকে সামনে রেখে একাত্তরের ঘাতক ও ’৭৫-এর খুনীরা এক হয়ে হরতাল-অবরোধের নামে বিষাক্ত ছোবল দিচ্ছে, পুড়িয়ে মানুষকে হত্যা করছে। সহিংস আন্দোলনে সাড়া না পেয়ে এখনও একাত্তরের মতোই গুপ্তঘাতকরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল মানুষকে হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। তাই এবারের মার্চ এসেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দৃপ্ত শপথ গ্রহণ এবং একাত্তরের মতোই গর্জে উঠে স্বাধীনতাবিরোধী সকল অপশক্তি এবং তাদের দোসরদের আরেকবার পরাজিত করার অনুপ্রেরণা যোগাতে।

বিভিন্ন সংগঠন অগ্নিঝরা মার্চ স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post