টেকনাফ সীমান্তে শত শত রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ

টেকনাফ সীমান্তে শত শত রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ
অনলাইন ডেস্কঃ কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে শত শত রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে। মঙ্গলবার সীমান্তে দালালের সহযোগিতায় শত শত রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে জানা গেছে। তবে এসব রোহিঙ্গারা হ্নীলা নিবন্ধিত নয়াপাড়া ক্যাম্প ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পসহ হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়েছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সীমান্তে দিয়ে রোহিঙ্গাবাহী ৭টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশু ছিল। এদিকে হ্নীলা অনিবন্ধিত ক্যাম্পের নেতারা নতুন প্রায় ১ হাজারের মত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের কথা বললেও এর দ্বিগুন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বলে ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নেই কোন তদারকি। ফলে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবাধে ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলা ফেরা করতে পারছে। এ অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার কারণে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা সমূহে অপরাধ প্রবনতাও বেড়েই চলছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

তবে মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে হ্নীলা লেদা অনিবন্ধিত ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, এ ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লকে অসংখ্য নতুন রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে। এদেরই এক অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার মংডু চালি প্রাং এলাকার আলী হোসেন জানান, 'ভোর রাতে মিয়ানমার মংডু কুমিরখালী এলাকা থেকে পরিবারের ৮ জনসহ ৪০ জন রোহিঙ্গা দুইটি নৌকায় সকালে বাংলাদেশের লম্বাবিল এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ করি। আসার সময় দালালরা জনপ্রতি ৫০ হাজার কিয়েত নেয়। একই রাতে আগে ও পরে অনেক রোহিঙ্গাবাহী নৌকা এপারে চলে আসে। রাতে প্রায় হাজারো রোহিঙ্গা চলে আসেন। তিনি আরও জানায়, মিয়ানমার সেনা বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন ও বাড়ী-ঘর হারা হাজার হাজার রোহিঙ্গা ওপারের সীমান্তে অবস্থান করছে। আমরা যাব কই, মুসলমানের দেশ হিসাবে জালিমদের হাত থেকে রেহায় পেতে এপারে চলে এসেছি।' আলী আরও জানান, স্ত্রী নূর নাহার, ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ে সন্তানকে নিয়ে জীবনের মায়ায় প্রাণ বাঁচাতে চলে এসেছেন।

এভাবে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার মংডু জাম্ভবইন্না এলাকার সবি আলমের স্ত্রী রশিদা (৪৫) ৪ সন্তান নিয়ে চলে আসলেও স্বামীসহ ৪ জনের কোন হদিস নেই বলে জানায়। এছাড়া চালি প্রাং এলাকার সুফাইদ (২৭) ও স্ত্রী সনজিদাসহ (২০) ৬ সন্তান, একই এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে মোঃ সলিম (৩২), স্ত্রী রশিদাসহ (২১) ৬ সন্তান নিয়ে চলে আসেন। এভাবে লেদা ক্যাম্পে ৬ ব্লকে অসংখ্য রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ে। তবে এরা বর্তমানে হ্নীলা অনিবন্ধিত ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।

এদিকে সীমান্তে বিজিবির অবস্থান পর্যবেক্ষন করে স্থানীয় কতিপয় দালালের সহায়তায় অর্থ কড়ির বিনিময়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। তবে রোহিঙ্গা পারাপারে জড়িত ১৪ দালালকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হলেও অন্যান্য দালালরা অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে ২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোঃ আবু জার আল জাহিদ জানান, টেকনাফ সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অতিক্রম করার সময় রোহিঙ্গাবাহী ৭টি নৌকাকে প্রতিহত করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য দিয়ে মিয়ানমার ফেরত পাঠানো হয়। সীমান্তে সর্তকতা এবং বিজিবির সংখ্যা ও টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেখানে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ চেষ্টা, সেখানে বিজিবি’র সর্তক পাহারা রয়েছে। দুপারে কিছু দালাল বিজিবির টহল পর্যবেক্ষন করে গতিপথ পরিবর্তন করে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে। এসব দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প নেতা ডাঃ দুধু মিয়া জানান, মঙ্গলবার সকালেও কয়েকশত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে। তবে ঘটনার পর থেকে লেদা ক্যাম্পে দেড় হাজারের মত রোহিঙ্গা এসেছে। নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকলে বিভিন্ন সংস্থাকে অবগত করে যাচ্ছি। আগের চেয়ে রোহিঙ্গার আগমন কমছে। তিনি আরও জানান, আমরা নিজেরা রোহিঙ্গা, নতুন রোহিঙ্গাদের কিছু করার মত সামর্থ নেই। তবে ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান।

গত ৯ অক্টোবরে মিয়ানমার বিজিপি ক্যাম্পে সহিংসতার ঘটনায় মিয়ানমার বিজিপি নিহত, অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের ঘটনার জের ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী মংডু জেলার ২২টি গ্রামে অত্যাচার নির্যাতন ও তান্ডব শুরু করে মিয়ানমার কেয়ারী পাড়া, বুড়া সিকদার পাড়া, বড় গওজ বিল, ছোট গওজ বিল, রাইম্যা ঘোলা, নাকপুরা, বলি বাজার, জাম বাইন্না, আম তইল্লা, পুয়াহালি, অওচর, বুইচর, ওয়াবেগ, নারি বিল, কাওয়ার বিল, কোনার বিল, চালি পাড়া, নাইচাপ্র, কোয়ার বিল, রা বাইল্লা, কিলাই দং এবং হাতি পাড়ায়।

মিয়ানমার সেনা বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন ও তান্ডব থেকে রেহায় পেতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। এ সব রোহিঙ্গারা সীমান্ত অতিক্রম করে অনুপ্রবেশ করছে। তবে এতদিনেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারে সুষ্ঠু সমাধান না হলে সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে। সুত্রঃ বিডি প্রতিদিন

Post a Comment

Previous Post Next Post