স্পোর্টস ডেস্কঃ
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, রানার্সআপ বরিশাল বুলস, ঢাকা
ডায়নামাইটস, চিটাগং ভাইকিংস ও রংপুর রাইডার্স এবারো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার
লীগে (বিপিএল-টি২০) খেলছে। সঙ্গে আবারো দুটি দল খুলনা টাইটান্স ও রাজশাহী
কিংস যুক্ত হয়েছে। সিলেট সুপার স্টার্সকে বাদ দেয়া হয়েছে। এবার অংশ নিতে
যাওয়া সাত দলের মধ্যে শিরোপা জিতবে কে? এবার টুর্নামেন্ট সেরাই বা হবেন কে?
দেশী
আর বিদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে জয়ী হবেন কারা? আজ বিপিএলের চতুর্থ আসর
শুরুর আগে এমন প্রশ্নই সবার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মিরপুর শেরেবাংলা
স্টেডিয়ামে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও রাজশাহী কিংসের
মধ্যকার ম্যাচ দিয়েই বিপিএলের পর্দা উঠবে। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে সন্ধ্যা
সোয়া ৭টায় রংপুর রাইডার্স ও খুলনা টাইটান্স লড়াই করবে।
এর
আগে তিনবার বিপিএল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১২ ও ২০১৩ সালে এবং ২০১৫ সালে বিপিএল
হয়। দুইবার ২০১২ ও ২০১৩ সালে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। যারা
ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০১৫ সাল থেকে বিপিএলে অংশ নিতে পারেনি।
২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ২০১২ ও ২০১৫ সালে
বরিশাল বুলস রানার্সআপ হয়েছে। ২০১৩ সালে রানার্সআপ হয়েছে চিটাগং ভাইকিংস।
এবার কুমিল্লা শিরোপা ধরে রাখতে পারবে নাকি নতুন কোন দল হবে চ্যাম্পিয়ন?
সেই প্রশ্নই সবার মুখে মুখে।
২০১২
ও ২০১৩ সালে যে ঢাকা চ্যাম্পিয়ন হয় সেই দলের এবং ২০১৫ সালে যে কুমিল্লা
শিরোপা জিতে, সেই দলেরও অধিনায়ক ছিলেন বাংলাদেশ দলের নির্ধারিত ওভারের
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কুমিল্লা দলটি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল ছিল
না। তবুও মাশরাফির নেতৃত্বগুণে শিরোপা জিতে। এবারও কী তাহলে ভাগ্য মাশরাফির
কপালেই লুটোপুটি খাবে?
কুমিল্লা
দলটিও এবার যথেষ্ট শক্তিশালী। নেতৃত্বেও আছেন সেই মাশরাফিই। দলে দেশী
ক্রিকেটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে জাতীয় দলের ভরসা ইমরুল কায়েস আছেন। আছেন ঘরোয়া
লীগের দুর্বার ব্যাটসম্যান উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাস। অলরাউন্ডার আল
আমিনের সঙ্গে রয়েছেন ব্যাটসম্যান সৈকত আলী। বিদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে
পাকিস্তান অলরাউন্ডার সোহেল তানভির, ইমাদ ওয়াসিম, ইংল্যান্ডের আসহার জাইদি,
শ্রীলঙ্কান পেসার নুয়ান কুলাসেকেরা, অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা,
আফগানিস্তানের সাড়া জাগানো লেগ স্পিনার রশিদ খান রয়েছেন।
অবশ্য
কাগজে-কলমে শক্তি বিবেচনায় নিলে চিটাগং ভাইকিংসকেই এগিয়ে রাখতে হচ্ছে।
দলটিতে যে বিশ্বসেরা টি২০ ক্রিকেটারদের আখড়া। দেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে
তামিম ইকবাল আছেন, রয়েছেন ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয়, পেসার তাসকিন আহমেদ,
অভিজ্ঞ স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক, জুবায়ের হোসেন লিখন, পেসার শুভাশীষ রায়।
আর বিদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দানবীয় ব্যাটসম্যান ক্রিস
গেইল, অলরাউন্ডার ডোয়াইন স্মিথ, পাকিস্তানের শোয়েব মালিক, আফগানিস্তানের
মোহাম্মদ নবী, শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার জীবন মেন্ডিস আছেন। বোঝাই যাচ্ছে,
কতটা শক্তিশালী দল চিটাগং।
সেই
তুলনায় ঢাকা ডায়নামাইটসে দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, নাসির হোসেন,
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, বিদেশী তারকা ক্রিকেটার শ্রীলঙ্কার দুই বন্ধু কুমার
সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল, ডোয়াইন
ব্রাভো, এভিন লুইসরা আছেন। রাজশাহী কিংসে সাব্বির রহমান রুম্মন, নুরুল
হাসান সোহান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুমিনুল হক, বিদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্যারেন সামি, পাকিস্তানের মোহাম্মদ সামি, শ্রীলঙ্কান
মিলিন্ডা সিরিবার্দেনে ও উপুল থারাঙ্গা ছাড়া আর কোন তারকা নেই। যদিও
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরাজ দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। কিন্তু টি২০তে কতটা
প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারেন, সেটি সময়ই বলে দেবে।
বরিশাল
বুলসে মুশফিকুর রহীম, পেসার আল আমিন হোসেন, স্পিনার তাইজুল ইসলাম,
ব্যাটসম্যান শামসুর রহমান, পেসার আবু হায়দার রনি, ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার
নাফীস ও নাদিফ চৌধুরী এবং বিদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে শ্রীলঙ্কান দিলশান
মুনাবিরা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্লোস ব্রেথওয়েট ও ইংল্যান্ডের জসুয়া কব
রয়েছেন। যে দল গড়া হয়েছে, তাতে বরিশাল দলটি এবার রানার্সআপও ধরে রাখতে
পারেন কিনা, সেটিই দেখার।
চিটাগংয়ের
পর রংপুর রাইডার্স দলটিকে তরতাজা মনে হচ্ছে। দলটিতে ব্যাটসম্যান সৌম্য
সরকার, মোঃ মিঠুন, স্পিনার আরাফাত সানি, পেসার রুবেল হোসেন, অলরাউন্ডার
সোহাগ গাজী, হার্ডহিটার জিয়াউর রহমান, ব্যাটসম্যান নাঈম ইসলাম, স্পিনার
ইলিয়াস সানি, অলরাউন্ডার মুক্তার আলীর সঙ্গে বিদেশী ক্রিকেটার পাকিস্তানের
শহীদ আফ্রিদি, শারজিল খান, নাসির জামশেদ, শ্রীলঙ্কার সাচিত্র সেনানায়েকে
রয়েছেন। দলটিতে যেন টি২০ ক্রিকেটারে ভরপুর!
খুলনা
টাইটান্সও সেই তুলনায় ভঙ্গুর দলই। অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, স্পিনার
মোশাররফ হোসেন রুবেল, শুভাগত হোমের সঙ্গে বিদেশী ক্রিকেটার কোঠায় ওয়েস্ট
ইন্ডিজের লেন্ডল সিমন্স ও কেভন কিপারই শুধু নামকরা। এ যখন একটি দলের
অবস্থা, তখন ফলও আর কতদূর আশা করা যায়।
অবশ্য
কাগজে-কলমে যে যত শক্তিশালী দলই হোক, মাঠের নৈপুণ্যই আসল। এর আগেও এরকমটি
দেখা গেছে। মাঠের বাইরে শক্তিশালী দল। অথচ মাঠে তার কানাকোড়িও দেখা মিলেনি।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সই যেমন সব শক্তিশালী দলকে টেক্কা দিয়ে গত আসরে
চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। এবার কোন দল শিরোপা ঘরে তুলে, তা ডাবল লীগ পদ্ধতির ৩৬
দিনের এ টুর্নামেন্ট শেষে ৯ ডিসেম্বরই বোঝা যাবে।
সেদিনই
টুর্নামেন্টের পর্দা নামবে। শিরোপা নির্ধারণী দিনে বোঝাও যাবে, কার হাতে
টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারটি শোভা পাবে। ২০১৫ সালে ব্যাটে ২১৫ রান ও বল
হাতে ১৭ উইকেট নিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের আসহার জাইদি টুর্নামেন্ট সেরা
হন। দেশী ক্রিকেটারদের পেছনে ফেলেন।
২০১২
ও ২০১৩ সালে সেই কাজটি কোন বিদেশী ক্রিকেটার করতে পারেননি। দুইবারই সাকিব
আল হাসানের হাত ধরে দেশী ক্রিকেটারদের বাজিমাতই ঘটে। ২০১৩ সালে দ্বিতীয়
বিপিএলে ঢাকার হয়ে ৩২৯ রান ও ১৫ উইকেট নিয়ে এবং ২০১২ সালে প্রথম বিপিএলে
খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের হয়ে ২৮০ রান ও ১৫ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হন
সাকিব।
এবার
কার পালা? শেষ দুইবার বিপিএলে যে দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সেই দল থেকেই
টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ও মিলেছে। এবারও কী তাই ঘটবে? উদ্বোধনহীন বিপিএলে
এবার শিরোপা জিতবে কে? টুর্নামেন্ট সেরাই বা হবেন কে?
