সিরিজে সমতা আনলো আফগানিস্তান

সিরিজে সমতা আনলো আফগানিস্তান
স্পোর্টস ডেস্কঃ দেশের মাটিতে টানা ষষ্ঠ সিরিজ ও ওয়ানডেতে নিজেদের শততম জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২ উইকেটে হেরে গেলো বাংলাদেশ। এতে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ এ সমতা আনলো আফগানরা। প্রথম ম্যাচে জয় পেয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে আফগানদের বোলিং তোপে মাত্র ২০৮ রানেই অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা। ২০৯ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দুই বল হাতে রেখে এই রান টপকে ২১২ রান করে আফগানিস্তান।
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় অল্প রানের পুঁজি গড়ে আফগানদের আটকে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা এসেছে । আগামী শনিবারের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে সিরিজ নির্ধারণ হবে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে আফগানদের বোলিং তোপে মাত্র ২০৮ রানেই অলআউট হয়ে যায় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। চার বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় তারা।
আফগান স্পিনারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত লড়াই করার পুঁজি পেয়েছে অভিষেক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান করা মোসাদ্দেক হোসেনের দৃঢ়তাভরা ব্যাটিংয়ে। ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন তরুণ এই অলরাউন্ডার।
তিন ম্যাচ ওয়ান্ডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মিরপুরে বোলারদের ওপর আস্থা রেখেন আফগান অধিনায়ক আসগর স্টানিকজাই। এজন্য টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠান তিনি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে শুরু থেকেই আস্থার প্রতিদান দিতে শুরু করেন আফগান বোলাররা। প্রথম থেকেই বাংলাদেশের দুই মারকুটে ওপেনারকে আটকে রাখতে সক্ষম হন সফরকারী বোলাররা। শুরুর ধাক্কাটা সামলে ইনিংস এগিয়ে নিতে থাকা তামিম-সৌম্য হঠাৎ পথ হারান। ওই দু'জন একই ওভারে আউট হয়ে গেলে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
১১তম ওভারে এসে মিরওয়াইজ আশরাফকে উড়িয়ে খেলতে গিয়ে আউট হন তামিম ইকবাল (২০)। তামিমের ক্যাচটি তালুবন্দী করলেন দৌলত জাদরান।
১৩তম ওভারে আবারও মিরওয়াইজ আশরাফের আঘাত। এবার আউট হন সৌম্য সরকার। মিরওয়াইজ আশরাফের ওই বলটিতে একটু এগিয়ে এসে খেলতে যান সৌম্য। সজোরে হাঁকালেও তার সেই শটে আত্মবিশ্বাসের চরম অভাব ছিল। ৩১ বলে ২০ রান করে শট কভারে হাশমতুল্লাহ শহিদীর হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।
এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। তারা গড়েন ৬১ রানের জুটি। কিন্তু রহমত শাহ আর নাভিন-উল হকের বোলিং তোপ সামলাতে পারেননি দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। ২৫তম ওভারের শেষ বলে নাভিন উল হকের অফ সাইডের বল খেলতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ ব্যাটের নীচের কানায় লাগান এবং সেটি গিয়ে আঘাত হাসে সোজা স্ট্যাম্পে।
এরপর ২৮তম ওভারের প্রথম বল হাঁটু গেঁড়ে বসে স্কয়ার লেগে সুইফ শট খেলতে যান মুশফিক। বলটি নাভিন-উল হকের হাতে গিয়ে জমা পড়লে ৫১ বলে ৩৮ রানেই বিদায় নিতে হয় মুশফিককে।
এরপর সাকিব আল হাসান এবং সাব্বির রহমানও ব্যর্থ হন। মাত্র ১৭ রান করে লেগ বিফোর আউট হয়ে গেলেন সাকিব। যদিও এ ক্ষেত্রে আম্পায়ারের ভুলের শিকার তিনি।  
সাকিবের পর ফিরে যান সাব্বির রহমানও। গোল্ডেন ডাক মারেন তিনি। দলীয় ১৩৮ রানের মাথায় আউট হন সাব্বির। ব্যাটসম্যান হিসেবে এরপর ক্রিজে শুধু মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তার সঙ্গে ছিলেন মাশরাফি। কিন্তু সৈকতকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেনি তিনি। ফলে ১৪১ রানে ৭জন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যান। মোসাদ্দেকের সঙ্গে জুটি গড়েন তাইজুল ইসলাম। দু’জনের ২৪ রানের জুটিটি ছিল দারুণ কার্যকর।
কিন্তু রশিদ খানের পর পর দুই বলে লেগ বিফোর হয়ে তাইজুল ইসলাম এবং তাসকিন আহমেদ বিদায় নিতে আবারও শঙ্কায় পড়ে যায় বাংলাদেশ।

শেষ উইকেট জুটিতে রুবেল হোসেনকে নিয়ে ৪৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের রান গিয়ে থামে ২০৮ রানে। ৫০তম ওভারের তৃতীয় বলে ২ রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে যান রুবেল হোসেন। ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন সৈকত।
আফগান বোলারদের মধ্যে রশিদ খান ৩টি, মোহাম্মদ নবি এবং মিরওয়াইজ আশরাফ নেন ২টি করে উইকেট।
বাংলাদেশের দেয়া ২০৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত চার উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা আফগানিস্তানকে জয়ের স্বপ্ন দেখান আসগর স্তানিকজাই ও মোহাম্মদ নবি জুটি। তাদের ১০৭ রানে জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে আফগানিস্তান। কিন্তু মোহাম্মদ নবিকে (৪৯) ফিরিয়ে বিপজ্জনক এই জুটি ভাঙেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। নবিকে এলবিডব্লিউ'র ফাঁদে ফেলেন তিনি। পরের ওভারে আসগর স্তানিকজাইকে সাব্বির রহমানের তালুবন্দী করেন মোসাদ্দেক হোসেন। আফগান অধিনায়ক করেন সর্বোচ্চ ৫৭ রান।  
এর আগে বিপজ্জনক মোহাম্মদ শাহজাদকে (৩৫ বলে ৩৫) ফেরান সাকিব আল হাসান। তার বলে পয়েন্টে ক্যাচ নেন তাসকিন আহমেদ।
মোসাদ্দেক হোসেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেট নিয়েছেন। এই অফস্পিন অলরাউন্ডার ফিরিয়েছেন হাশমতুল্লাহ শাহিদিকে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওভারেই ‘ট্রাম্প কার্ড’ সাকিব আল হাসানকে আক্রমণে আনেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। আর তার ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে পড়ে আফগানিস্তান। ওভারের চতুর্থ বলে এসে সাকিবের ইনসুইং বুঝতে না পেরে নওরোজ মঙ্গল। ১০ রানে ফিরে যান তিনি।
ওভারের শেষ বলেই লেগবিফোরের ফাঁদে পড়লেন রহমত শাহ। আগের ম্যাচেই এই ব্যাটসম্যান ৭১ রান করে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু আজ সাকিবের ঘূর্ণিতে কুপোকাত হয়ে গেলেন কোন রান না করেই।
এরপর হাশমতুল্লাহ শহিদীকে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন অপর ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ। ৪টি বাউন্ডারি আর ২টি ছক্কায় ৩৫ রান করেন শাহজাদ। জুটি গড়েন ৪৫ রানের। তবে শেষ পর্যন্ত ১৪তম ওভারে এসে জুটি ভাঙেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই নিলেন উইকেট। ফেরান হাশমতুল্লাহ শহিদীকে।
এরপর আবারও সাকিব ধামাকা। এবার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের হাতে বিদায় নিলেন মারকুটে ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদ। ৩৫ রানে তিনি আউট হয়ে যান সাকিবের বলে তাসকিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে।  
শেষ ওভারে তাসকিন ফেরান নাজিবুল্লাহকে। তবে চার হাঁকিয়ে দলকে দারুণ জয় এনে দেন দৌলত জাদরান।
৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সাকিব বাংলাদেশের সেরা বোলার।

Post a Comment

Previous Post Next Post