ইমাদ উদ দীন: দিনের স্কুল শেষ হলে শুরু রাতের স্কুল। বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে শুরু। শেষ রাত সাড়ে ৮টায়। শহর জুড়ে এখন এমন স্কুলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ব্যস্ততার দৃশ্য হররোজ। মৌলভীবাজার জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে দিন দিন বাড়ছে এমন স্কুল ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বাণিজ্যিক এই স্কুলের নাম কোচিং সেন্টার। কোচিং সেন্টারগুলোর ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতায় মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে শিক্ষাজীবন। মৌলভীবাজারে রমরমা কোচিং বাণিজ্য এখন জমে উঠেছে রাতে। অভিযোগ উঠেছে স্কুলের শিক্ষকইঅভিভাবকদের জানিয়ে দিচ্ছেন অমুক কোচিং সেন্টারে না পড়ালে তার সন্তানের ফলাফল ভালো হবে না। তাই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ভালো ফলাফলের আশায় বাধ্য হয়ে শিক্ষকদের নির্দেশিত কোচিং সেন্টারেই ভর্তি করাচ্ছেন তাদের সন্তানকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমন মনোভাবে দিন দিন শহরে বাড়ছে কোচিং ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে অন্তরালে থেকে ওইসব কোচিং সেন্টার ব্যবসা পরিচালনা করছেন শিক্ষকরা। কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষার্থীদের কি পড়ানো হচ্ছে। কারা পড়াচ্ছে। যারা পড়াচ্ছে তাদেরই বা যোগ্যতা কতটুকু। এসব জানারই প্রয়োজন পড়ছে না অনেক অভিভাবকের। শিক্ষকদের বাতিয়ে দেয়া পরামর্শে সরল বিশ্বাস আর চটকদার বিজ্ঞাপন দেখেই আকৃষ্ট হচ্ছেন তারা। এমনকি অনেক অভিভাবক নিজেদের আভিজাত্য ধরে রাখতে যে কোচিং সেন্টারে যত বেশি মাসিক বেতন সেখানেই ভর্তি করছেন তাদের সন্তানকে। মৌলভীবাজার শহরেই রয়েছে ২৫ থেকে ৩০টি কোচিং সেন্টার। আর জেলা শহরের বাহিরে ৬টি উপজেলা শহরে রয়েছে অর্ধশতাধিক কোচিং সেন্টার। স্থানীয় বাসিন্দারা নাম দিয়েছেন রাতের স্কুল। তাই ওখানে ওই কোচিং সেন্টারগুলো রাতের স্কুল নামেই পরিচিত। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন মানেই কাঁধে ব্যাগ আর রাত দিন স্কুল। দিনের স্কুল শেষ হলে শুরু রাতের স্কুল। খেলাধুলা, বিনোদন বা একটু জিরীয়ে নেয়ার ফুরসতটা কোথায়। অতিরিক্ত পড়া লেখার এমন চাপে এখন ওদের যান্ত্রিক জীবন। প্রতিটি কোচিং সেন্টারে ২য় শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত কম পক্ষে ১শ থেকে দেড় শ’ শিক্ষার্থী পড়ানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন নেয়া হচ্ছে ৮ শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা পর্যন্ত। এতে সব খরচ শেষে মাসে কমপক্ষে তাদের নিট প্রফিট থাকছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। তা ছাড়া অনেক কোচিং সেন্টারের রয়েছে নিজস্ব খাতা কলম ও নির্দিষ্ট প্রকাশনীর গাইড বই। এ থেকেও হচ্ছে বাড়তি আয়। কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান কোচিং সেন্টারগুলোতে তরুণ শিক্ষকরাই বেশি। যারা অনেকেই কলেজ শিক্ষার্থী। এদের অধিক পরিশ্রম করিয়ে কম প্রারিশ্রমিক দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মৌলভীবাজার শহরে কলম্বিয়া কোচিং সেন্টার, নলেজ হোম, এক্সস্টা টাইম কোচিং ইনিস্টিটিউট, ই-টাইম, সাইফুরস একাডেমি, ফিউচার গ্রুপ, মেনটরস, নিউক্লিয়ার্স, হার্বাড, ইকরা, রাইজিং, প্যারাডাইস, সাকসেস, শাহীন, কমার্স, কর্ণিয়া, ফিউচার ব্রাইট, মিজানস সহ বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। এ বিষয়ে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ননী গোপাল রায় বলেন কোচিং সেন্টারগুলো আমাদের শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননশীলতা নষ্ট করছে। নির্দিষ্ট কিছু হ্যান্ড নোট আর ঘন ঘন ক্লাস পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনো প্রাপ্তি নেই কোচিং সেন্টার থেকে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যদি তাদের পাঠদান কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের প্রতি আরও আন্তরিক হতেন তা হলে শিক্ষার্থীরা এমন দুর্দশায় পড়ত না। তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন আভিজাত্য ধরে রাখতে শুধু গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসালে হবে না। সন্তানের শিক্ষা অর্জনের জন্য আরও সচেতন হতে হবে। মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার (প্রাথমিক) মো. সিরাজুল ইসলাম জানান কোচিং সেন্টারের সঙ্গে কোনো শিক্ষক জড়িত আছেন এমনটি জানা নেই। তারপরও যদি কোনো শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।