এপ্রিল ফুল মুসলমান হত্যার বিজয়োল্লাস

এপ্রিল ফুল মুসলমান হত্যার বিজয়ো উল্লাস
এম মুহিবুর রহমান মুহিব: এপ্রিল ফুল মানে পহেলা এপ্রিলে পরস্পরকে ফুলের শুভেচ্ছা বা সৌহার্দ জানাবার আয়োজন নয়। এপ্রিল ফুল অর্থ এপ্রিলের বোকা। মুসলমানদেরকে মিথ্যা প্রবঞ্চনায় বোকা বানিয়ে নিরন্ত্র করে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল। ইহুদি খ্রিষ্টান সম্প্রদায় এদিনে। তাই তারা এই দিনটি মহানন্দে যাপন করে। কেন আপনাদের দেশে প্রতি বছর অত্যন্ত আনন্দ উল্ল্যাসে এপ্রিল ফুল উদযাপন করা হয় ? আমাদের দেশের অনেকে এপ্রিল ফুলকে সাধারণ ব্যাপার মনে করেন। হয়তো অনেকে আনন্দ উৎসবের দিন বলে গ্রহণ করেন। কাক যেমন ময়ুর পাখির হাঁটা নকল করতে গিয়ে নিজের হাঁটা ভুলে গিয়েছিল (গ্রাম্য প্রবাদ) তেমনি আমরা অনেকে ভিন্ন সংষ্কৃতি চর্চার জোয়ারে নিজের সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছি। (১) আমি যদি বাংলাদেশী হিসেবে চিন্তা করি, স্বীকার করতে হবে, এপ্রিল ফুল একটি বিদেশী সংস্কৃতি। একটি জাতির সংস্কৃতির মধ্যে বিদেশী সংষ্কৃতির সংযোজন অসুস্থতার পরিচয়কে এবং তা একটি জাতির স্বাতন্ত্র ও সভ্যতার উৎকর্ষ সাধনে প্রতিবন্ধক।
(২) আমি একজন মানুষ হিসেবে যদি চিন্তা করি, বলবো এপ্রিল ফুল উদযাপন মানবতা বিরুধী। কারণ মানবতা কখনো ধোঁকা আর মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেয় না। ‘‘এপ্রিল ফুল’’ কে ইসলামী দৃষ্টিতে মুল্যায়ন করা প্রয়োজন। এপ্রিল ফুল শব্দটি ইসলাম এবং মুসলমানদের জন্য একটি মর্মান্তিক ও লোহমর্ষক এবং বেদনার ইতিহাস। যে কারণে এপ্রিল ফুল পালিত হয় তা বড়ই করুন এবং মানবতার ইতিহাসে অত্যন্ত লজ্জাচজনক। ধোঁকাবাজ ক্রুসেডার গোষ্ঠী কর্তৃক মুসলিম উম্মার একটি অংশকে ধোঁকা দেবার ঘটনাই ্এপ্রিল ফুলের ইতিহাস। মানবতাহীন ক্রুসেডার গোষ্ঠী মজলুম মানুষকে ধোঁকা দিয়েকত নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে এপ্রিল ফুল তার ইতিহাস। মুসলিম জাতি একদিন তাদের জ্ঞানের উচ্চতা, বুদ্ধিমত্তা, ইসলামের মানবিক, নৈতিক চরিত্র, আদর্শ এবং ঈমানী শক্তির মাধ্যমে সমস্ত বিশ্বকে সুখ শান্তি আর সভ্যতার আলো দেখাতে সক্ষম হয়েছিল। বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দিশেহারা মানুষগুলো ইসলামের আদর্শ ধারন করে সুখ শান্তির স্পর্শ পেয়েছিল। দলে দলে মানুষ ইসলামের ছায়া তলে যখন আশ্রয় নিতে শুরু করলো, তখন স্বৈরাচার, পুঁজিবাদী, জালিম শক্তির ভিথরে ভয়ের সঞ্চার হল। তারা ইসলামকে প্রতিরোধ করার জন্য সংঘবদ্ধ হতে লাগলো। তারা বিভিন্ন কৌশলে ইসলাম এবং মুসলমানদের উপর আক্রমন শুরু করলে মুসলিম উম্মাহ তাদের আক্রমনের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে লাগলেন। ৭১১ খৃষ্টাব্দের দিকে রডারিকের সুসজ্জিত বাহিনী মুসলমানদের উপর আক্রমণ করলে মুসলমানরা তা প্রতিরোধ করেন। রডারিকের বিশাল বাহিনী সেদিন মুসলমানদের কাছে পরাজিত হলে স্পেনের মাটিতে প্রবিত্র ইসলামের সু-শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলমানদের অক্লান্ত পরিশ্রম, কঠোর সাধনা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভূত এবং মহান আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাসের ফলে গ্রানাডা ও কর্ডোভায় ইসলামী সভ্যতা গড়ে উঠে। দীর্ঘ আট শতাব্দীর মতো স্পেনে মুসলিম শাসন চলে। দুঃখ জনক হলেও সত্য, স্পেনের মুসলমানগণ যখন কোরআন সুন্নাহর সংস্কৃতি ত্যাগ করে পাশ্চত্যের নোংরা সংস্কৃতির চর্চা শুরু করে এবং স্পেনের মুসলিম শাসক শ্রেণী নিজেরা ইসলাম বিরুধী নোংরা ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে গেলো, তখন ইসলামী চেতনার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। শাসক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে গড়ে উঠা ইসলামী ঐক্যে সৃষ্টি হয় বিরাট ফাটল । এ ফাটলকে ইউরোপিয়ান ক্রুসেডার গোষ্ঠী সুর্বণ সুযোগ হিসাব গ্রহণ করে। তারা মুসলমানদের মধ্যে সৃষ্ট ফাটলকে আরো বিস্তৃত করে আটশত বছরের সাধনা সংগ্রামে গড়ে উঠা ইসলামী সভ্যতাকে স্পেন থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয় । ক্রুসেডার গোষ্ঠী সংগঠিত হয়ে তাদের ষড়যন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তৎকালীন পুর্তুগীজের রাণী ইসাবেলার সাথে পার্শ্ববর্তী রাজা ফার্ডিন্যান্ডের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এই দুইজন মিলে মুসলমানদের উপর ক্রমাগত আক্রমন শুরু করে । বসনিয়ায় যেভাবে কুখ্যাত সার্ব বাহিনী ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রকাশ্যে সহযোগিতায় অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে, তেমনি সেদিন তা স্পেনেও ঘটেছিল । ইসাবেলা ও তার স্বামীর অমানবিক নির্যাতনে স্পেনের মুসলমানগণ এক সময় সর্বহারা হয়ে রাজধানী গ্রানাডায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। মুসলমানদের বাড়ীঘর, সম্পত্তি, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ জনবসতিগুলো ক্রমশ ক্রুসেডার বাহিনীর দখলে চলে যায়। সর্বহারা স্পেনের মুসলমানরা যখন তাদের রাজধানী গ্রানাডায় কিংকর্তব্যবিমৃঢ় অবস্থায়: তখন ফার্ডিন্যান্ডের বাহিনীর গ্রানাডার দ্বারপ্রান্তে এসে হাজির। মুসলমানদের ঈমানী চেতনায় দুর্বলতা দেখে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ঘোষণা করলো মুসলমানরা যদি গ্রানাডার প্রবেশদ্বার উম্মুক্ত করে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে গিয়ে অবস্থান করে, তবে তাদেরকে বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেওয়া হবে । তখনকার মুসলিম স্প্যানিশ জাতি ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাতের মত জালিমের বিরুদ্ধে জেহাদের পথ ত্যাগ করে ভ্রান্তÍ শান্তির স্বপ্নে সত্যিই মসজিদে আশ্রয় নেয় । তাদের ধারনা ছিল জেহাদ না করে মসজিদে আশ্রয় নিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাবে । তারা ভুলে গিয়েছিল “ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায়, হার কারবালা কি বাদ! মুসলমানগণ যখন নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে গিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে চাইলো তখন ক্রুসেডার রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলার নরপশু বাহিনী মসজিদের চারদিকে আগুন লাগিয়ে দেয়। ফলে হাজার হাজার মুসলমান জ্বলে পুড়ে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়। চলল তান্ডব লীলা। সেদিন হাজার হাজার মুসলমানের রক্তে লালে লাল হয়ে গ্রানাডার রাজপথ। ধ্বংস হলে স্পেনের আটশত বছরের মুসলিম শাসন । এভাবে ধোঁকা দিয়ে মুসলমানদেরকে হত্যা করার গৌরবে উল্লাসিত হয়ে সেদিন স্পেনের মাটিতে দাঁড়িয়ে কুখ্যাত ফার্ডিন্যান্ড চিৎকার দিয়ে বলেছিল “হায় মুসলিম জাতি! তোমরা সত্যিই এপ্রিলের বোকা” ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের পহেলা এপ্রিল ফার্ডিন্যান্ড গ্রানাডার ধোঁকা দিয়ে মুসলমানদেরকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছিল বলে পরবর্তীকালে ইউরোপের খ্রীস্টান জাতি তা উৎসব হিসেবে পালন করতে শুরু করে। এই উৎসবের নাম তারা দেয় এপ্রিল ফুল অর্থ্যাৎ এপ্রিলের বোকা। ধোঁকা দিয়ে একটি মানব সম্প্রদায়কে নির্মম ভাবে হত্যা করার দিনকে আমরা কিভাবে আনন্দের দিন হিসেবে উদযাপন করি ? যে দিনের ইতিহাস মুসলিম উম্মাহর জন্য নিষ্ঠুর, হৃদয় বিদারক” সে দিনে বাংলাদেশের মত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে আনন্দ তামাশার দিন হিসেবে উদযাপন করা হয় কিভাবে ? বোকা বানিয়ে যারা আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করছিল, আজ আমরা তাদেরই সাথে তাল মিলিয়ে আনন্দ উৎসব করছি। আমরা ভাবি না, এপ্রিল ফুলের ইতিহাস আমাদের জন্য কত নির্মম ! প্রতি বছর ক্রুসেডার গোষ্ঠী যেভাবে এপ্রিল ফুল উদযাপন করে আমাদেরকে গালি দিচ্ছে “এপ্রিলের বোকা” বলে সেভাবে আমরাও তা উদযাপন করে নিজেদেরকে গালি দিচ্ছি। ১৪৪২ সালের পহেলা এপ্রিলে আমাদের শোচনীয় পরাজয়কে নিজেরাই পরম বিমুখ চিত্তের সাথে উদযাপন করছি । অথচ আমরা যদি সে দিনের ইতিহাস জানতাম, তবে হাসি তামাসার পরিবর্তে চোখের পানিতে বুক ভাসাতাম। তৃপ্তির পরিবর্তে চোখের পানিতে প্রচন্ড কষ্ট পেতাম । যদি আমাদের সংস্কৃতির স্বরূপ জানা থাকতো, তবে পহেলা এপ্রিল “এপ্রিল ফুল” উদযাপন না করে শোক দিবস পালন করতাম । যারা মসজিদে আশ্রয় নিয়ে মৃত্যুর শিকার হয়েছেন । তাদের মাগফিরাতের জন্য মসজিতে বসে দোয়া করতাম । আসুন আমরা প্রতি বছর এপ্রিলের প্রথম তারিখে নিজে বোকা না হয়ে, অপরকে বোকা বানানোর চেষ্টা না করে, মিথ্যা আর ধোকাবাজী ছেড়ে এ দিনে শোক দিবস পালন করি। আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে বিজাতীয় সংস্কৃতির লালন না করে, বরং তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী দুর্গ গড়ে তুলি যা পহেলা এপ্রিলের প্রধান দাবি । স্মরণ রাখতে হবে, ইসলামই বাংলাদেশের সংস্কৃতির মূল মানদন্ড । অন্য কিছু নয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post