নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে সিলেট রেলওয়ের বছরে লোকসান ১২ কোটি টাকা

সিলেট রেলওয়ে
বিশ্বজিৎ রায়: সিলেট বিভাগের অন্যতম গণপরিবহন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ এখন দিন দিন কমছে। নানাবিধ দুর্নীতি আর অনিয়মের কবলে পড়ে ক্রমশ ধ্বংস হতে চলেছে সরকারের বিরাট অংকের রাজস্ব যোগানদারী এই প্রতিষ্টানটি। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রেলযাত্রীদের। এছাড়াও রয়েছে রেলওয়ে এলাকায় ভাসমান ভবঘুরে মানুষজন, মাদকসেবী, ভিক্ষুক ও হকারদের উপদ্রব, চাহিদার তুলনায় বগি স্বল্পতা, কালোবাজারে টিকিট বিক্রি, বিলম্বে যাত্রা ইত্যাদি নানা কারনে যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সরকারের এই পরিসেবা থেকে। রেলের গত বছরের পরিসংখ্যান অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে গড়ে প্রতিমাসে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হলেও এখন তা কমতে কমতে নেমে এসেছে এক কোটি ৫০ লাখ টাকার নিচে। এতে প্রতি মাসে এক কোটি হারে বছরে লোকসান হচ্ছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আখাউড়া-সিলেট রেল রুটে চলাচলকারী ৮টি যাত্রীবাহী ট্রেনে প্রতিদিন যাতায়াত করছেন অনন্ত ৩ হাজার যাত্রী। অথছ; ৮ টি ট্রেনে আসন আছে মাত্র ১২শ । এতে আসন না পেয়ে অধিকাংশ যাত্রীই দাঁড়িয়ে ট্রেন ভ্রমণ করছেন। যাত্রীদের অভিযোগ টিকিট কালোবাজারে যাচ্ছে।আর রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, বগি সঙ্কটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী টিকিট বিক্রি করা যাচ্ছে না।
আব্দুল মালেক, শফিকুল ইসলাম তাহের চৌধুরী সহ ট্রেনে নিয়মিত ভ্রমণকারী যাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ, সিলেট স্টেশনে সকাল ৮ টার পর এসেও টিকিট পাওয়া যায় না। এত সকালে লাইনে দাঁড়ানো সম্ভব হয় না যাত্রীদের। সকালের টিকিট আগের দিন রাতেও দেওয়া হয় না। আবার ভোরে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা সিলেট রেলওয়ে ষ্টেশনের কাউন্টারের সামনে লাইনে দাড়িয়েও টিকেট না পেয়ে বাইরে কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কিনে তারা যাতায়াত করতে হয়। তাছাড়া রেল ছাড়ার পূর্বে কোনো ভিআইপি না থাকলে তাদের জন্য সংরক্ষিত টিকিটগুলো জনসাধারণের কাছে বিক্রি করার বিধান থাকলেও স্টেশন ব্যাবস্থাপকের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কয়েকজন কালোবাজারি দ্বারা বাইরে বিক্রি করা হয় বলেও অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ টিকিট কালোবাজারে যাচ্ছে কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন ভিন্নকথা। সিলেট স্টেশন ম্যানেজার মো. আবদুর রাজ্জাক, টিকেট কলোবাজারী হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বগি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী টিকিট বিক্রি করা যাচ্ছে না। ট্রেনের আরও বগি দরকার। বগি হলে টিকিট সমস্যা থাকবে না।’ তার মতে, সিলেট রেলস্টেশনে আগে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে বগি বেশি ছিল। যে কারণে আগে মাসে ২২ লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় ছিল। বিভিন্ন সময়ে বগিগুলো নষ্ট হওয়ার পর তা আর মেরামত হয়নি, বা নতুন বগি সংযুক্ত হয়নি। যে কারণে, অতিরিক্ত আয় কমে গিয়ে উল্টো লোকসানের মুখে পড়েছে।
এব্যপারে রেলের উন্নয়ন প্রকল্প কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সারা বাংলাদেশে এখন রেলের বগি সঙ্কট চলছে। এ সঙ্কট দূর করতে দুটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে সিলেটের রেলের উন্নয়নে ডাবল লাইন ও ব্রীজের কাজ শুরু হয়েছে। এবং ইন্দোনেশিয়া সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ছোট বড় মোট ১৮০টি বগি ক্রয় করা হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে এগুলো দেশে পৌঁছবে বলে তিনি আশাবাদী। এসময় সিলেটের বগি সঙ্কটকে প্রধান্য দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
ট্রেনের লোকসান প্রসঙ্গে সিলেট রেলওয়ের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দ্বায়িত্বশীল সূত্র মতে, এ রেলরুটে ট্রেনের লোকশানের অন্যতম বড় একটি কারণ হল যাত্রীদের মধ্যে টিকিট ছাড়াই ট্রেনে ওঠার প্রবণতা। দেখা যায়, প্রতিদিন একেকটি ট্রেনে ৪০ থেকে ৫০টি সিট খালি থাকে, এসব সিটে বিভিন্ন স্টপেজে কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলন্ত অবস্থায় ট্রেনে ওঠে বসে পড়েন যাত্রীরা। চেক করা হয়, ভাড়াও নেওয়া হয়, কিন্তু খাতা কলমে ওই আসনগুলো খালিই দেখানো হয়। যে কারণে মাসিক লোকসানটা দিন দিন বাড়ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, অভিযোগ দুটিই সত্য, তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post