"৩০ বছর পর একই কথার পূনরাবৃত্তি" - জ্যোৎস্না খান

"৩০বছর বছর পর একই কথার পূনরাবৃত্তি" - জ্যোৎস্না খান
জ্যোৎস্না খান, (যুক্তরাজ্য প্রবাসী): সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পৌষ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে কাল থেকে ফেইসবুক এ বড় বড় মাছ আর মাছের মেলার ছবি সহ পোষ্ট দেখতে পাচ্ছি। সকালে বাংলাদেশে এডিটর ও পত্রিকার মালিক এক দাদার সাথে টেলিফোনে আলাপ হলো। জানতে চাইলাম পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে কি মাছ কিনলেন ? জবাবে দাদা যা বললেন তা পরে বলছি তার আগে প্রাসঙ্গিক দু-চারটি কথা বলে নেই। আমাদের পাড়ায় প্রতিবেশীদের মধ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেক প্রতিবেশী ছিলেন। বিয়ের অনুষ্টান থেকে শুরু করে যেকোন পূজাপর্বনে আমরা নিমন্ত্রন পেতাম। যে কারনে সনাতন ধর্ম সম্বন্ধে আমার মোটামুটি ধারনা আছে। পাড়ার সবাই খুবই মিলেমিশে চলতেন। শ্রদ্ধা ও ভালবাসার বন্ধনে পারস্পরিক সম্প্রীতির ছিল এক সেতুবন্ধন। তখনকার দিনে প্রতিবেশীর প্রতি যে ভালবাসা শ্রদ্ধাবোধ দেখেছি তা আজকাল খুব কম চোখে পড়ে। যেকোন বিষয়ে বাবা সহ পাড়ার সব মুরুব্বিয়ানগণ বসে আলোচনা করতে দেখেছি । দু-একদিন একজন আরেকজনকে না দেখলে বাসার গিয়ে খোঁজখবর নিতেন। একবার পৌষসংক্রান্তির সময় বাবা বাজার থেকে বেশ বড় একটা বোয়াল মাছ কিনে আনলেন। মাছটা এত বড় ছিল যে দুইজন লোক কাঁধে করে বয়ে বাসায় এনে দিয়েছিলো। খুব ধুমধাম করে মাছটা রান্না করা হয়। একই শহরে বসবাসরত আমার বড়চাচা ও ছোটচাচার পরিবারকে নিয়ে বেশ আমোদপ্রমোদের মধ্য দিয়ে মাছটি খাওয়া হলো। পরদিন সকাল বেলা বাবা বাহির থেকে বাসায় এসে মুখ ভারী করে ইজি চেয়ারে বসে রইলেন। মনে হলো খুব গভীর ভাবে তিনি কিছু ভাবছেন ! মা এক কাপ চা হাতে নিয়ে তাঁর পাশে বসে জানতে চাইলেন কি হয়েছে। কিছুক্ষন চুপ থাকার পর বললেন "জানো গোপাল দাদা গতকাল মাছ কিনতে পারেননি। তার বাসায় অনেক অতিথিও এসেছেন"। বছরে অন্তত এই দিনটায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা একটু ভালো মাছ খেতে চান। সেটা গোপাল দা'র ভাগ্যে জুটলো না। আজ নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। মা'ও কথাগুলো শুনে মর্মাহত হলেন। বাবা কাকুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি কি মাছ কিনেছেন ? উত্তরে তিনি বলছিলেন "কি আর কিনবো দাদা,সব ভালো মাছগুলিতো আপনারাই নিয়ে গেছেন। অবশেষে পুঁটি আর মলা এনে গিন্নিকে রাঁধতে দিয়েছি।"
আজ ৩০বছর পর আবারও সেই বাক্যের পূনরাবৃত্তি। তবে স্থান কাল পাত্র ছিল ভিন্ন। আমার এডিটর ভাইয়ের ভাগ্য গোপাল কাকুর চাইতে অনেকটা সুপ্রসন্ন। কারন তিনি দু-টি বড় বড় রুই কিনেছেন আর ফোনালাপ অবস্থায় বললেন বোয়াল কিনার অপেক্ষায় আছেন।
আজ আমার ছোটবেলার অনেক স্মৃতি মনস্পটে ভেসে উঠলো। মনে পড়ে গেল পাড়ার সকল দিদিদের কথা। যারা স্কুল ছুটির দিনে বিকেল বেলা রঙ্গিন ফিঁতে দিয়ে চুল বেঁধে দিতেন-সেই পূষ্পাদিদি,তৃষ্ণাদিদি,শুল্কাদিদি। মাঝেমধ্যে তাদের কথা মনে পড়ে, স্মৃতিতে ভেসে উঠে সেইসব দিনের কথা। কিন্তু জীবন নামের এই ছোট্ট শব্দটির কারাগারে এমনভাবে বন্দি হয়ছি যে,দেশে গেলেও তাদের খোঁজখবর নিতে পারিনা। জানিনা কে কোথায় আছেন,কিভাবে আছেন তবে দোয়া করি তারা যেখানেই থাকেন যেন ভালো থাকেন।
আসুন, আমরা সবাই আমাদের আত্বীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই,সহানুভূতিশীল হই। আগামী প্রজন্ম যদি আমাদের কাছ থেকে সুন্দর ও কল্যাণকর কিছু শিখে তবে তারা গড়ে তুলতে পারবে একটি সুন্দর, সচেতন ও উন্নত সমাজ।

Post a Comment

Previous Post Next Post