নিউজ ডেস্কঃ মধুমতি বাঘিয়ার তীরে গোপালগঞ্জ শহর ছিল এক সময়ের প্রসিদ্ধ মাছের বাজার। এই শহরের আশে পাশে সব নদী খাল বিল জলাশয়ে পাওয়া যেত প্রচুর পরিমান দেশিয় মাছ। এখানের বেশির ভাগ মানুষই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। মধুমতি এখন মৃত প্রায়। এক সময়ের নাম করা মধুমতি নদীর ইলিশ মাছ দুই বাংলায় প্রচুর চাহিদা ছিল। মধুমতি নদীর ইলিশ মাছের স্বাদই ছিল আলাদা। প্রবাদ আছে মধুমতি নদীর ইলিশ মাছ রান্না করলে ঘরের বিড়াল মিউ মিউ করে ডাকতো আর চার পাশে ঘুরতো ওই মাছের ঘ্রাণে। এক সময়ের খরস্রোতা মধুমতি নদী ছিল গোপালগঞ্জের চার পাশের যাতায়াত ব্যবস্থা। এখন সেখানে রাস্তা হয়েছে। নদী, খাল, জলাশায় ভরাট হয়ে গেছে। বাকি যতটুকু আছে সেখানে এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা বিদেশি প্রজাতির মাছের চাষ করছে। ফলে দেশি মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাছে। গোপালগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে সব সময়ই চির পরিচিত নানা প্রজাতির দেশিয় প্রাকৃতিক মাছ পাওয়া যেত। এ অঞ্চলের খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, নদ-নদীসহ মুক্ত জলাশয়গুলো সব সময়ে মাছে ভরা থাকতো। এখন সেই অঞ্চল গুল মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে এ অঞ্চল থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে খয়রা, লাল চান্দা, পাবদা, সরপুঁটি, তিতপুটি, ডানকুনো, মায়াসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির ছোট মাছ। বিলুপ্ত প্রায় মাছ ছাড়াও অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে চেলা পুঁটি, টেংরা, ফলই, ভেদা, শিং, মাগুর, কৈ, বেলে, মহাশৈল, গজার, বোয়াল, লাল খলিশা, বাইম, গোরকুতেসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ। গ্রামাঞ্চলের ছোটখাট বাজারে এসব প্রজাতির মাছ এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। চেনা মাছ হয়ে পড়েছে খুবই অচেনা অপরিচিত। বাজার গুলোতে প্রাকৃতিক মাছের আমদানি একেবারেই কমে গেছে। মফস্বলের প্রধান প্রধান বাজারগুলোতে যা কিছু আমদানি হয় তা চলে যায় ভাগ্যবান বা বিত্তবানদের হাতে। সাধারণ মানুষদের কপালে এসব মাছ আর জুটছে না। দেশিয় প্রজাতির প্রায় সব প্রাকৃতিক মাছের বংশ বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। এসব স্থান দখল করে নিচ্ছে বিদেশি বিভিন্ন শঙ্কর প্রজাতির মাছ। জেলার মৎস্য প্রধান এলাকাসহ বাজারে দেশিয় মাছের ব্যাপক সংকট বিরাজ করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে নদ-নদী, খাল-বিলসহ মুক্ত জলাশয়গুলো প্রাকৃতিক মাছ শূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিবে। পুষ্টির উৎস হিসেবে দেশিয় প্রজাতির ছোট মাছের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের দেহ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন ছোট মাছ থেকে পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে, দেশের মানুষের শরীরের প্রাণীজ আমিষের শতকরা ৮০ ভাগ আসে দেশিয় প্রজাতির মাছ থেকে। মাছ সম্পর্কে বিজ্ঞানের দেওয়া তথ্য উপাত্ত বাঙালির অতীত এবং ঐতিহ্যের সাথে এক সূত্রে গাঁথা। এক সময় মাছই ছিল প্রধান খাদ্য। এ খাদ্য সংস্কৃতিকে ঘিরেই রচিত হয় বিখ্যাত প্রবাদ ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। দু’দশক আগেও দেশি প্রজাতির প্রাকৃতিক মাছের কোন ঘাটতি ছিল না। নদ-নদী, হাওর-বাওড়, খাল-বিল, খানা-খন্দ ও প্লাবন ভূমিতে দেশিয় মাছের এতই আধিক্য ছিল যে মাছের জন্য পানিতে নামা যেত না। গ্রামের মানুষ বেড়া জাল, ধর্মজাল, পাতা জাল, ঠেলাজাল ইত্যাদি দিয়ে মাছ ধরত। মাছ খেতে খেতে বিমুখ হয়ে যেত গ্রামাঞ্চলের মানুষ। ভাদ্র থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত এসব মাছ শুটকি করে সংরক্ষণ করা হত। এখন আর সেই মাছ পাওয়া যায় না। ভবিষ্যতে এই ভাবে চলতে থাকলে গোপালগঞ্জে কোন দেশিয় মাছ পাওয়া যাবে না। তাই গোপালগঞ্জের আশে পাশের খালগুলো খনন করতে হবে। এবং জোয়ার ভাটার ব্যবস্থা করতে হবে। আর নয়তো চির চেনা গোপালগঞ্জের দেশিয় মাছ চিরতরে হারিয়ে যাবে।
